ঢাকা,বুধবার, ১৩ নভেম্বর ২০২৪

কক্সবাজারে পর্যটকবাহী যানবাহনে চাঁদাবাজি

নিজস্ব প্রতিবেদক, কক্সবাজার ::

দেশের প্রধান পর্যটন শহর কক্সবাজারে পর্যটকবাহী যানবাহন ঘিরে চলছে চাঁদাবাজি। কক্সবাজার-টেকনাফ-চট্টগ্রাম মহাসড়কের লিংক রোড থেকে শুরু করে কলাতলী বাইপাস সড়কের বাস টার্মিনাল পর্যন্ত এলাকায় যানবাহনগুলো চাঁদাবাজির শিকার হয়।

এসব যানবাহনের চালক-সহকারী অন্য এলাকার হওয়ায় তাঁরা চাঁদাবাজির প্রতিবাদ করার সাহস করেন না। আবার পুলিশকেও জানান না। অনেকটা নীরবেই দিয়ে দেন চাঁদা। জামায়াত-শিবিরের লোকজন এ অপকর্মে জড়িত বলে অভিযোগ ওঠেছে। দেশের নানা প্রান্ত থেকে প্রতিদিন হাজার হাজার পর্যটক আসা-যাওয়া করেন বিশ্বের দীর্ঘতম কক্সবাজার সৈকতে।

কক্সবাজারের পুলিশ সুপার ড. এ কে এম ইকবাল হোসেন বলেন, ‘নীরব চাঁদাবাজির বিষয়টি এতদিন পুলিশের নজরে আসেনি। সম্প্রতি পুলিশ জানতে পেরেছে, একটি মহল পর্যটকবাহী যানবাহনে চাঁদাবাজি করছে। এ ব্যাপারে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।’

জানতে চাইলে কক্সবাজার জেলা শ্রমিক লীগের সভাপতি জহিরুল ইসলাম বলেন, ‘এসব চাঁদাবাজ জামায়াত-শিবিরের ক্যাডার। আওয়ামী লীগ সরকারের সাফল্য ম্লান করে দিতে এবং দেশব্যাপী বদনাম ছড়াতে এরা কৌশলে পর্যটকবাহী গাড়িতে চাঁদাবাজি করছে।’

গত সোমবার সকালে কক্সবাজার বাস টার্মিনাল এলাকায় চাঁদাবাজির শিকার হন পর্যটকবাহী বাসচালক মো. রশিদ। জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ভাই, এটা বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্রসৈকতের শহর। সুদূর শেরপুর থেকে পর্যটকদের নিয়ে এসেছি কক্সবাজারে। এখানে এসে শ্রমিক সংগঠনের নামে চাঁদাবাজির শিকার হয়ে মনে কষ্ট পেলাম।’

রশিদ ঢাকা-মেট্রো-ব-১১-৯৩১৭ নম্বর বাস চালিয়ে পর্যটকদের নিয়ে গত সোমবার সকালে আসেন কক্সবাজার সাগরপারে। রশিদের কাছ থেকে ১০০ টাকা চাঁদা নিয়ে মাহবুব আলম নামের একজনের স্বাক্ষরিত ৮৫৫০ নম্বরের একটি চাঁদার রসিদ ধরিয়ে দেওয়া হয়। মঙ্গলবার রাত সাড়ে ৮টায় কক্সবাজার জেলা পুলিশ সুপার কার্যালয় থেকে একজন পুলিশ কর্মকর্তা শেরপুর থেকে কক্সবাজারে আসা চাঁদাবাজির শিকার সেই বাসচালক রশিদের সঙ্গে মোবাইল ফোনে কথা বলে চাঁদাবাজির বিষয়টি নিশ্চিত হয়েছেন।

অভিযোগ রয়েছে, কক্সবাজারের লিংক রোডের বাসিন্দা এবং জামায়াত-শিবিরের আন্ডারগ্রাউন্ডে থাকা এক নেতা কক্সবাজার কেন্দ্রিক পরিবহন জগতকে নৈরাজ্যকর পরিস্থিতির মুখে ঠেলে দেওয়ার অংশ হিসেবে এ চাঁদাবাজি করছে। ‘কক্সবাজার জেলা মালিক শ্রমিক ঐক্য পরিষদ’ নামে একটি পরিবহন শ্রমিক সংগঠনের কল্যাণ তহবিলের নামে এ চাঁদা আদায় করা হচ্ছে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, প্রতিদিন ভোর থেকে সকাল ১০-১১টা পর্যন্ত চাঁদাবাজির ঘটনা ঘটছে বেশি। আর সন্ধ্যায় পর্যটকবাহী যানবাহনগুলো কক্সবাজার শহর থেকে গন্তব্যে ফেরার পথে দ্বিতীয়বার চাঁদাবাজির শিকার হয়। চাঁদাবাজদের অন্যতম একজন হলেন কক্সবাজার শহরতলীর সাহিত্যিকা পল্লীর বাসিন্দা মোহাম্মদ ইসহাকের ছেলে হেলাল উদ্দিন। চাঁদা উত্তোলনকারী হেলাল উদ্দিন জামায়াত-শিবিরের একজন ক্যাডার। বর্তমানে পরিবহন শ্রমিক সেজে কক্সবাজার জেলা মালিক শ্রমিক ঐক্য পরিষদকর্মীর ছদ্মাবরণে তিনি কক্সবাজারের লিংক রোড থেকে বাস টার্মিনাল পর্যন্ত এলাকায় চাঁদাবাজি করেন।

চাঁদা আদায়ের দায়িত্বে রয়েছেন আরো ডজন খানেক শ্রমিক নামধারী ব্যক্তি। যাঁদের বেশির ভাগই জামায়াত-শিবিরের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত।

কক্সবাজার সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. ফরিদ উদ্দিন খোন্দকার বলেন, ‘চাঁদাবাজির বিষয়টি পুলিশের নজরে এসেছে। এবার কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’

পাঠকের মতামত: