মোঃ রেজাউল করিম, ঈদগাঁও, কক্সবাজার :::
কক্সবাজারের ঈদগাঁওতে জমির টপ সয়েল বিক্রি হচ্ছে ইটভাটায়। আবার কোন কোন ইটভাটা লবণাক্ত মাটি দিয়ে নি¤œমানের ইট তৈরি করছে দেদারছে। এতে করে ক্রেতারা চরম প্রতারিত হচ্ছেন। প্রাপ্ত তথ্যে প্রকাশ, বৃহত্তর ঈদগাঁওতে ৭/৮টি ইট ভাটা রয়েছে। প্রত্যেক ভাটায় কমবেশি লাকড়ী পোড়ানো হয়। আবার কোন কোন ভাটায় নামকা ওয়াস্তে লাকড়ি হিসেবে সিলেটি পাথর ব্যবহার করা হয়। গভীর রাতে প্রত্যেক ভাটায় শত শত মণ জ¦ালানী কাঠ ট্রাকযোগে আনা হয়। এতে করে সামাজিক বনায়নসহ সংরক্ষিত ও রক্ষিত বাগানের উঠতি গাছপালা কেটে ফেলা হচ্ছে। স্থানীয় বনবিভাগ ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সাথে যোগসাজশে ভাটা মালিকরা অন্যান্য বছরের মত এবছরও বনাঞ্চল নিধনে নেমেছে। উজাড় হয়ে যাচ্ছে বনের পর বন। শূন্য হচ্ছে সামাজিক বনায়নের সবুজ গাছপালা। লোক দেখানো সিলেটি পাথর ব্যবহারের কথা বলা হলেও খবর নিয়ে জানা গেছে, অধিকাংশ ভাটায় বেশির ভাগ ক্ষেত্রে উঠতি গাছপালা পোড়ানো হয়। আর এদের সহায়তা দিচ্ছে বনবিভাগ ও সংশ্লিষ্ট প্রশাসন। টপ সয়েল বিক্রির কারণে জমির উর্বরা শক্তি হ্রাস ও উৎপাদন কমে যাচ্ছে। অতি অল্প মূল্যে জমির উপরাংশ মাটি হিসাবে ভাটায় বিক্রি করে দেয়ায় আবাদী ও অনাবাদী জমি দিন দিন নিচু হয়ে যাচ্ছে। যা বর্ষাকালে পানিতে নিমজ্জিত হলে ধানসহ সকল প্রকার চাষাবাদ চরমভাবে ব্যাহত হবে। ভাটা মালিকরা যে কোন একজনকে ম্যানেজ করে মাটির টপ সয়েল কিনতে পারলেই হল। তার আশপাশের জমির অন্য মালিকরাও বাধ্য হয়ে কমদামে তাদের টপসয়েল ঐ মালিককে বিক্রি করতে বাধ্য হয়। নতুন উপসর্গ হিসেবে যোগ হয়েছে ইট উৎপাদনে লবণাক্ত মাটির ব্যবহার। সরেজমিন পরিদর্শন ও স্বীকারোক্তিমতে জানা গেছে, যে সকল ইট ভাটা মৎস্য ও লবণ প্রজেক্টের নিকটে। সে সকল ইট ভাটায় দেদারছে কাটা হচ্ছে সমুদ্রের লবণাক্ত পানি মিশ্রিত মাটি। যা ইটের গুণগত মান নষ্ট করে এবং এর স্থায়িত্বকে কমিয়ে দেয়। ক্রেতারা না বুঝে ঐ ধরণের ইট কিনে প্রতারিত হচ্ছেন। এক্ষেত্রে সবচেয়ে এগিয়ে রয়েছে ইসলামাবাদ ইউনিয়নের সাতজুলাকাটার ইটভাটাটি। ঐ ইটভাটার উত্তর এবং পশ্চিমাঞ্চলে রয়েছে বিস্তীর্ণ লবণ মাঠ। উক্ত মাঠ থেকে ট্রাকে ট্রাকে মাটি ঢুকানো হচ্ছে এ ইট ভাটায়। যা পরবর্তীতে এ মৌসুমের ইট উৎপাদনে ব্যবহার করা হচ্ছে। উক্ত ইট ভাটায় ৩টি বৃহৎ মাটির স্তুপ রয়েছে। এর মধ্যে উত্তর ও পশ্চিম পাশের ২টিতে সাধারণ মাটির পাশাপাশি গাড়ি গাড়ি লবণাক্ত মাটি স্তুপ করা হচ্ছে। লবণাক্ত মাটির গুণাগুণ ক্ষমতা খুব কম। অন্য মাটির সাথে এ মাটি মিশ্রিত করে ইট তৈরি করলে তা সাধারণ মাটির উপর নেতিবাচক প্রভাব সৃষ্টি করে। সহজে এবং সুলভে পাওয়ার জন্য ভাটা মালিক এ কাজ করছেন বলে স্থানীয়দের ধারণা। এদিকে উক্ত ভাটার পশ্চিম পাশের্^র লবণ মাঠ থেকে মাটি কাটায় পাশর্^বর্তী লবণ মাঠের মালিকরা বিপাকে পড়েছেন। তারা গুটি কয়েকের কারণে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন চরমভাবে। এ নিয়ে ভাটা মালিক এবং লবণ মাঠ মালিকদের মধ্যে ব্যাপক মনোমালিন্য ও দূরত্বের সৃষ্টি হয়েছে বলে জানা গেছে।
পাঠকের মতামত: