আজ ১৫ আগস্ট, জাতীয় শোক দিবস। স্বাধীনতার স্থপতি, মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪১তম শাহাদাতবার্ষিকী। ১৯৭৫ সালের শোকাবহ এই কালো দিবসে সূর্য ওঠার আগে খুব ভোরে সেনাবাহিনীর কিছুসংখ্যক বিপথগামী সদস্য ধানমণ্ডির বাসভবনে বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করে।
দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, বিরোধী দলের নেতা বেগম রওশন এরশাদ পৃথক বাণী দিয়েছেন।
দিবসটিকে এরই মধ্যে সরকারি ছুটি হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। সরকারি-বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল ও বেতার দিবসটি উপলক্ষে নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে। বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশ করবে জাতীয় সংবাদপত্রগুলো।
দিবসটি পালনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ও তাদের সহযোগী সংগঠনসহ সরকারি ও বেসরকারিভাবে সারা দেশে ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে।
ঘাতকরা সেই রাতে শুধু বঙ্গবন্ধুকেই হত্যা করেনি, তাদের হাতে একে একে প্রাণ হারিয়েছেন বঙ্গবন্ধুর সহধর্মিণী বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব, বঙ্গবন্ধুর সন্তান শেখ কামাল, শেখ জামাল ও শিশু শেখ রাসেলসহ পুত্রবধূ সুলতানা কামাল ও রোজি জামাল।
পৃথিবীর এই জঘন্যতম হত্যাকাণ্ড থেকে বাঁচতে পারেননি বঙ্গবন্ধুর অনুজ শেখ নাসের, ভগ্নিপতি আবদুর রব সেরনিয়াবাত, তাঁর ছেলে আরিফ, মেয়ে বেবি ও সুকান্ত, বঙ্গবন্ধুর ভাগ্নে যুবনেতা শেখ ফজলুল হক মণি, তাঁর অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী আরজু মণি এবং আবদুল নাঈম খান রিন্টু ও কর্নেল জামিলসহ পরিবারের ১৬ জন সদস্য ও ঘনিষ্ঠজন। এ সময় বঙ্গবন্ধুর দুই মেয়ে শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা বিদেশে থাকায় প্রাণে রক্ষা পান।
সপরিবারে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর গোটা বিশ্বে নেমে আসে তীব্র শোকের ছায়া এবং ছড়িয়ে পড়ে হত্যাকারীদের প্রতি ঘৃণার বিষবাষ্প।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মেয়ে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ সুদীর্ঘ ২১ বছর পর ক্ষমতায় এলে ১৯৯৬ সালের ১৪ আগস্ট বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার কার্যক্রম শুরু হয়। তিন প্রধান আসামি লেফটেন্যান্ট কর্নেল সৈয়দ ফারুক রহমান, সুলতান শাহরিয়ার রশিদ খান ও সাবেক প্রতিমন্ত্রী তাহের উদ্দিন ঠাকুরকে গ্রেপ্তার করা হয়।
এ মামলার বিচারকাজ শেষে আদালত ১২ জনকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেন। এর মধ্যে ২০১০ সালের ২৮ জানুয়ারি ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঁচ আসামির মৃতুদণ্ড কার্যকর করা হয়। এঁরা হলেন সেনাবাহিনীর সাবেক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মহিউদ্দিন আহমেদ (আর্টিলারি), সাবেক মেজর বজলুল হুদা, লেফটেন্যান্ট কর্নেল সৈয়দ ফারুক রহমান, সাবেক লেফটেন্যান্ট কর্নেল শাহরিয়ার রশিদ খান এবং এ কে এম মহিউদ্দিন আহমেদ (ল্যান্সার)।
বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত ও দণ্ডিত ১২ খুনির মধ্যে সাতজন পলাতক। তাঁদের মধ্যে একজন জিম্বাবুয়েতে মারা যান। বাকি ছয়জনের মধ্যে একাধিক ব্যক্তি যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডায় অবস্থান করছেন। দুই থেকে তিনজনের অবস্থান সম্পর্কে সরকারের কাছে শতভাগ নিশ্চিত তথ্য নেই।
টুঙ্গিপাড়ায় শ্রদ্ধা জানাবেন প্রধানমন্ত্রী
বার্তা সংস্থা বাসস জানিয়েছে, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪১তম শাহাদাতবার্ষিকী ও জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় বঙ্গবন্ধুর সমাধিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন।
সরকারি সূত্র জানায়, আজ সকাল ৯টা ৫০ মিনিটে বিমানবাহিনীর একটি হেলিকপ্টারে করে প্রধানমন্ত্রীর টুঙ্গিপাড়া পৌঁছার কথা রয়েছে। টুঙ্গিপাড়া উপজেলা পরিষদ হেলিপ্যাডে পৌঁছে তিনি সরাসরি বঙ্গবন্ধুর সমাধি কমপ্লেক্সে চলে যাবেন। সেখানে প্রধানমন্ত্রী পুষ্পস্তবক অর্পণ ও ফাতেহা পাঠ করবেন এবং বিশেষ মোনাজাতে অংশ নেবেন। এ উপলক্ষে তিন বাহিনীর একটি চৌকস দল গার্ড অব অনার দেবে।
বঙ্গবন্ধুর বড় মেয়ে শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধুর সমাধি প্রাঙ্গণে আয়োজিত মিলাদ এবং দোয়া মাহফিলেও যোগ দেবেন। এ সময় জাতীয় সংসদের স্পিকার, মন্ত্রিসভার সদস্য, সংসদ সদস্য, কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ নেতা এবং পদস্থ বেসামরিক ও সামরিক কর্মকর্তারা উপস্থিত থাকবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। কর্মসূচি শেষে প্রধানমন্ত্রী টুঙ্গিপাড়া থেকে ঢাকায় ফিরে আসবেন।
এর আগে প্রধানমন্ত্রী সকাল ৬টা ৩০ মিনিটে ধানমণ্ডি ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘরের সামনে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন। এরপর প্রধানমন্ত্রী বনানী গোরস্থানে যাবেন এবং ১৫ আগস্ট শাহাদাত বরণকারীদের কবরে ফুল দেবেন। সেখানে তিনি ফাতেহা পাঠ ও মোনাজাতে অংশ নেবেন।
পরে বিকেলে বাদ আসর শেখ হাসিনা জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘরে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ আয়োজিত মিলাদ মাহফিলে অংশ নেবেন।
নানা কর্মসূচি
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪১তম শাহাদাতবার্ষিকী ও জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে সরকারিভাবে বিস্তারিত কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনসহ অন্যান্য রাজনৈতিক, সামাজিক এবং সাংস্কৃতিক সংগঠন বঙ্গবন্ধু ও তাঁর পরিবারের নিহত সদস্যদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে মাসব্যাপী কর্মসূচি গ্রহণ করে।
১৫ আগস্টকে সামনে রেখে এ মাসের প্রথম দিন থেকেই আওয়ামী লীগ ও তাদের সহযোগী সংগঠনসহ বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক সংগঠন বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছে।
আজ আওয়ামী লীগের কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে বঙ্গবন্ধু ভবন এবং কেন্দ্রীয় কার্যালয়সহ সংগঠনের সব স্তরের কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা অর্ধনমিতকরণ ও কালো পতাকা উত্তোলন।
সকাল ৬টা ৪৫ মিনিটে বঙ্গবন্ধু ভবনে শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে সকাল ৭টা ৩০ মিনিটে বনানী কবরস্থানে ১৫ আগস্টের শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধার্ঘ্য নিবেদন, কবর জিয়ারত, ফাতেহা পাঠ, মোনাজাত ও মিলাদ মাহফিল অনুষ্ঠিত হবে। একই দিনে টুঙ্গিপাড়ায় সকাল ১০টায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধিতে শ্রদ্ধার্ঘ্য নিবেদন, ফাতেহা পাঠ, মোনাজাত, মিলাদ ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হবে।
এ কর্মসূচিতে আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের একটি প্রতিনিধিদল উপস্থিত থাকবে।
এদিন বাদ জোহর দেশের সব মসজিদে মিলাদ মাহফিল অনুষ্ঠিত হবে। সুবিধামতো সময়ে মন্দির, প্যাগোডা, গির্জাসহ অন্যান্য উপাসনালয়ে বিশেষ প্রার্থনা এবং দুপুরে অসচ্ছল দুঃস্থ মানুষদের মধ্যে খাদ্য বিতরণ করা হবে। মহিলা আওয়ামী লীগ বাদ আসর বঙ্গবন্ধু ভবন প্রাঙ্গণে মিলাদ ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করেছে।
আওয়ামী লীগের অন্যান্য কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে ১৬ আগস্ট বিকেল ৪টায় বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আলোচনা সভা। এতে সভাপতিত্ব করবেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সভানেত্রী শেখ হাসিনা।
মহানগর আওয়ামী লীগ, আওয়ামী যুবলীগ, আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগ, জাতীয় শ্রমিক লীগ, কৃষক লীগ, মহিলা আওয়ামী লীগ, যুব মহিলা লীগ, ছাত্রলীগসহ আওয়ামী লীগের সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন শোক দিবস উপলক্ষে অনুরূপ কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।
এ ছাড়া ১৫ আগস্ট বাদ আসর দেশের সব ওয়ার্ড, ইউনিয়ন, উপজেলা ও জেলায় মিলাদ মাহফিল এবং মন্দির, প্যাগোডা ও গির্জায় বিশেষ প্রার্থনা অনুষ্ঠিত হবে।
জাসদ, সিপিবি, জেপি, গণফোরাম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাতীয় প্রেসক্লাবসহ অন্যান্য সাংস্কৃতিক, সামাজিক এবং রাজনৈতিক সংগঠন এ উপলক্ষে বিস্তারিত কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।
সরকারিভাবে সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে সরকারি, আধা সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও বেসরকারি ভবনগুলোতে অর্ধনমিত জাতীয় পতাকা উত্তোলনের মধ্য দিয়ে শুরু হবে দিবসের কর্মসূচি।
এ ছাড়া বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশ মিশনগুলোতে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত এবং আলোচনা সভার আয়োজন করা হবে।
পাঠকের মতামত: