অনলাইন ডেস্ক :::
একটি বেসকারি ব্যাংকে চাকরি করেন সুমন রহমান। অন্যদিকে একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে বিবিএ’র শেষ সেমিস্টারে পড়ছেন শুভ্রা। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পরিচয় হওয়া এ নর-নারী দীর্ঘদিন ধরে প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে রয়েছেন। কিছুদিন থেকে ঢাকার কলাবাগানে একটি ফ্ল্যাটে দু’জনই একসঙ্গে থাকা শুরু করেছেন। তবে বিয়ে করে নয়।
সুমন ও শুভ্রার মতো অনেক তরুণ-তরুণীই এখন আগ্রহী হয়ে পড়ছেন লিভ টুগেদার-এ। ধর্ম বা সামাজিকতার বাধা তারা মানছেন না। আমাদের সমাজে প্রতিষ্ঠিত অনেক তারকাও বিয়ে না করে চার দেয়ালের ভেতরের সম্পর্কে জড়িয়ে গেছেন। সাম্প্রতিক সময়ে এক সংগীত তারকা ও মডেল-অভিনেত্রীর লিভ টুগেদার আলোচনায় উঠে আসে। শুধু তাই নয়, সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে বিষয়টি নিয়ে সমালোচনার ঝড় বয়ে যায়। এই সময়ে আরো অনেক তারকা জুটি রয়েছেন যারা ‘ওপেন সিক্রেট’ একসঙ্গে থাকছেন। আর সেসব তারকাযুগলের কোনো বৈবাহিক সম্পর্ক গড়ে ওঠেনি এখনো। অনুসন্ধানে এমনই কয়েকজন তারকার লিভ টুগেদার সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য উঠে এসেছে। ঢাকাই মিডিয়ার এক জনপ্রিয় অভিনেত্রী দীর্ঘদিন ধরেই একই ফ্ল্যাটে থাকছেন আরেক নাট্যনির্মাতার সঙ্গে। জানা যায়, সেই অভিনেত্রীর সঙ্গে ইতোপূর্বে অন্য এক জনপ্রিয় নির্মাতার বৈবাহিক সম্পর্ক ছিল। তাদের সংসারে একটি ছেলেও রয়েছে। টিভি নাটকের জনপ্রিয় এ অভিনেত্রী একটি রিয়েলিটি শো থেকেই মিডিয়া জগতে প্রবেশ করেছেন। ক্যারিয়ারে তিন চলচ্চিত্রের নায়িকাও তিনি। একই সঙ্গে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারের মতো বড় সম্মানও রয়েছে সেই অভিনেত্রীর ঝুলিতে। তার অভিনীত সর্বশেষ ছবিটিও দারুণ সাড়া ফেলে দর্শকের মাঝে। পক্ষান্তরে যে নির্মাতার সঙ্গে ওই অভিনেত্রী লিভ টুগেদার সম্পর্কে জড়িয়েছেন তিনি তার (অভিনেত্রীর) সর্বশেষ মুক্তিপ্রাপ্ত ছবির পরিচালক। তাদের প্রেমকাহিনী মিডিয়াতে কারো অজানা নয়। একবার ওই অভিনেত্রীকে প্রেমিকের ওপর অভিমান করে বিষ খেয়ে হাসপাতাল পর্যন্তও যেতে হয়েছে। বর্তমানে টিভি নাটকের পাশাপাশি আরও দু’টি নতুন চলচ্চিত্রে অভিনয় করছেন ওই অভিনেত্রী। এদিকে এই জুটি ছাড়াও গত কয়েক বছর ধরে লিভ টুগেদারে জড়িয়ে রয়েছেন আরও এক অভিনেত্রী-নির্মাতা জুটি। জানা গেছে, ওই অভিনেত্রী ছোটবেলা থেকেই মিডিয়ার সঙ্গে সম্পৃক্ত। তার বাবাও একজন সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব। ছোটবেলা থেকে নৃত্যশিল্পী হিসেবে পরিচিতি থাকলেও ওই অভিনেত্রী বর্তমানে মূলত টিভি নাটকের জনপ্রিয় অভিনেত্রী হিসেবেই খ্যাতি পেয়েছেন। আর যে পরিচালকের সঙ্গে বৈবাহিক সম্পর্ক ছাড়া একসঙ্গে বসবাস করছেন তার হাত ধরেই চলচ্চিত্রে অভিষেক হয় অভিনেত্রীর। তার অভিনীত প্রথম চলচ্চিত্র মুক্তি পেয়েছে সম্প্রতি। মিডিয়া জগতের শুধু এই তিন জুটিই নয়। আরও অনেকেই বৈবাহিক সম্পর্ক ছাড়া চার দেয়ালের মাঝে বসবাস করছেন।
এদিকে অনুসন্ধানে আরো জানা গেছে, ঢাকার লিভ টুগেদার নিয়ে নানা চমকপ্রদ তথ্য। উচ্চবিত্তের দরজা পেরিয়ে লিভ টুগেদার এখন পৌঁছে গেছে মধ্যবিত্তের দরজায়। অনেক টিনএজও নিজেদের জড়িয়ে নিচ্ছেন এ গন্তব্যহীন সম্পর্কে। বিশেষ করে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যেই এ প্রবণতা বেশি। অনেকেই নিজেদের বিলাসবহুল জীবনের চাহিদা মেটানোর জন্য এ সম্পর্কের মধ্যে নিজেদের জড়িয়ে নিচ্ছেন। তবে বিষয়টিকে খুব ইতিবাচক দৃষ্টিতে দেখার কোনো অবকাশ নেই বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা মনে করছেন, এভাবে লিভ টুগেদার প্রবণতা বেড়ে গিয়ে ধর্মীয় মূল্যবোধ কিংবা নিজস্ব সংস্কৃতি ভুলে তরুণ সমাজ নিজেদের রীতিমত ধ্বংসের পথে এগিয়ে নিচ্ছে। এ প্রসঙ্গে কথা হয় সমাজবিজ্ঞানী অধ্যাপক মাসুদা রশীদ চৌধুরীর সঙ্গে। তিনি বলেন, লিভ টুগেদার বিষয়টি আসলে আমাদের কোনো সংস্কৃতি নয়। এটা পশ্চিমা বিশ্বের নর-নারীদের সঙ্গেই যায়। কিন্তু ইদানীং আমাদের দেশে বিশেষ করে শহর অঞ্চলে এই প্রবণতা বেশি লক্ষণীয়। আপনি যদি খেয়াল করেন দেখবেন, আমাদের দেশে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বেশি লিভ টুগেদার করছেন। আরেকটু পরিষ্কার করা যাক, পড়ালেখার জন্য শহরের বাইরে থেকে অনেক শিক্ষার্থী ঢাকার বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। এদের মাঝেই কেউ কেউ প্রেমঘটিত সম্পর্কে জড়িয়ে যাচ্ছে। একপর্যায়ে সম্পর্ক মজবুত করতে একসঙ্গে থাকার কৌশল অবলম্বন করছে। বিয়ের ব্যাপারে কোনো আগ্রহ থাকে না তাদের। আবার অনেক ছেলে-মেয়েরই বাবা-মায়ের সঙ্গে যোগাযোগ কম। বাবা মায়েরাও খবর রাখেন না তাদের ছেলে কিংবা মেয়েটি পড়াশোনা করতে গিয়ে কি করছে না করছে। এমনকি সন্তান কোথায় থাকছে তাও তাদের জানা নেই। ফলে এই তরুণ ধীরে ধীরে নিজেদের ধ্বংসের পথে নিয়ে যাচ্ছে। ধর্মীয় মূল্যবোধ তো তাদের মাঝ থেকে উঠেই যাচ্ছে সে সঙ্গে পারিবারিক বন্ধন, সামাজিক মূল্যবোধের বিষয়গুলোও দিন দিন হারাচ্ছে। তবে কি এভাবেই চলতে থাকবে? এর কোনো সমাধান হবে না? এমন প্রশ্নের উত্তরে প্রফেসর মাসুদা রশীদ চৌধুরী বলেন, সমাধান তো অবশ্যই আছে। এখানে সবচেয়ে বড় ভূমিকা পালন করবেন সন্তানদের বাবা মায়েরা। তাদের প্রতিনিয়ত মনিটরিং করতে হবে। সন্তান কোথায় যাচ্ছে, কি করছে কিংবা কাদের সঙ্গে মেলামেশা করছে। আরেকটা ব্যাপার মেয়ের মায়েদের খুব ভালোভাবে খেয়াল করতে হবে। তা হলো- আজকাল মেয়েদের স্বাধীনতার বিষয়টি নিয়ে অনেক কথা হচ্ছে। মায়েরাও মেয়ের স্বাধীনতার কথা ভাবেন। মা মনে করেন মেয়েরা বড় হলে তাদের সিদ্ধান্তগুলো বেশি প্রাধান্য দেয়া উচিত। ফলে মেয়ে কি ভুল সিদ্ধান্ত নিলো সে বিষয়টি খেয়াল করেন না। একই সঙ্গে মায়েদের আরো ভাবনা মেয়ে পড়াশোনা করে সাবলম্বী হবে। তারপর বিয়ে দেয়া হবে। কিন্তু এসব করতে গিয়ে অনেক সময় ভুল হয়ে যায়। পরিণত বয়সের মেয়েটি ক্রমশ ভুল পথে পা বাড়ায়। আমি মনে করি সন্তান উপযুক্ত হলে তাকে বিয়ে দিয়ে দেয়া উচিত। আর সে সঙ্গে সন্তান বেড়ে ওঠার সময় সামাজিক মূল্যবোধ, পারিবারিক শিক্ষা ও ধর্মীয় শিক্ষার ওপর জোর দিতে হবে। এটা একমাত্র বাবা-মায়ের দ্বারাই সম্ভব বলে আমি মনে করি।
পাঠকের মতামত: