ছবিটা কি দুর্লভ? নাকি মানসিকতার দুর্বলতা? লাঠি হাতে একজন তরুণী হাট থেকে গরু নিয়ে ফিরছেন বাড়ি। এমন একটি ছবি ঘুরে বেড়াচ্ছে ফেসবুকের পাতায় পাতায়। এপিক স্ক্রিন শর্ট নামের একটি পেইজে সেঁটে দেয়া ছবির ক্যাপশন ছিল- ‘ঢাকা শহরের সবচেয়ে দুর্লভ ছবি’। আর তা দেখে নানাজনের মত ছিল, এখানে দুর্লভের কী আছে? মানসিকতার পরিবর্তন না হলে এটাকে হাস্যকর বলেই মনে হবে।
শহুরে জীবনে অভ্যস্ত ছেলে-মেয়েরা অবশ্য হাট থেকে পশু কিনে বাড়ি ফিরছেন এমনটা খুব একটা চোখে পড়ে না। মেয়েদের বেলায় তো না-ই। কিন্তু সোমবার সকাল থেকে ফেসবুকের পাতায় লাঠি হাঁকিয়ে গরু নিয়ে বাড়ি ফেরার ছবিটি ছড়িয়ে গেছে পাতা থেকে পাতায়। ফেসবুকের ভাষায় ভাইরাল। এপিক স্ক্রিন শর্ট পেইজে দেয়া ছবিটিতে লাইক পড়েছে ৩২ হাজারের বেশি। শেয়ারও কম নয় দুই হাজার ৫০০ ছাড়িয়েছে অনেক আগেই। তবে মেয়েটার নাম, পরিচয় দুটোই অজানা।
ছবিটির নিচে নানা ধরনের কমেন্ট করেছেন ফেসবুক ব্যবহারকারীরা। কেউ এটিকে দেখেছেন নেহাত হাস্যরস হিসেবে। আবার সিরিয়াস কেউ কেউ এটিকে নারীর জাগরণ হিসেবে দেখেছেন। দেখেছেন এগিয়ে যাওয়া নারীর চোখে। আত্মনির্ভরশীলতায় মেয়েরা যে পিছিয়ে নেই আকারে, ইঙ্গিতে তাই বুঝিয়েছেন কেউ কেউ। এটা যথার্থই বটে। আবার পাল্টা হাস্যকর কমেন্ট আর তা নিয়ে বচসাও হয়েছে পরতে পরতে।
ফারহিন সোহান কবীর লিটা ছবিটার নিচে কমেন্ট কিনতে গিয়ে স্মৃতিচারণ করেছেন আত্ম অভিজ্ঞতা থেকে। লিখেছেন, আমার বাবা মারা যাওয়ার পরে আমরা বোনেরাও এভাবেই গরু নিয়ে আসতাম। আমাদের ভাই নাই, কাজেই কেউ কাজ করে দেবে সেই অপেক্ষায় থাকার সুযোগও নাই, বাবা আরেকজনের মুখের দিকে তাকায় থাকা শেখায়ও নাই। স্যালুট মেয়ে তোমাকে।’
এসকে অরিন নামে একজন মন্তব্য করতে গিয়ে বলেছেন, ‘ভাই নিজেদের গরু আনতে যাওয়া, বাপ ভাইয়ের সাথে কুরবানির গরু আনতে যাওয়া কি পাপ? আপনারা কতটা লেইম হলে এরকম একটা ব্যাপার ফেবুতে ভাইরাল করতে পারেন একটু ভেবে দেখবেন, সবারই একটা পার্সোনাল লাইফ আছে আর সবার আশেপাশের মানুষ সব লাইকও করে না।’
নাদিয়া নামে একজন ফেসবুক ব্যবহারকারীর মন্তব্য ছিল এই রকম। ‘এখানে মেয়ের পরিবর্তে কোন ছেলে হলে ছবিটা দুর্লভ হত না, তাই না? আপনাদের সমস্যা কোথায় বলবেন কি? একটা মেয়ে এই কাজটা করছে বলে খুব হাস্যকর লাগছে যাদের কাছে নিজেদের বিবেক কে জিজ্ঞেস করুন এই মেয়েটা কি চুরি করছে নাকি ছিনতাই করছে নাকি খারাপ কোন কাজ করছে যার জন্য আপনাদের কাছে বিষয় অন্যরকম লাগছে? কেন স্বাভাবিকভাবে নিতে পারছেন না? তার হয়তো কাজটা করার মত কেউ নেই বলে তাকে করতে হচ্ছে। অথবা সে এই পরুষশাষিত সমাজের তোয়াক্কা করছে না। নিজেদের মানুষিকতা বদলান প্লিজ।
কাউসার শাকিল তার পেইজে ছবিটি আলাদা করে সেঁটে দিয়ে লিখেছেন, ‘ ফেসবুকে কোরবানির ঈদের কত কত ছবি দেখছি। এ ছবিটা দেখে মনটা ভালো হয়ে গেল। খুব সম্ভবত এ যাবৎকালে দেখা সবচেয়ে সুন্দর কোরবানির ঈদের ছবি। পরিবর্তন আসুক। দিন বদলাক। সবাইকে ঈদের অগ্রিম শুভেচ্ছা।’
লিলি পারভীন লিখেছেন, ‘আমার তো মনে হয় এটাই হওয়া উচিত। যাদের ঘরে ছেলে নাই, শুধু মেয়ে আছে তারা কী করবেন, অথবা ছেলে থাকলেও মেয়েরা কেন করতে পারবেনা। এখানে তো ফানের কিছু নেই। আমি তাকে ( মেয়েটাকে) সম্মান করি।’
ফারহানা অনিকা তার মন্তব্যে জানান, ‘আমার বাপ যখন বৃদ্ধ হবে তখন তার অনেক কাজ করারই সামর্থ্য থাকবেনা। তার কাজগুলো আমিই বা আমরা বোনেরা করবো। হাটে গিয়ে গরু হয়ত কিনে আনব। এতে লজ্জার কি আছে?’
মাহাবুবা মনোয়ারা লিখেছেন, নারী অফিস আদালতে কাজ করতে পারে। বিমান চালাতে পারে। নিত্য দিনের কাঁচাবাজার করতে পারে। তবে কোরবানির গরু কিনতে গেলেই যত সমস্যা তাই না? দৃষ্টিভঙ্গি বদল করা সকলের উচিত।’
ফিরোজে আলম তার মন্তব্য জানিয়েছেন এভাবে। ‘ছেলেদের সাথে হাতে হাত মিলিয়ে দেশের উন্নয়নের জন্য কাজ করতে হবে তবেই না দেশ এগিয়ে যাবে। সে তো খারাপ কিছু করে নাই। সে দেখিয়েছে ছেলেদের মতো আমিও পারি।’
পাঠকের মতামত: