কক্সবাজার প্রতিনিধি :: কক্সবাজারে গত কয়েকদিন ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে পাহাড় ধস ও পানিতে ডুবে টেকনাফ এবং মহেশখালীতে পৃথক দুর্ঘটনায় ৫ শিশু-কিশোরের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে টেকনাফে ৪ ও মহেশখালীতে ১ জন।এছাড়া কক্সবাজারের হিমছড়ির মেরিন ড্রাইভ সড়কে পাহাড় ধ্বসে পুলিশ সহ আহত হয়েছে ১০ জন।
মঙ্গলবার ভোররাতে টেকনাফে পাহাড় ধস ও পানিতে ডুবিতে তিন শিশুর ৩জনের মৃত্যু হয়। এছাড়াও বুধবার টেকনাফে নয়াপাড়া শরণার্থী ক্যাম্পে অতিবৃষ্টির ফলে মৎস্যঘেঁরের অতিরিক্ত পানিতে ডুবে এক রোহিঙ্গা কিশোরের মৃত্যু হয়েছে। আর একই দিন মহেশখালীতে ভারী বর্ষণে বাড়ির মাটির দেয়াল চাপা পড়ে এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে।
এরা হলেন, টেকনাফ পৌর এলাকার পুরান পল্লান পাড়ায় মোঃ আলমের মেয়ে আলিফা (৫) ও রবিউল আলমের ছেলে মেহেদী হাসান (১০),টেকনাফ সদর ইউনিয়নের পল্লান পাড়ার আবদুল গফুরের ছেলে এবং স্থানীয় মাদ্রাসার হেফজ বিভাগের ৩য় শ্রেনীর ছাত্র মোঃ হারিছ (১০) এবং টেকনাফের নয়াপাড়া রেজিষ্ট্রেশন ক্যাম্প-বি, ব্লক-বি, এমআরসি নং-৬১০৫৪ এর বাসিন্দা আমান উল্লাহর ছেলে ইরফান উল্লাহ (১১) এর ভাসমান মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়।আর মহেশখালীর কালারমারছড়া ইউনিয়নের আঁধার ঘোনা গ্রামের আবদুল গফুরের মেয়ে সোমাইয়া(১১)।
জানা যায়,মঙ্গলবার ভোররাতে টেকনাফ উপজেলার পৌর এলাকার পুরান পল্লান পাড়ায় পৃথক পাহাড় ধ্বসে বসত-বাড়ি চাপা পড়ে মোঃ আলমের মেয়ে আলিফা (৫) ও রবিউল আলমের ছেলে মেহেদী হাসান (১০), জাফর আলমের মেয়ে শারমিন (৭), আব্দুস সালামের মেয়ে আলিমা (১৭) সহ মা-বাবা, ভাই-বোন ও চাচা-চাচী প্রায় ১০জন আহত হয়। গুরুতর আহতদের স্থানীয় লোকজন, সিপিপি ভলান্টিয়ার, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের লোকজন ঘটনাস্থলে গিয়ে তাদের উদ্ধার করে উপজেলা সদর হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যায়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আলিফ ও মেহেদী মারা যায়। এছাড়া গুরুতর আহত শারমিন ও আলিমাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য কক্সবাজার সদর হাসপাতালে রেফার করা হয়।
এই ঘটনার খবর পেয়ে সকাল হতে উপজেলা নির্বাহী অফিসার বিশেষ টিম নিয়ে ক্ষতিগ্রস্থ এলাকাসহ বিভিন্ন স্থানের পাহাড় ও টিলায় ঝুঁকিপূর্ণ বসবাসরতদের নিরাপদ আশ্রয়ে নেওয়ার অভিযানে নামেন।
অপরদিকে একইদিন মঙ্গলবার দুপুরে উপজেলার টেকনাফ সদর ইউনিয়নের পল্লান পাড়ার আবদুল গফুরের ছেলে এবং স্থানীয় মাদ্রাসার হেফজ বিভাগের ৩য় শ্রেনীর ছাত্র মোঃ হারিছ (১০) সহ কয়েকজন শিশু-কিশোর অতিবৃষ্টির পানিতে লাফ-ঝাঁপ দিয়ে খেলা করছিল।
অসাবধানতাবশত হারিছ পানির স্রোতে ভেসে যায়। উপস্থিত লোকজন তাকে দ্রুত উদ্ধার করে উপজেলা সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
এছাড়া টেকনাফে নয়াপাড়া শরণার্থী ক্যাম্পে অতিবৃষ্টির ফলে মৎস্যঘেঁরের অতিরিক্ত পানিতে ডুবে এক রোহিঙ্গা কিশোরের মৃত্যু হয়েছে। বুধবার সকাল সাড়ে ৬টারদিকে উপজেলার নয়াপাড়া রেজিষ্ট্রেশন ক্যাম্প-বি, ব্লক-বি, এমআরসি নং-৬১০৫৪ এর বাসিন্দা আমান উল্লাহর ছেলে ইরফান উল্লাহ (১১) এর ভাসমান মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়।
মঙ্গলবার সন্ধ্যার দিকে কয়েকজন বন্ধুর সাথে ক্যাম্পের পূর্ব পার্শ্বের নাফনদী সংলগ্ন মৎস্যঘেঁরের বৃষ্টিতে সৃষ্ট জলাবদ্ধ পানিতে খেলতে গিয়েই সে নিখোঁজ হয়ে যায়।
পরে বুধবার সকালে খুঁজতে গিয়েই তার ভাসমান মৃতদেহ উদ্ধার করে। দুপুরে তাকে স্থানীয় গোরস্থানে দাফন করা হয়েছে।
টেকনাফের নয়াপাড়া পুলিশ ক্যাম্পে দায়িত্বরত এসআই আব্দুস সালাম, এই কিশোরের মৃত্যু, উদ্ধার এবং দাফনের বিষয়টির সত্যতা নিশ্চিত করেন।
এদিকে বুধবার সকাল সাড়ে ৯টায় কক্সবাজারের মহেশখালীতে প্রবল বর্ষণে বাড়ির দেয়াল ধসে এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে। এসময় মা ও এক ভাই আহত হয়েছে। নিহত শিশু সোমাইয়া আক্তার (১০) ওই এলাকার আবদুল গফুরের মেয়ে।
কালারমারছড়া ইউপি চেয়ারম্যান তারেক বিন ওসমান শরীফ বলেন, প্রবল বর্ষণের কারণে মাটির ঘরের চারদিকে পানিবন্দি হয়ে পড়ে। ফলে ঘরের মাটির দেয়াল ধসে শিশুর মৃত্যু হয়েছে।
এসময় তার এক ছোট ভাই রিয়াদ (১০)ও মা পারভীন আক্তার আহত হয়েছে। আহতদের চকরিয়া জমজম হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
মহেশখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. জামিরুল ইসলাম ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে শিশুটির পরিবারকে ত্রাণ সমগ্রী প্রদান করে সার্বিক সহযোগিতার আশ্বাস দেন। এসময় তিনি পাহাড়ের ধারে বসবাসরতদের নিরাপদ স্থানে সরে আসার আহ্বান জানান তিনি।
এদিকে কক্সবাজার জেলায় টানা বর্ষণে টেকনাফ উপজেলার হোয়াইক্যং, হ্নীলা, টেকনাফ পৌরসভা, সদর, সাবরাং ও বাহারছড়া ইউনিয়নের বিভিন্ন পাহাড়ী এলাকায় বিচ্ছিন্নভাবে প্রায় শতাধিক বসত-বাড়ি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে।
পাঠকের মতামত: