অনলঅইন ডেস্ক ::
২০০৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারী বিতর্কিত ও ত্রুটিপূর্ণ নির্বাচনেও আওয়ামী লীগ নিরুঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতার ধারা অব্যাহত রাখে। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে একটি বড় প্রশ্ন হলো যে, এবারও কী আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করবে?
বাংলাদেশের জাতীয় সংসদের আসন সংখ্যা হলো তিনশো। এই তিনশো আসন সংখ্যার মধ্যে যদি কেউ দুই তৃতীয়াংশ সংখ্যা সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়। তাহলে তাকে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা বলে। দুই তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করলে একটি রাজনৈতিক দল সংবিধানের অনেকগুলো অনুচ্ছেদ পরিবর্তন করতে পারে এবং জাতীয় সংসদের উপর তার নিরঙ্কুশ কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়। এখানে আইন প্রনয়নসহ অনেক নীতি নির্ধারনী বিষয় ইস্যু পরিবর্তনের ক্ষমতা জনগন তাদেরকে দেয় বলে ধরে নেয়া হয়।
বাংলাদেশের জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ধারা পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, ১৯৯১ সালে নির্বাচনে কেউই দুই তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করতে পারেনি, বরং হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ে সামান্য ব্যবধানে বিএনপি ক্ষমতায় আসে।
১৯৯৬ সালের নির্বাচনেও আওয়ামী লীগ ও বিএনপি কেউই নিরঙ্কুশ সংখ্যা গরিষ্ঠতা অর্জন করতে পারেনি। বরং হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসে। ২০০১ সালে নির্বাচনে বিএনপি প্রথমবারের মত নিরঙ্কুশ সংখ্যা গরিষ্ঠতা অর্জন করে। দুই তৃতীয়াংশের বেশি আসন বিএনপি জামাত জোট পায়। ২০০৮ এর নির্বাচনে আওয়ামী লীগ একারাই দুই তৃতীয়াংশ আসনে বিজয়ী হয়েছিল। ২০১৪ সালে যেহেতু অর্ধেক আসনেই কোন নির্বাচন হয়নি, বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচন হয়েছে। কাজেই আওয়ামী লীগের সংখ্যাগরিষ্ঠতা ধরে রাখতে তেমন কোন অসুবিধা হয়নি।
তবে এবারের নির্বাচনের প্রেক্ষাপট ভিন্ন। এবারের নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হচ্ছে। এ পর্যন্ত প্রাপ্ত তথ্যে দেখা যাচ্ছে, নিবন্ধিত ৩৯ দলের প্রত্যেক রাজনৈতিক দলই এবার অংশগ্রহন করছে। বিএনপি ২০ দলের বাইরে ঐক্যফ্রন্ট গঠন করেছে। আওয়ামী লীগও তাদের নির্বাচনে জয়লাভ নিশ্চিত করার জন্য মহাজোট এবং যুক্তফ্রন্টের সঙ্গে আসন ভাগাভাগি করছে। আওয়ামী লীগ নিজেই এবার ৩৫ টি আসনে কোন প্রার্থী দেয়নি। এই প্রেক্ষিতে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহলের প্রশ্ন হলো যে, আওয়ামী লীগের এবারের নির্বাচনে প্রত্যাশা কি? আওয়ামী লীগের একাধিক প্রতিনিধির সঙ্গে আলাপ করে দেখা গেছে যে, আওয়ামী লীগ এবারের নির্বাচনে দুই তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা চায় না। বরং তারা একটি অংশগ্রহনমূলক প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ পার্লামেন্ট চায়।
আওয়ামী লেীগের একাধিক নেতা মনে করছেন যে, তারা ১৭০ আসন পেলেই খুশি। তবে একটি রাজনৈদিক দলের ক্ষমতা দখল করার জন্য অন্তত ১৫১ টি আসন প্রয়োজন। আওয়ামী লীগ অবশ্যই ১৫১ টি আসনের বেশি চায়। এছাড়া আওয়ামী লীগের মহাজোটের যে শরীক জাতীয় পার্টি এবং যুক্তফ্রন্ট রয়েছে তাদেরকে জয়ী করাও টার্গেট। আওয়ামী লীগের একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নির্বাচন তাদের টার্গেট দলীয় ভাবে ১৫১ টি আসনে বিজয়ী হওয়া। কারণ আওয়ামী লীগ মনে করছে যে, যদি তার সরকার গঠনের জন্য ১৫১ টি দরকার। তাহলেই তারা এককভাবে সরকার গঠনের ম্যানডেট পাবে।
তাই আওয়ামী লীগের একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তারা মনে করছে যে নূন্যতম ১৫১ টি আসন তাদের পেতেই হবে। এবং সেটি শুধু আওয়ামী লীগের হবে। ১৪ দলগত এবং মহজোটগতভাবে যে আসনগুলো পাবে সেটা তাদের সরকার গঠনের জন্য আরও শক্ত অবস্থান নিবে। কিন্তু আওয়ামী লীগ নিজেরাই সরকার গঠনের সামর্থ্য অর্জন করতে চায়। আওয়ামী লীগের একজন নেতা বলেছেন, এই আসন যদি আওয়ামী লীগ এককভাবে না পায়। জোটগতভাবে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়। তাহলে অনেক বিষয় জোটের উপর নির্ভর করতে হয়। সেখানে তখন জোটের দাবি -দাওয়া এবং আবদার বেড়ে যায়। এজন্য সর্বনিম্ন ১৫১ টি আসনে জয়লাভ করবে বলে আওয়ামী লীগ নেতারা আশাবাদি। এ পর্যন্ত যে জরিপগুলো হয়েছে, সে জরিপে দেখা গেছে যে, আওয়ামী লীগ ১৬০ থেকে ১৭০ টি আসনে নিজেদের অবস্থান প্রাক্কলন করছে। অর্থাৎ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের লক্ষ্য থাকবে ১৭০ টি আসনে জয়লাভ করা এবং আওয়ামী লীগের নেতারাও বলছে , এবার নির্বাচন প্রতিদ্বন্ধিতা পূর্ণ হবে। যেহেতু টানা ১০ বছর ধরে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আছে। কাজেই তাদের জন্য ২০০৮ বা ২০১৪ এর মত দুই তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন নাও হতে পারে।
পাঠকের মতামত: