মোবাইল সিম জালিয়াতির সাথে জড়িত থাকার অভিযোগে কয়েকজনকে আটকের পর বাংলাদেশের পুলিশ বলছে, জালিয়াতির মাধ্যমে অন্যের বায়োমেট্রিক তথ্য ব্যবহার করে হাজার হাজার মোবাইল সিম নিবন্ধন করে বিক্রি করা হচ্ছে।
এসব সিম প্রিঅ্যাকটিভেটেড হিসাবে খুচরা দোকানে বেশি দামে বিক্রি করা হচ্ছে। যেকেউ কিনেই এসব নম্বর ব্যবহার করতে পারেন।
ঢাকার তেজগাঁও অঞ্চলের উপ পুলিশ কমিশনার বিপ্লব কুমার সরকার বলেন, অন্যের পরিচয় ও আঙ্গুলের ছাপ ব্যবহার করে এরকম হাজার হাজার মোবাইল নম্বর নিবন্ধন করে বিক্রি করা হচ্ছে। এরকম কয়েকশ সিমও আমরা উদ্ধার করেছি।
একটি মোবাইল অপারেশন কোম্পানির নাম জানিয়ে তিনি বলেন, এই কোম্পানির কর্মীরা পরিকল্পিতভাবে একজন গ্রাহকের তথ্য চুরি করে তার অজান্তে অন্য সিম নিবন্ধন করছে। এরপর নিজেদের বিতরণ ব্যবস্থা ব্যবহার করে সেগুলো খুচরো পর্যায়ে বিক্রি করে।
হয়তো যার পরিচয় ও আঙ্গুলের ছাপ ব্যবহার করা হচ্ছে, তার এ বিষয়ে কোন ধারণাই নেই। হয়তো তার জানারও সুযোগ নেই।
মঙ্গলবার ঢাকার তেজগাঁও এলাকা থেকে এই জালিয়াতির সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে ২২জনকে আটক করেছে পুলিশ।
পুলিশ এ সময় অন্যের নাম পরিচয় ব্যবহার করে নিবন্ধন করা অনেক মোবাইল সিম উদ্ধার করেছে বলেও জানিয়েছে।
আঙ্গুলের ছাপ দিয়ে সিম বিক্রি শুরু হওয়ার পর অনেকেই এ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। আদালতে এ বিষয়ে একটি রিটও হয়েছিল, যা খারিজ হয়ে যায়।
তখন সরকারের পক্ষ থেকে আশ্বস্ত করা হয়েছিল যে, ব্যক্তিগত গোপনীয়তা রক্ষার বিষয়ে দরকারি ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। কিন্তু নিবন্ধন শেষ না হওয়ার একমাসের মধ্যেই এই জালিয়াতির বিষয়টি প্রকাশ হলো।
বুধবার সকালে ঢাকার তেজগাঁও বিভাগের পুলিশ কর্মকর্তা বিপ্লব কুমার সরকার জানান, আমরা তদন্তে দেখতে পেয়েছি, একটি কোম্পানির কর্মী বা বিক্রেতারা যখন সিম নিবন্ধনের জন্য ডিভাইসে আঙ্গুলের ছাপ নেয়, তখন তার সিমটি নিবন্ধনের পাশাপাশি, নানা কৌশলে তারা আরো কয়েকবার আঙ্গুলের ছাপ নিয়ে অন্য আরো কয়েকটি মোবাইল সিম নিবন্ধন করে নেয়। পরে এসব সিম নিজেদের বিতরণ কর্মীদের মাধ্যমে ‘প্রিঅ্যাকটিভেটেড’ বলে বেশি দামে বিক্রি করে।
যদিও এরকম ‘প্রিঅ্যাকটিভেটেড” সিম বিক্রি পুরোপুরি নিষিদ্ধ।
ওই কম্পানিটির তিনজন কর্মকর্তাকেও জিজ্ঞাসাবাদ করেছে পুলিশ।
তেজগাঁয়ের পুলিশ বিভাগ জানিয়েছে, একটি ছিনতাই মামলার তদন্ত করতে গিয়ে তারা একজনকে সনাক্ত করেন যার মোবাইল নম্বরটি একটি মোবাইল ফোন কম্পানির কর্মীর সেটে একবার ব্যবহৃত হয়েছে। সেই কর্মীকে আটক করা হলে তিনি জানান, তিনি একটি মোবাইল ফোন কম্পানি ব্রান্ড প্রোমোটর। তার কাজই হলো, বিভিন্ন ব্যক্তির আঙ্গুলের ছাপ নিয়ে ওই কম্পানির সিম নিবন্ধন করে অ্যাকটিভেট করা। পরে সেগুলো ডিস্ট্রিবিউটরের মাধ্যমে বেশি দামে খুচরা বিক্রি করা হয়। এভাবে তিনি অনেক সিম অন্যের নামে নিবন্ধন করেছেন।
মি. সরকার বলেন, এরকম হাজার হাজার মোবাইল নম্বর অন্যের পরিচয়ে ব্যবহৃত হচ্ছে। এ রকম অনেক সিম ব্যবহার করা হচ্ছে নানা অপরাধমুলক কাজে। কিন্তু যার পরিচয়ে এসব সিম ব্যবহৃত হচ্ছে, তার হয়তো এ বিষয়ে কিছু জানাও নেই।
বিটিআরসির সিনিয়র সহকারি পরিচালক (মিডিয়া উইং) জাকির হোসেন খান জানান, জালিয়াতি করে অবৈধ সিম নিবন্ধনের বিষয়ে পুলিশের অভিযানের বিষয়ে তাদের জানানো হয়েছে। এ বিষয়ে তারা আইনগত পরামর্শ ও সহায়তা করছেন।
পুলিশ জানিয়েছে, গ্রেপ্তারকৃতরা বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে মোবাইল ফোনের সিম রেজিস্ট্রেশনের সময় কয়েকজনের আঙ্গুলের ছাপ সংগ্রহ নিয়ে তাদের নামে অন্য মোবাইল নম্বর রেজিস্ট্রেশন করে। একটি বেসরকারি মোবাইল অপারেটর এই বিষয়টি টের পেয়ে বিটিআরসি এবং পুলিশকে জানায়। এরপরেই পুলিশ এই অভিযান শুরু করে।
গত ১৬ ডিসেম্বর থেকে ৩১ মে পর্যন্ত দেশে বায়োমেট্রিক পদ্ধতি বা জাতীয় পরিচয় পত্র ও আঙ্গুলের ছাপের সঙ্গে মিলিয়ে সিম পুনঃনিবন্ধন প্রক্রিয়া চলে।
এ সময় পুনর্নিবন্ধিত সিমের সংখ্যা ১১ কোটি ছাড়ায়। অনিবন্ধিত সিম বন্ধ করে দেয়া হয়। নিয়ম অনুযায়ী, আঙ্গুলের ছাপ ছাড়া কোন সিম বিক্রি করা যাবে না।
তবে এরপরেও প্রিঅ্যাকটিভেট হিসাবে দেশের বিভিন্ন স্থানে সিম বিক্রির ঘটনা ঘটছে।
পাঠকের মতামত: