নিজস্ব প্রতিবেদক, চকরিয়া :: কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার সাহারবিল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নবী হোছাইনের বিরুদ্ধে রয়েছে গরু চুরি-ডাকাতি, হত্যা চেষ্টাসহ একাধিক মামলা। এমনকি তার ভাইদের বিরুদ্ধেও রয়েছে গরু চুরি-ডাকাতিসহ একাধিক মামলা। চেয়ারম্যানের বড় ভাই লেদু সম্প্রতি বেশ কিছু অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার হয়েছেন র্যাব-১৫ এর হাতে। বর্তমানে তিনি রয়েছেন কক্সবাজার জেল হাজতে।
সম্প্রতি এই চেয়ারম্যান হাইকোর্ট থেকে জালিয়াতির মাধ্যমে একটি মামলার জামিন নিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এরপর শুরু হয় ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০২২ সালের ৩০ এপ্রিল চকরিয়া থানায় একটি মামলা দায়ের হয়। যার মামলা নম্বার-১৪১। এই মামলায় নবী হোছাইনসহ পাঁচজনকে আসামি করা হয়।
আসামীরা হলেন- চকরিয়া উপজেলার সাহারবিল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও মৃত হাবিবুর রহমানের ছেলে মো. নবী হোছাইন, একই ইউনিয়নের মৃত নজির আহমদের ছেলে জমির উদ্দিন, চেয়ারম্যান নবী হোছাইনের ভাই মো. আবদুল গফ্ফার, একই ইউনিয়নের মৃত নুরুল ইসলামের ছেলে আমির আলী ইলিয়াছ আমির হোসেন, জিন্নাত আলীর ছেলে মোর্শেদ ইলিয়াছ মো. মোর্শেদ আলম।
চলতি বছরের ২৪ এপ্রিল হাইকোর্টের কাছে আসামিদের জামিনের জন্য আবেদন করেন আসামি পক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মো. মিরাজ রানা। এর প্রেক্ষিতে পরদিন ২৫ এপ্রিল হাইকোর্টের বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোছাইন ও বিচারপতি এসএম মুজিবুর রহমান আসামিদের ছয় সপ্তাহের জন্য জামিন আবেদন মঞ্জুর করেন। তবে এই জামিন নিয়ে চাঞ্চল্যকর তথ্য বেরিয়ে আসে যমুনা টিভির একদল অনুসন্ধানী প্রতিবেদকের কাছে। আসামিদের উপস্থিতিতে হাইকোর্ট থেকে জামিন নেয়ার নিয়ম থাকলেও আসামি নবী হোছাইন প্রক্সির মাধ্যমে জামিন নিয়েছেন বলে তথ্য বেরিয়ে আসে ওই অনুসন্ধানী প্রতিবেদক টিমের কাছ থেকে।
ওই অনুসন্ধানী প্রতিবেদন সুত্রে জানা যায়, গত ২৫ এপ্রিল যমুনা টিভির অনুসন্ধানী টিম চকরিয়া উপজেলার সাহারবিল আসে নবী হোছাইনের বিভিন্ন অপকর্মের তথ্য সংগ্রহ করতে।
স্থানীয় লোকজনও চেয়ারম্যান নবী হোছাইন ঢাকায় জামিনের জন্য গিয়েছেন বলে জানে। ফলে স্থানীয় ভুক্তভোগী লোকজন অনুসন্ধানী টিমের কাছে নবী হোছাইনসহ পরিবারের অপরাপর সদস্যদের নানা অপকর্ম যেমন, গরু ডাকাতি, জমি দখল, মারামারিসহ বিভিন্ন বক্তব্য দিতে থাকে।
এর এক পর্যায়ে স্থানীয় এক ভুক্তভোগী নারী ওই অনুসন্ধানী টিমের কাছে বক্তব্য দিতে দেখে নবী হোছাইনের ভাইয়ের স্ত্রী লম্বা দা নিয়ে এগিয়ে আসে। এসময় নবী হোছাইনের ভাবী সাংবাদিকদের উপর হামলার চেষ্টা করে এবং ভুক্তভোগী ওই নারীকে লাঞ্চিত করেন এবং ব্যাপক মারধর করেন। পরে সাংবাদিকরা চকরিয়া থানা পুলিশকে বিষয়টি জানালে পুলিশ গিয়ে সাংবাদিক ও ভিকটিমকে উদ্ধার করে।
এসব হইচই দেখে ঘর থেকে বেরিয়ে আসেন ঢাকায় জামিনের জন্য মহামান্য হাইকোর্টে থাকা ইউপি চেয়ারম্যান নবী হোছাইন! এসময় অনুসন্ধানী টিম নবী হোছাইনকে জামিনের বিষয়ে জিজ্ঞেস করলে তিনি বিষয়টি এড়িয়ে যান। তবে ওইদিন চকরিয়ার নিজ বাড়িতে থেকেই হাইকোর্ট থেকে জামিন নেন ইউপি চেয়ারম্যান নবী হোছাইন। প্রশ্ন হলো আদালতে তাহলে নবী হোছাইন পরিচয়ে কে হাজির হয়েছিলো?
এ ব্যাপারে বিজ্ঞ আইনজীবী অ্যাডভোকেট ফয়জুল কবির বলেন, ‘মহামান্য হাইকোর্ট থেকে জামিন নিতে হলে আসামিকে অবশ্যই আদালতে হাজির থাকতে হবে। কিন্তু নবী হোছাইন ওইদিন এলাকায় থেকে কীভাবে জামিন পেয়েছে তা বোধগম্য না। বিষয়টি আদালতের নজরে গেলে আইনগত ব্যবস্থাও নিতে পারে বলে মন্তব্য করেন তিনি।’
পাঠকের মতামত: