ঢাকা,বৃহস্পতিবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪

পেকুয়ায় কোটি টাকা হাতিয়ে নিল চেয়ারম্যান!

oniom_1পেকুয়া প্রতিনিধি :::

পেকুয়ায় পুর্নবাসন খাতে সহায়তার উদ্যেগ নিয়েছেন সরকার। ক্যাটাগরি ওয়ারি উপকারভোগি নির্ধারনের জন্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার অনুকুলে চিঠি প্রেরন করেছেন সংশ্লিষ্ট অধিদপ্তর। প্রেরিত এসব চিঠির অনুবলে ইউএনও’র কার্যালয় থেকে উপকারভোগির তালিকা প্রস্তুত করার জন্য ইতিমধ্যে পেকুয়ার সাত ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান বরাবর অবহিতকরন পত্র প্রেরন করা হয়েছে। জানা গেছে সবার জন্য বাসস্থান নিশ্চিত করার জন্য সারা দেশে গৃহহীনদের তালিকা প্রস্তুত করছে সরকার। এরই অংশ হিসেবে পেকুয়া উপজেলায় ওই কার্যক্রমের আওতায় তৈরি হচ্ছে তালিকা।

 সবার জন্য বাসস্থান নিশ্চিত করার লক্ষে প্রধান মন্ত্রীর আশ্রায়ণ-২ প্রকল্পের আওতায় উপকারভোগি বাছাই ও তালিকা প্রস্তুতির জন্য প্রধান মন্ত্রীর কার্যালয় তেজগাঁও, ঢাকার প্রকল্প পরিচালক (অতিরিক্ত সচিব)মো.জহিরুল হক স্বাক্ষরিত একটি চিঠি চলতি বছরের গত ৩মে জেলা প্রশাসক কক্সবাজার বরাবর প্রেরন করে। যার স্মারক নং-০৩.৭০৩.০১৪.০০.০০.১৩৩২.২০১৬-৮৮। ওই চিঠির প্রেক্ষিতে রেভিনিউ ডেপুটি কালেক্টর কক্সবাজার এবিএম এহছানুল মামুন স্বাক্ষরিত অপর একটি চিঠি ইউএনও পেকুয়া বরাবর গত ২২মে প্রেরন করেন। যার স্মারক নং-০৫.২০.২২০০.১২৮.০৯.০০১.২০১৬-৬২৬। সুত্রের আলোকে পেকুয়ার সহকারি কমিশনার (ভুমি) ও ইউএনও মো.মারুফুর রশিদ খান উপকারভোগি নির্ধারনের জন্য পেকুয়ার ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান গনের নিকট অবহিতকরন পত্র প্রেরন করেন। সংযুক্ত অধিদপ্তরের চিঠিসহ অবহিত পত্রে ইউএনও ওই চিঠি প্রত্যেক ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানগনকে তিন ক্যাটাগরি উপকারভোগির তালিকা প্রস্তুতির জন্য তাগিদ দেয়া হয়েছে।

 তথ্যসুত্রে জানা গেছে ওই প্রকল্পে ¯-স্ব ইউনিয়নে চেয়ারম্যান ও একজন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও একজন উপজেলা অধিদপ্তরের ইউএনও মনোনীত কর্মকর্তা কমিটিতে অর্ন্তভুক্ত হবেন। গৃহনির্মান খাতে পুর্নবাসনের জন্য তিন ক্যাটাগরির উপকার ভোগি বাছাই করার জন্য নির্দেশনা রয়েছে। যার কোন জমি ও ঘর নেই তাকে আশ্রয়ন প্রকল্পের ব্যারাকে করা হবে পুর্নবাসন, যার ১থেকে ১০শতাংশ জমি আছে কিন্তু ঘর নেই অথবা জরাজীর্ণ ঘরে বসবাস করে তাকে তার নিজ জমিতে ঘর র্নিমান করে দেয়ার ব্যবস্থা করবে সরকার ও যার কোন জমি নেই, তিনি কমপক্ষে এক শতাংশ জমি দান সুত্রে অথবা অন্য কোনভাবে প্রাপ্ত হলে ওই জমিতে তাকে ঘর নির্মান করে দেবে সরকার এ তিন ক্যাটাগরি উপকারভোগিকে ওই প্রকল্পে সর্বাধিক প্রধান্য দেয়া হয়েছে। এদিকে ওই প্রকল্পের আওতায় উপজেলার রাজাখালী ইউনিয়নে উপকারভোগির তালিকা তৈরির কাজ চলছে। তবে টাকা আদায়ের মহোৎসব তৈরি হয়েছে ওই ইউনিয়নে। সরকারি ঘর দেয়ার কথা বলে স্থানীয় ইউপির চেয়ারম্যান ছৈয়দনুর হাতিয়ে নিয়েছেন কোটি টাকা।

 অভিযোগ উঠেছে সরকারের অধিদপ্তর থেকে প্রেরিত চিঠি জনগনকে দেখিয়ে চেয়ারম্যান ছৈয়দনুর কৌশলে জনপ্রতি ৫হাজার দু’শত টাকা ও একটি অলিখিত ননজুডিশিয়াল ষ্ট্যাম্প নেন উপকারভোগিদের কাছ থেকে। গৃহনির্মান সহায়তায় সরকার তিন লাখ টাকা দিচ্ছে এ আগাম ঘোষনা দিয়ে ওই চেয়ারম্যান তার অনুগত লোক দিয়ে কয়েক দিনের ব্যবধানে প্রায় কোটি টাকা রাজাখালী ইউনিয়ন থেকে হাতিয়ে নেয়।

 নাম প্রকাশ করার শর্তে রাজাখালী ইউপির একাধিক সদস্য জানিয়েছেন চিঠির বিষয়টি আমরা শুনেছি। তবে চেয়ারম্যান বিষয়টি নিয়ে আমাদের সাথে শেয়ার করেননি। মাতবর পাড়ার আনোয়ার, শামসুল আলম, মিয়াপাড়ার পুতিন্না, রায়বাপের পাড়ার রাজামিয়া, সুন্দরীপাড়ার আফজল কবির, চেয়ারম্যানের মেয়ের জামাই বাদশাহসহ ১০-১২জন লোক মিলে প্রতিটি ওয়ার্ড় থেকে চেয়ারম্যানের কথা বলে প্রত্যেক জনের কাছ থেকে নগদ ৫হাজার ২শত টাকা ও একটি ষ্ট্যাম্প নেয়। বিশ্বাস যোগাতে ওই ব্যক্তিরা খালি ষ্ট্যাম্প ও ষ্ট্যম্প লিপিবদ্ধ করার কথা বলে অতিরিক্ত দু’শত টাকা নেয়। ঘরের জন্য নিয়েছেন ৫হাজার টাকা। আইডি কার্ডের ফটোকপি ও ছবিও নেন তারা।

 রাজাখালী ইউপির এক সদস্য জানায় আমার ওয়ার্ড়ে রাজামিয়া নামের এক ব্যক্তির মাধ্যমে চেয়ারম্যান টাকা ও ষ্ট্যাম্প নিয়েছে উপকারভোগিদের কাছ থেকে। ইউপি সদস্যরা জানিয়েছেন রাজাখালীর প্রত্যেক ওয়ার্ড় থেকে চেয়ারম্যান এভাবে কোটি টাকা ঘর দেয়ার কথা বলে আদায় করেছেন। চেয়ারম্যানের নাম ভাঙ্গিয়ে টাকা আদায়ের কথা আমরা জনপ্রতিনিধিরা চেয়ারম্যানকে অবহিত করেছিলাম। কিন্তু তিনি কৌশলে এড়িয়ে যান। বিষয়টি তিনি শুনতে চাননি। স্থানীয়রা জানায় চেয়ারম্যান ছৈয়দনুর ঘর দেয়ার কথা বলে তার নিজস্ব লোক দিয়ে প্রায় দেড় হাজার মানুষের কাছ থেকে টাকা নিয়েছেন।

 এ ব্যাপারে রাজাখালী ইউপির চেয়ারম্যান ছৈয়দনুর টাকা নেয়ার কথা অস্বীকার করেছেন। তিনি বলেন টাকা নিয়েছি এমন কোন প্রমান কেউ দিতে পারবেনা। রাজামিয়ার সাথে মেম্বারের বিরোধ আছে। তাই তিনি তার কথা বলেছেন। আমি হচ্ছি ডিসটিক শেয়ানা। আমি খুব ধুর্ত। কে কি করবে আমার জানা আছে।

 পেকুয়ার ইউএনও মো.মারুফুর রশিদ খান জানান বিষয়টি স্থানীয়রা আমাকে জানিয়েছেন। ওয়াকফ এস্টেটের একজন জমিদার আমাকে মুঠোফোনে টাকা নেয়ার বিষয়টি জানান। টাকা নেয়ার কোন এখতিয়ার নেই। জনগনকে সচেতন করতে কাউকে সাথে কোন ধরনের টাকা পয়সার লেনদেন না করতে আমি ইতিমধ্যে রাজাখালীসহ স্ব-স্ব ইউনিয়নে মাইকিং করিয়েছি। বিষযটি তদন্ত করা হবে। ভুক্তভোগিরা জানালে দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

পাঠকের মতামত: