মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন, পেকুয়া :::
মো, কাইছার মিয়া (২৫)। পেকুয়া উপজেলার বারবাকিয়া ইউনিয়নের পশ্চিম জালিয়াকাটা গ্রামের জাফর আলমের পুত্র। কাইছার মিয়া সামান্য পুঁজি খাটিয়ে পেকুয়া চৌমুহুনীতে ছোটখাট ব্যবসা করেন। থানা বা আদালতে তার বিরুদ্ধে কোন মামলা নাই। এরপরেও পেকুয়া থানা পুলিশের অসাধু এক কর্মকর্তা তাকে গতকাল ৫ মার্চ রাত ৮টার সময় পেকুয়া চৌমুহুনীস্থ তার দোকান থেকে ডেকে নিয়ে ১৭ ঘন্টা থানা হাজতে আটকে রাখেন। ৬ মার্চ দুপুর দেড়টার দিকে তাকে আদালতে নেওয়া হয়। অতপর আদালতেই মিলে তার মুক্তি।
খোঁজ খবর নিয়ে জানা গেছে, পেকুয়া উপজেলার বারবাকিয়া ইউনিয়নের জালিয়াকাটা গ্রামের জাফর আহমদের পুত্র মোহাম্মদ কাইছার এডরুক লিমিটেড নামের ঢাকার একটি ঔষধ কোম্পানি প্রতিষ্টানে এমআইও হিসেবে চাকুরী করত। ওই কোম্পানির সরবরাহকৃত ঔষধের বিল বাবদ চার লাখ ৭৭ হাজার সাত শত একশি টাকা বকেয়া থাকে তার। এ বকেয়া টাকা পরিশোধ না করায় কোম্পানি থেকে বারবার তাগাদা দেওয়ার পর গত ১০/০৮/১৬ইংরেজী তারিখে কোম্পানির ঢাকা অফিসে গিয়ে কোম্পানির অনুকুলে মোহাম্মদ কাইছার এর নামীয় ব্যাংক হিসাব ইসলামী ব্যাংক চকরিয়া শাখার একটি চেক প্রদান করেন। ওই চেকটি কোম্পানি ব্যাংকে নগায়দনের জন্য জমা করলে মোহাম্মদ কাইছারের ব্যাংক হিসেবে পর্যাপ্ত ব্যালেন্স না থাকায় চেকটি ডিজঅনার হয়ে যায়। পরে ঢাকার এডরুক কোম্পানি লি: এর পক্ষে এড. ছৈয়দ আনিসুর রহমান গত ৫/০৯/১৬ ইংরেজী তারিখ মোহাম্মদ কাইছারের স্থায়ী ঠিকনায় একটি লিগ্যাল নোটিশ প্রেরণ করেন।
জানা যায়, চেক দিয়ে প্রতারণা করায় ওই কোম্পানি মোহাম্মদ কাইছারকে আসামী করে ঢাকার চীফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে একটি মামলা দায়ের করেন। যার মামলা নং সিআর ৯৪৩/১৬। এর পর আদালদত থেকে সমন জারী হয়। সমন জারী হলেও আদালতে উপস্থিত না হওয়ায় জাফর আহমদের পুত্র মোহাম্মদ কাইছারের বিরুদ্ধে গ্রেফতারী পরোয়ানা জারী করে। আদালত থেকে পরোয়ানাটি যথাযথ মাধ্যমে পেকুয়া থানায় প্রেরণ করা হয়। এরপরেই ঘটে বিপত্তি। পেকুয়া থানার করিৎকর্মা পুলিশ কর্মকর্তা যাচাই-বাচাই না করে প্রকৃত আসামীকে গ্রেফতার না করে শুধুমাত্র নামে মিল থাকায় ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী কাইছার মিয়াকে আটক করে।
ভূক্তভোগী পেকুয়া উপজেলার পশ্চিম জালিয়াকাটা গ্রামের জাফর আলমের পুত্র কাইছার মিয়া অভিযোগ করেছেন, গতকাল ৫ মার্চ রাত ৮টার দিকে পেকুয়া চৌমুহুনীস্থ তার দোকান আসেন পেকুয়া থানার এএসআই জয়নাল। এসময় তাকে গ্রেফতার করে থানায় নিয়ে যান ওই পুলিশ কর্মকর্তা। পরে খবর পেয়ে কাইছার মিয়ার আত্মীয় স্বজনরা থানায় এসে তাকে কেন আটক করা হয়েছে জানতে চান পুলিশের কাছে। তাদের পেকুয়া থানা পুলিশ জানায়, কাইছার মিয়ার বিরুদ্ধে ঢাকার একটি আদালত থেকে গ্রেফতারী পরোয়ানা এসেছে। তাই তাকে আটক করা হয়েছে। তখন কাইছার মিয়ার পরিবার পুলিশকে জানায়, ঢাকার আদালতে কাইছার মিয়ার বিরেুদ্ধে কোন মামলা হয়নি। অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে এডরুক কোম্পানি মামলা করেছেন বারবাকিয়া ইউনিয়নের জালিয়াকাটা গ্রামের জাফর আহমদের পুত্র মোহাম্মদ কাইছারের বিরুদ্ধে। এখন মামলার প্রকৃত আসামীকে গ্রেফতার না করে অন্যায়ভাবে কাইছার মিয়াকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এরপরেও কাইছার মিয়ার পরিবারের সদস্যদের কোন কথাই শুনেনি পুলিশ। ৫ মার্চ রাত ৮টা থেকে এ নাগাড়ে পরদিন দুপুর দেড়টা পর্যন্ত তাকে থানা হাজতে আটকে রাখা হয়। এরপর ৬ মার্চ পেকুয়া থানা পুলিশ তাকে চকরিয়া সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করেন। আদালতে শুনানি শেষে কাইছার মিয়ার জামিন মঞ্জুর করেন।
আদালত থেকে জামিন পেয়ে ৬ মার্চ সন্ধ্যায় এ প্রতিবেদককে কান্নাজড়িত কন্ঠে জানান, আমার বিরুদ্ধে কোন মামলা নাই। শুধুমাত্র নামের মিল থাকায় অন্যজনের নামে থাকা মামলায় অহেতুক হয়রানীর উদ্দেশ্যে আমাকে গ্রেফতার করে ১৭ ঘন্টা আটকে রেখেছিল পুলিশ। পেকুয়া থানার এএসআই জয়নালকে অনেক বুঝালেও আমার ও আমার পরিবারের কোন কথা শুনেনি। থানায় নেওয়ার পর ওই পুলিশ কর্মকর্তা আমার কাছ থেকে মোটা অংকের ঘুষ দাবী করেছে। তার দাবীকৃত ঘুষ দিতে ব্যর্থ হওয়ায় আমাকে অন্যায়ভাবে আদালতে সোপর্দ্দ করেছে। আমি কোন অপরাধ করিনাই। আমাকে হয়রানী করতেই ১৭ ঘন্টা পেকুয়া থানা হাজতে আটকে রাখা হয়েছিলঅ। আমি এর বিচার চাই।
পাঠকের মতামত: