নিউজ ডেস্ক :: করোনা ভাইরাস মহামারির শেষ কবে—বিশ্ব জুড়ে এ প্রশ্নের উত্তর এখনো অজানা হলেও এর মধ্যেই দেশে সময় ঘনিয়ে আসছে ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনের। আইন অনুযায়ী আগামী বছরের মার্চের তৃতীয় সপ্তাহের আগে ইউপি নির্বাচন শুরু করতে হবে, আর শেষ করতে হবে জুনের আগেই। এছাড়া জেলা পরিষদের নির্বাচনও করতে হবে আগামী বছরের শেষ দিকে। আর উপজেলা পরিষদ ও পৌরসভার নির্বাচন হবে ২০২৪ সালে। এর আগে ২০২৩ সালে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন হওয়ার কথা। সেই হিসাবে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের কয়েক মাস পরেই হবে উপজেলা ও পৌরসভা নির্বাচন। উল্লেখ্য, উপজেলা ও পৌরসভা নির্বাচন ২০১৯ সালের মার্চে শুরু হয়ে কয়েক ধাপে শেষ হয়।
বর্তমানে দেশে ৪ হাজার ৫৭১টি ইউনিয়ন পরিষদ রয়েছে। ২০১৬ সালের ২২ মার্চ শুরু হয়ে কয়েক ধাপে ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন শেষ হয় ঐ বছরের ৪ জুন। আইন অনুযায়ী কোনো ইউনিয়ন পরিষদের মেয়াদ শেষ হওয়ার পূর্ববর্তী ১৮০ দিনের মধ্যে নির্বাচন সম্পন্ন করতে হবে। এই হিসাব অনুযায়ী, আগামী বছরের মার্চে যেসব ইউনিয়ন পরিষদের পাঁচ বছর মেয়াদ হবে, সেসব ইউনিয়ন পরিষদে নির্বাচন সম্পন্ন করতে হবে এ বছরের সেপ্টেম্বরের শেষ সপ্তাহ থেকে আগামী বছরের মার্চের তৃতীয় সপ্তাহের মধ্যে। আর যেসব ইউনিয়ন পরিষদের মেয়াদ আগামী বছরের জুনের প্রথম দিকেই শেষ হবে, সেসব ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন শেষ করতে হবে এ বছরের ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহ থেকে আগামী বছরের মে মাসের মধ্যে।
স্থানীয় সরকার, পল্লি উন্নয়ন (এলজিআরডি) ও সমবায়মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম বুধবার আলাপকালে বলেন, ‘ইউপি ও জেলা পরিষদসহ স্থানীয় সরকারের নির্বাচনসমূহের আইনগুলো নিয়ে আমরা আজকেও বসেছি। আইনে কিছু জটিলতা রয়েছে। তার পরেও আইন যেভাবে আছে, আমাদের তো সেভাবেই এগোতে হবে। যেহেতু দেশে কোভিড-১৯-এর সমস্যা রয়েছে এবং আগামী দুই-তিন মাসেও আশানুরূপ উন্নতি হবে বলে মনে হচ্ছে না; সেই কারণে সঠিক সময়ে এই নির্বাচনগুলো করা বড় চ্যালেঞ্জ। সেক্ষেত্রে ইউপি ও জেলা পরিষদের মেয়াদ শেষ হলেও সেখানে প্রশাসক নিয়োগ করা যায় কি না, কিংবা বিকল্প কিছু করা যায় কি না, আমরা সেটা ভাবছি।’
ইউনিয়ন পরিষদের মেয়াদ শেষ ও নির্বাচন শুরুর সম্ভাব্য হিসাব করলে ভোটের এখনো ২ থেকে ১০ মাস বাকি থাকলেও এখন থেকেই তোড়জোড় শুরু করে দিয়েছেন সম্ভাব্য চেয়ারম্যান ও সদস্য (মেম্বার) প্রার্থীরা। দেশের কোনো কোনো এলাকায় এই তোড়জোড়ের ব্যাপকতা দেখা যায় এবারের কোরবানির ঈদে। নির্বাচন সামনে রেখে সম্ভাব্য প্রার্থীদের কেউ কেউ একাধিক গরু জবাই করে বিলি করেছেন এলাকার ভোটারদের মধ্যে। নানা সমীকরণে ভোটের মাঠে প্রভাব-প্রতিপত্তি থাকে এমন ভোটারদের বাড়িতে কেউ কেউ গরু কিনেও পাঠিয়েছেন। এখানেই থেমে থাকছেন না সম্ভাব্য প্রার্থীরা। তাদের তত্পরতা দেখলে মনে হতে পারে, আর কদিন পরেই যেন ভোট। ইউপি নির্বাচন সামনে রেখে বাড়ি, পাড়া-মহল্লা, হাট-বাজার ও রাজনৈতিক কার্যালয়গুলো এখনই প্রায় সরগরম। কোথাও কোথাও শুরু হয়ে গেছে নগদ অর্থের ছড়াছড়িও।
ইউপি নির্বাচনের পাশাপাশি জেলা পরিষদ নির্বাচনে সম্ভাব্য প্রার্থীরাও এখন থেকেই মাঠে তত্পর। দেশে প্রথমবারের মতো জেলা পরিষদ নির্বাচন হয় ২০১৬ সালের ২৮ ডিসেম্বর। সেই হিসাবে আগামী বছরের শেষ দিকে জেলা পরিষদের নির্বাচন হওয়ার কথা।
নির্বাচন কমিশন (ইসি) সূত্রে জানা গেছে, আইন অনুযায়ী জেলা পরিষদ প্রথমবার গঠনের ক্ষেত্রে প্রথম নির্বাচনের তারিখ স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় ঠিক করেছে। সে অনুযায়ী ২০১৬ সালের ২৮ ডিসেম্বর ভোটগ্রহণের তারিখ নির্ধারণ করেছিল ইসি। প্রথমবার পরিষদের মেয়াদ শেষে পরের নির্বাচনগুলোতে কমিশন নির্বাচনের দিনক্ষণ ঠিক করবে। আইন অনুযায়ী এক জন চেয়ারম্যান, ১৫ জন সদস্য ও সংরক্ষিত আসনের পাঁচ জন নারী সদস্য নিয়ে জেলা পরিষদ গঠন হয়। চেয়ারম্যান ও ২০ জন সদস্যকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করেন সংশ্লিষ্ট এলাকার সিটি করপোরেশন (থাকলে), উপজেলা ও ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচিত প্রতিনিধিরা। এজন্য ২০১৬ সালের নির্বাচনে প্রতিটি জেলাকে ১৫টি ওয়ার্ডে ভাগ করা হয়েছিল।
যেহেতু জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও ২০ জন সদস্যকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করেন সংশ্লিষ্ট এলাকার সিটি করপোরেশন (থাকলে), উপজেলা ও ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচিত প্রতিনিধিরা; সেজন্য জেলা পরিষদের আগামী নির্বাচনে সম্ভাব্য প্রার্থীরা এখন থেকেই তত্পর ইউপি নির্বাচন নিয়ে। জেলা পরিষদ নির্বাচনে নিজেদের বৈতরণী পার হতে ইউপি নির্বাচনে পছন্দের প্রার্থীদের জয়ী করতে নানাভাবে তোড়জোড় শুরু করেছেন সম্ভাব্য প্রার্থীরা। তাদেরও কেউ কেউ এবার কোরবানির ঈদে ইউপি নির্বাচনে সম্ভাব্য প্রার্থীদের বাড়িতে গরু কিনে পাঠিয়েছেন। কেউ কেউ একাধিক গরু জবাই করে ইউপি নির্বাচনে সম্ভাব্য প্রার্থীদের বাড়িতে মাংস পাঠিয়েছেন।
জানা গেছে, বিভিন্ন এলাকায় জেলা পরিষদের সম্ভাব্য প্রার্থীরা এখন থেকেই আগাম বিনিয়োগ করতে শুরু করেছেন ইউপি নির্বাচনে সম্ভাব্য প্রার্থীদের পেছনে। কেউ কেউ ঐসব প্রার্থীদের নির্বাচনের পুরো খরচও বহন করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে টাকা খরচ করা শুরু করেছেন। ফলে ইউপি ও জেলা পরিষদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দেশের বিভিন্ন এলাকায় এখন থেকেই টাকার ছড়াছড়ি শুরু হয়েছে।
এ ব্যাপারে সুশাসনের জন্য নাগরিক-সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ‘আসলে আমাদের পুরো প্রক্রিয়াটিই কলুষিত। দলীয় ভিত্তিতে এসব নির্বাচন করার কারণে এখানে মনোনয়ন বাণিজ্য হয়। জেলা পরিষদকে তো মুহিত সাহেব (সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত) বলেছিলেন- অথর্ব। জেলা পরিষদের এত অল্প কয়জন ভোটার, যেখানে পুরোটাই লেনদেনের সম্পর্ক। ফায়দা লুটতে জেলা পরিষদের সম্ভাব্য প্রার্থীরা এখনই গরু বিলাচ্ছেন, টাকা ছড়াচ্ছেন এসবই তাদের বিনিয়োগ। যেহেতু এখানে জনগণের ভোটের কোনো বিষয় নেই, তাই জনকল্যাণ বা জনসেবার ছিটেফাঁটাও নেই। নির্বাচিত হয়ে সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা নিতেই তারা এখন থেকেই বিনিয়োগ শুরু করেছেন। এদেরই কেউ কেউ নির্বাচিত হয়ে মূর্তিমান হয়ে ওঠে। সুত্রে ইত্তেফাক
পাঠকের মতামত: