চিহ্নিত ১৪ দালালের নিয়ন্ত্রনে এখন কক্সবাজারের পেকুয়া উপজেলা ভূমি অফিস! সরকারী ছুটির দিন ব্যতিত প্রতিদিন সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত এসব চিহ্নিত দালাল পেকুয়া উপজেলা পরিষদের ৪র্থ তলায় অবস্থিত উপজেলা ভূমি অফিসের কর্মকর্তাদের টেবিলের সামনে সামনে ঘুরঘুর করে।
গত কয়েকদিন ধরে সরকারী অফিস সময়ে সরেজমিনে বেশ কয়েকবার পেকুয়া উপজেলা ভূমি অফিসে গিয়ে দালালদের এমন উৎপাতের চিত্র দেখা গেছে। এসময় টইটংয়ের এক বাসিন্দা বলেন ‘ভাই কীর আর করব, এ অফিসে দালাল ছাড়া কোন কাজই হয়না’। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই লোক আরো বলেন ‘সরাসরি ভূমি সমস্যার জন্য অফিসের কর্তাবাবুদের কাছে যেতে চাইলেও দালালারা যেতে দেয়না, কাজ করে দেওয়ার আশ্বাসে দালালো হাতিয়ে নেয় মোটা অংকের টাকা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এসব দালালেরা ভূমি অফিস বা উপজেলা পরিষদের কোন দপ্তরের নিয়োগকৃত সরকারী কর্মচারী না হলেও এরা পেকুয়া উপজেলা পরিষদে বীরদর্পে প্রতিনিয়তই দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। এরা এখন অঘোষিত অঘোষিত ভূমি অফিসের কর্মচারী! এদের অত্যাচারে ভূমি অফিসে আগত পেকুয়া উপজেলার ৭ ইউনিয়নের অসংখ্য জমির মালিকরা অতিষ্ট হয়ে পড়েছে। দালাল ছাড়া কোন ভূক্তভোগীরা ভূমি অফিসের ধারে-কাছেও যেতে পারেনা। দালালেরা নির্নিষ্ট সময়ে জমির খতিয়ান, ভূমি সংক্রান্ত মামলাসহ ভূমির বিভিন্ন সমস্যাদি দ্রুত সমাধান করে দেওয়ার আশ্বাসে ভূমি অফিসের প্রকৃত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নাম ভাঙ্গিয়ে সাধারান লোকজনকে প্রলোভনে ফেলে আদায় করে মোটা অংকের টাকা। এছাড়াও ভূমি অফিসের এক শ্রেণীর কর্মচারীদের সাথে এসব দালালদের দারুণ সখ্যতাকে পুঁজি করে সাধারান লোকজনের কাছ জমির নানাবিধ সমস্যা নিয়ে হাতিয়ে নিচ্ছে লাখ লাখ টাকা। পেকুয়া ভূমি অফিসে সম্প্রতি সময়ে দালালদের এভাবে উৎপাত বৃদ্ধি পেলেও কর্তৃপক্ষ দালালদের বিরুদ্ধে রহস্যজনক কারণে কোন ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করছেনা বলে স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন।
স্থানীয়রা জানান, পেকুয়া উপজেলা প্রতিষ্টার ১যুগের বেশি সময় পার হলেও ভুমি অফিসে এসিল্যান্ড পদায়ন না করায় দালালদের সংখ্যা দিন দিন আশংকাজনকভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। আর এই্ সুযোগে পেকুয়া উপজেলা ৭ ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামের ১৪ জন দালাল প্রতিনিয়তই ভূমি অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নাম ভাঙ্গিয়ে সাধারান লোকজনের কাছ থেকে জমির নানা সমস্যাকে পুঁজি করে অবৈধ উপায়ে কাড়ি কাড়ি অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছেন। এক প্রকার পেকুয়া উপজেলা ভূমি অফিসকে জিম্মি করে রেখেছেন ওই আলোচিত ১৪ দালাল। ভূমি অফিসে সক্রিয় দালালরা পেকুয়া সদর, টইটং, বারবাকিয়া, রাজাখালী, শিলখালী ও মগনামা-উজানটিয়া ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামের বাসিন্দা। দালালরা সংঘবদ্ধভাবে প্রতিনিয়তই পেকুয়া ভূমি অফিসকে জিম্মি করে রেখেছে। দীর্ঘদিন ধরে পেকুয়া সরকারী জনগুরুত্বপূর্ন এ অফিসে দালালদের উৎপাত বেড়ে গেলেও সংশ্লিষ্ট প্রশাসন রহস্যজনক কারণে দালালদের বিরুদ্ধে কোন ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি।
সরেজমিনে পেকুয়া ভূমি অফিসে গিয়ে দেখা গেছে, এসব দালালেরা ভূমি অফিসে দাপটের সাথে কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। ভূমি অফিসের কর্মকর্তাদের টেবিলে টেবিলে কাগজপত্র নিয়ে এদের দৌড়-ঝাপ প্রতিনিয়ত চোখে পড়ার মতো। স্থানীয় সুবিধাবাধী কিছু রাজনৈতিক দলের ছত্রছায়ায় থাকা এসব দালালেরা কারো ধার ধারেনা। এর ডিসি-ইউএনও কাউকেই মানেনা। অথচ, সরকারী অফিসে দালালদের প্রবেশে কড়াকড়ি থাকার কথা। কিন্তু ব্যতিক্রম পেকুয়া ভূমি অফিসে। এখানে অনায়েসেই দালালেরা প্রবেশ করে ভূমি অফিসের কর্মকর্তা-কর্মকাচারীদের কাছে নানা তদবীর বানিজ্যে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। দালাদের অবাধে আনাগোনার কারণে পেকুয়া ভূমি অফিসের নিরপত্তাও প্রশ্নের সম্মুখীন বলে মনে করেন স্থানীয় সচেতন মহল। স্থানীয় সচেতন মহল অবিলম্বে এসব চিহ্নিত দালালদের বিরুদ্ধে সাঁড়াশি অভিযান পরিচালনা করে পেকুয়া ভূমি অফিসকে দালালমুক্ত করতে জরুরী ভিত্তিতে কক্সবাজার জেলা প্রশাসকের কাছে হস্থক্ষেপ চেয়েছেন।
এ ব্যাপারে পেকুয়া ভুমি অফিসের এক কর্মচারী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘সাধারান মানুষ তাদের জায়গা-জমি নিয়ে সরাসরি এসে আমাদের সহযোগীতা চাইলে কাজ করে দিই’। পেকুয়া ভূমি অফিসের কর্মকর্তা-কর্মকচারীদের সাথে দালালদের সম্পর্ক নেই উলে¬খ করেন ওই কর্মচার্।ী
পাঠকের মতামত: