ঢাকা,শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৪

পেকুয়ার আয়তন:বঙ্গোপসাগর ও মাতামুহুরী নদী গর্র্ভে বিলীন হচ্ছে মূলভূখন্ড

ggএম.জুবাইদ. পেকুয়া:

বঙ্গোপসাগরের বেড়িবাধ ধ্বংস হয়ে এখন মূল ভ’খন্ড গিলে খাওয়ায় দিন দিন ছোট হয়ে আসছে পেকুয়ার আয়তন। সাগর গর্ভে ও মাতামুহুরী নদীর গর্ভে বিলীন হয়ে যাচেছ পেকুয়ার বঙ্গোপসাগর তীরবর্তী ৩টি ইউনিয়ন। গত ১বছরেই ৩ইউনিয়নে ৩০টির মতো বসতঘর, একটি স্কুল একটি মসজিদ সাগর ও নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। মগনামা উজানটিয়ার অন্তত ৫শ সাগর তীরবর্তী পরিবার সাগরের ভাঙ্গনের সাথে পেওে না ওঠেই উপজেলার বারবাকিয়া শিলখালীর পাহাড়ি অঞ্চলে স্থায়ী বসতি স্থাপন করেছে । ১৯৯১সালের প্রলয়নকারী ঘুর্ণিঝড়ের পর সৌদি ও বিশ্ব ব্যাংকের অর্থায়নে বেড়িবাধ নির্মাণের পর থেকে দীর্ঘ ২৫বছর ধরে সমুদ্রের বেড়িবাধ সংস্কার না করায় ক্রমান্বয়ে মূলভুমি সাগর গর্ভে মিশে যাওয়ায় উপজেলার মগনামা ও উজানটিয়া ইউনিয়নের অধিবাসীদের মধ্যে বসতঘর রক্ষা ও উপজীবিকা সংকটের সৃষ্টি হয়েছে। পেকুয়া সদও ইউনিয়নের বৃহত্তর দক্ষিণ অংশ পূর্বাংশ ও পশ্চিমাংশ মাতামুহুরী নদীর গর্ভে ক্ষয়ে যাচ্ছে। বন্যার ¯্রােত থেকে ও জোয়ারের পানি থেকে রক্ষার জন্যে জরুরী ভিত্তিতে বেড়িবাধ সংস্কার করতে গিয়ে নদী থেকে মূল ভুখন্ডে এসেই বাধ দেয়ায় এ সংকটের সৃষ্টি হয়েছে। পেকুয়া পূর্ব বাঘগুজারা রাবারড্যাম থেকে দক্ষিণ মেহেরনামা বাজার পর্যন্ত মাতামুহুরী নদীর চরে গড়ে ওঠা ১০টির মত বসতঘর নদী গর্ভে বিলীন হয়েগেছে। শুষ্ক মৌসুমে বসতঘরে সাগরের পানি হানা না দিলেও লবণ মাঠ চিংড়িঘের সহ ফসলী জমিতে জোয়ার ভাটার সৃষ্টি হওয়ায় মৌসুমী চাষাবাদ বন্ধ থাকায় শ্রমজীবি মানুষের হাহাকারের সাথে মানবেতর জীবন যাপনের শিকার হচ্ছে সর্বস্তরের মানুষ। এদুটি ইউনিয়নের বঙ্গোপসাগর তীরবর্তী প্রায় ৭.৫কিলোমিটার বেড়িবাধ ভেঙ্গে সাগরের সাথে একাকার হয়েগেছে। প্রতি বর্ষা মৌসুমে ইউনিয়ন দুটি জোয়ারভাটার শিকার হলেও গত দুবছর ধরে শুষ্কমৌসুমেও জোয়ারের পানি প্লাবনাকারে লোকালয়ে ওঠে যাচ্ছে। সরকারের পক্ষ থেকে ঠেক সই বেড়িবাধ তৈরী না করায় লবণ চাষীরা নিজস্ব অর্থায়নে মূল বেড়িবাধ থেকে অনেক ভিতরে গিয়ে আইল তৈরী করে লবণ চাষ করছে। সরজমিনে গিয়ে দেখা যায় বেড়িবাধ রক্ষা করার জন্যে উজানটিয়ার ঠেক পাড়ায় প্রায় ১৫ একর জমি সাগরের দিকে ঠেলে দিয়ে বেড়িবাধ নির্মাণ করা হয়েছিল বর্তমানে ওই বেড়িবাধটিও ভেঙ্গে গেছে এখন বেড়িবাধ দিয়ে সাগরের পানি থেকে জনবসতি ও চাষাবাদ চিংড়িচাষ রক্ষা করতে হলে অবশ্যই আরো নতুন ভূখন্ড দখল করে পুণরায় বেড়িবাধ নির্মাণ করতে হবে। উজানটিয়া নিবাসী কক্সবাজার জর্জ কোর্টের আইনজীবি মীর মোশারফ হোসেন টিটু বলেন, উজানটিয়া ঠেকপাড়ায় একটি মসজিদ ও ফোররকানিয়া, কারিতাস পরিচালিত একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও ২০টির মত বসতবাড়ি সম্পূর্ণ সাগর গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। একই ভাবে মগনামার কাকপাড়া পয়েন্টে ১শ বছরের পুরাতন জামে মসজিদ মাজার সংলগ্ন কবরস্থান সাগরের দিকে ঠেলে দিয়ে সাগরের পানি আটকানোর জন্যে ৩শ গজ ভিতরে গিয়ে বেড়িবাধ নির্মান করা হয়েছে। পুরাতন বেড়িবাধ ধ্বংস হয়ে যাওয়ায় বেড়িবাধের ওপর বা আশপাশে যে সব বসতি স্থাপিত হয়েছিল তা ইতিমধ্যে অন্যত্রে চলে গেছে। স্থানীয় লোকজন জানিয়েছে মগনামা উজানটিয়ার লোকজনের জন্যে নয় এবেড়িবাধ পুরো উপজেলার জন্যে অতিগুরুত্বপূর্ণ। এদুটি ইউনিয়নের বেড়িবাধ না থাকায় সাগরের লবাণাক্ত পানি উপজেলার অন্য ৫টি ইউনিয়নে পর্যন্ত গিয়ে পৌছে প্রতিমৌসুমে ফসলের ব্যাপক ক্ষতি সাধিত হয়। চলতি বছর দফায় দফায় বন্যা ও ঘুর্ণিঝড় রুয়ানুর কারণে মৎস্য, লবণ ও ধান চাষাবাদে হাজার কোটি টাকার ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে পেকুয়ার দুলক্ষ মানুষ। পেকুয়া উপজেলায় ১১৭ কিলোমিটার পানি উন্নয়ন বোর্ডের বেড়িবাধ রয়েছে। বলতে গেলে সব বেড়িবাধও চরম ঝুকিপূর্ণ। অতিঝুকিপূর্ণ চিহ্নিত করে পেকুয়া সদরের পূর্বমেহেরনামা থেকে সিরাদিয়া পর্যন্ত, আর মগনামা শরৎঘোনা থেকে লঞ্চঘাট, লঞ্চঘাটের দক্ষিণ অংশ থেকে কাকপাড়ার ঠেক পর্যন্ত উজানটিয়া ঘোষাল পাড়া থেকে পূর্ব উজানটিয়া ঠেকপাড়া পর্যন্ত বেড়িবাধ স¦াভাবিক জোয়ারের পানিতে তলিয়ে যায়। ভেঙ্গে গেলে জরুরী বরাদ্দের তহবিল থেকে বার বার বালির বাধের মতো বেড়িবাধ করে দেয়া হয় যা নির্মাণের পরের জোঁতে আবারো তলিয়ে গিয়ে সর্বস্তরের লোকজন বিপাকে পড়ে। এবছর চিংড়ি চাষতো ভেসেগেছে। । মাঠে ধান ক্ষেতের অবস্থাও তেমন ভালনা। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা বার বার চেষ্ঠা তদবির করে জরুরী বরাদ্দ নিয়ে বেড়িবাধ নির্মাণ করার চেষ্ঠা করলেও রাজনৈতিক বিবেচনায় কাজ দেয়ায় নাম মাত্র কাজ করে সংশ্লিষ্ঠ ব্যক্তিরা টাকাগুলো লুটপাট করে চলে যায়। সরকারের উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধি দল কয়েক দফা পরিদর্শন করে গেলেও বরাদ্দ ছাড় না পাওয়ায় বেড়িবাধ নির্মাণ করা সম্ভব হ্েচছনা। এব্যাপারে পেকুয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শাফায়েত আজিজ রাজুর জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিগত ৭/৮বছর ধরে একজন জনপ্রতিনিধি হিসেবে বেড়িবাধের সাথে যুদ্ধ করে আসছি। কখনো এলাকার লোকজন নিয়ে আবার কখনো অপ্রতুল বরাদ্দ নিয়ে আবার কখনো ব্যক্তিগত তহবিল সংগ্রহ করে বেড়িবাধ রক্ষার চেষ্ঠা করে আসছি। যা সাগরের বালির বাধের মতো উল্লেখ করে তিনি বলেন, পেকুয়াকে রক্ষা করতে হলে ঠেকসই বেড়িবাধ নির্মাণ করতে হবে এবং তা এসুষ্ক মৌসুমে করতে না পারলে দূ:খ দূ:খই থেকে যাবে।

পাঠকের মতামত: