ইমরান হোসাইন, পেকুয়া
মগনামা বেড়িবাঁধের জন্য সরবরাহ করা পাথরের অতিরিক্ত বোঝাই গাড়ি চলাচলে নাজুক অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে বরইতলি-মগনামা সড়কের পেকুয়া সদর ইউনিয়ন অংশে। ইউনিয়নের সাবেক গুলদি থেকে গোঁয়াখালী চরপাড়া পর্যন্ত প্রায় দুই কিলোমিটার সড়কে তিন শতাধিক ছোট-বড় গর্ত সৃষ্টি হয়েছে। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়ছেন পথচারী ও গাড়ি চালকরা। সড়কের এই অংশে পেকুয়া উপজেলা সদর ও প্রধান বাণিজ্যিক কেন্দ্র ‘পেকুয়া বাজারের’ অবস্থান। তাই ভোগান্তি একটু বেশি মাত্রায় পোহাতে হচ্ছে সড়কটি নিয়মিত ব্যবহারকারী প্রায় ২০হাজার মানুষের।
সরেজমিন পরিদর্শনে দেখা যায়, বিগত বর্ষা মৌসুমের শুরুতে মগনামা বেড়িবাঁধের জন্য সরবরাহ করা পাথরের অতিরিক্ত বোঝাই ২৮টন ওজনের ট্রাক গাড়ি চলাচল করায় এসব গর্তের সৃষ্টি হয়। বৃষ্টি বাড়ার সাথে সাথে গর্তগুলোর আয়তনও বাড়তে থাকে। তৎকালীন সময়ে পেকুয়া বাজারের ব্যবসায়ী ও একটি সেচ্চাসেবী সংগঠনের আবেদনের প্রেক্ষিতে ইট, সুরকি দিয়ে নামেমাত্র সড়ক মেরামত করেছিল সড়ক ও জনপদ বিভাগ। অতিরিক্ত পাথর বোঝাই গাড়ি চলাচল করতে না পারে মত রাস্তার খুঁটি গেড়ে ব্যবস্থা গ্রহণও করা হয়েছিল সে সময়। কিন্তু তৎকালীন সে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বদলি হয়ে অনত্র চলে গিয়ে নতুন কর্মকর্তা স্থলিবিসিক্ত হলে তিনি এব্যাপারে আর কোন উদ্যোগ নেয়নি। তাই দিগুণ উৎসাহে চলাচল করতে শুরু করে অতিরিক্ত পাথর বোঝাই গাড়িগুলো।
এদিকে গর্তগুলো এখন প্রায় পুকুরের আকার ধারণ করেছে। যেখানে নিয়মিত আটকা পড়ছে অতিরিক্ত মালামাল বোঝাই গাড়ি। গত এক সপ্তাহে বেড়িবাঁধের জন্য অতিরিক্ত পাথর বোঝাই প্রায় ১০টির অধিক ট্রাক গাড়ি আটকে পড়ে এ সড়কে। এতে যান চলাচল ব্যাপকভাবে ব্যাহত হচ্ছে প্রতিনিয়ত। কিন্তু অতিরিক্ত পাথর বোঝাই এসব গাড়ি নাজুক এই সড়কে চলাচল অব্যাহত থাকলেও দৃশ্যত কোন ব্যবস্থা নিচ্ছেনা সড়ক ও জনপদ বিভাগ বা স্থানীয় প্রশাসন। তাই বর্তমান সময়ে চলাচলের যোগ্যতা হারিয়েছে সড়কের ওই অংশটি।
এব্যাপারে সড়ক ও জনপদ বিভাগের চকরিয়া কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী রানা প্রিয় বড়ুয়া বলেন, এ বিষয়ে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে পেকুয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বরাবরে লিখিত আবেদন ও চিঠি দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তারা এই অতিরিক্ত পাথর বোঝাই ট্রাক চলাচল বন্ধে আন্তরিক নয়। আমাদের হাতে লাঠিও নেই, জনবলও নেই। তাই আমাদের করার কিছু নেই। সংস্কারের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা এ সড়ক সংস্কার করবো না। অতিরিক্ত পাথর বোঝাই ট্রাক চলাচল অব্যাহত থাকলে সংস্কার করে কি হবে?
এদিকে বিকল্প কোন সড়ক না থাকায় এ সড়ক দিয়ে চলাচল করতে গিয়ে নজিরবিহীন দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে পেকুয়া ও কুতুবদিয়া উপজেলার কয়েক লাখ মানুষকে। পেকুয়া বাজারের পশ্চিম ও পূর্ব পাশে প্রায় দুই কিলোমিটার সড়ক জুড়ে তৈরি হয়েছে মরণফাঁদ। যেকোন সময় প্রাণহানী দুর্ঘটনার শংকায় ভুগছেন পথচারীরা। এছাড়া নাজুক এ সড়ক থেকে সৃষ্ঠ ধুলাবালির কারণে পায়ে হেটে চলাচলও দুরহ হয়ে উঠেছে। এমনকি ধুলাবালির কারণে বন্ধ হয়ে গেছে আশেপাশের খাবার দোকানগুলো।
পেকুয়া বাজারের ব্যবসায়ীরা বলেন, সড়কের বেহাল দশার কারণে পেকুয়া বাজারে বিরূপ প্রভাব পড়ছে। কমেছে ব্যবসা বাণিজ্য। সড়কটি সংস্কারে জরুরিভাবে কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করেছেন ব্যবসায়ীরা।
সেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘সড়ক ও রাস্তা বাচাও’এর সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম বাবুল বলেন, এ সড়ক দিয়ে পেকুয়ার মানুষ ছাড়াও কুতুবদিয়ার বাসিন্দারা নিয়মিত যাতায়াত করে থাকে। এছাড়া পেকুয়া বাজারটি উপকূলীয় অঞ্চলের প্রধান বাণিজ্যিক কেন্দ্র হওয়ায় এখানে মহেশখালী, বাঁশখালী ও কুতুবদিয়ার লোকজন কেনাকাটা করতে আসেন। অথচ এ বাজারে যাতায়তের প্রধান সড়কটির অবস্থা নাজুক হয়ে পড়েছে। এ অবস্থা থেকে উত্তরণে আমরা সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করছি।
পেকুয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জয়নাল আবদিন বলেন, সড়কের অবস্থা সম্পর্কে সড়ক ও জনপথ বিভাগকে জানানো হয়েছে। এ ব্যাপারে তারা দ্রুত ব্যবস্থা নেবেন।
পাঠকের মতামত: