ঢাকা,বৃহস্পতিবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪

চকরিয়ার বিরিয়ানি’তে বিষ দিয়ে পেকুযায় দুই শিশু হত্যাকারী পাষন্ড পিতা প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে : মামলা ঘোলাটে করতে তদবির

মোঃ নিজাম উদ্দিন, চকরিয়া :
কক্সবাজার জেলার চকরিয়ার এই চাঞ্চল্যকর ঘটনায় আইনের ফটক দিয়ে বেরিয়ে যাওয়ার অপচেষ্টা চালাচ্ছে হত্যাকারী ও মামলার প্রধান আসামী পাষন্ড পিতা মিজানুল হক। এতেকরে হত্যাকারী এবং প্রকৃত আসামীরা পার পেয়ে যাওয়ার আশংকা দেখা দিয়েছে। মৃতদেহের ময়নাতদন্তকারী ডাক্তার প্রতিবেদনে খুনীদের বাঁচিয়ে রাখতে প্রকৃত ঘটনাকে আড়াল করে মিথ্যার আশ্রয় নেওয়া হয়েছে এবং এই প্রতিবেদনের বিরুদ্ধে আদালতে না রাজী দেন মামলার বাদী নিহত শিশুদ্বয়ের মাতা ইয়াছমিন আক্তার।
তিনি আরো জানায় হত্যাকান্ড পরবর্তী সুরতহাল রিপোর্ট, আদালতে দাখিলকৃত পুলিশ প্রতিবেদন ও ময়না তদন্তের প্রতিবেদনে দেখা গেছে বেশ অসামঞ্জস্য।
এদিকে উক্ত ময়না তদন্তের প্রতিবেদন নিয়ে জনমনে বিভিন্ন প্রশ্নের সৃষ্টি হয়েছে।
ঘটনার আট মাস পরে ময়না তদন্তের ওই রিপোর্টে মামলার দীক অন্যদিকে প্রবাহিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে এবং পার পেতে যাচ্ছে প্রকৃত আসামী।
অভিযোগে জানা গেছে, চকরিয়া উপজেলার ডুলাহাজারা ইউনিয়নের পশ্চিম মাইজপাড়া গ্রামের মোজাম্মেল হকের কন্যা ইয়াসমিন আক্তার বুলুর সাথে ২০০৪ সালে বিয়ে হয় পেকুয়া উপজেলার পূর্ব মেহেরনামা গ্রামের কালু সিকদারের পুত্র মিজানুল হকের। বিয়ের পর সংসারে দুটি কন্যা সন্তান মিনজিলা আক্তার মাহি (৯) ও ইয়াছমিন আক্তার মিলি (৩) জন্ম নেয়।
এরইমধ্যে এক মহিলার সঙ্গে পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়ে স্বামী মিজানুল হক। এনিয়ে প্রতিনিয়ত শারিরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতন চালিয়ে আসছিল স্ত্রী বুলুকে। এই অবস্থায় ২০১৫ সালের ১৩ অক্টোবর রাতে চকরিয়া পৌরশহর চিরিঙ্গার একটি বিরিয়ানি হাউস থেকে তিনটি বিরিয়ানির প্যাকেট নিয়ে সেখানে বিষ মিশিয়ে দেয় স্বামী মিজান। বাড়িতে গিয়ে স্ত্রী ও দুই কন্যা সন্তানকে প্রাণে হত্যার জন্য বিষ মেশানো সেই বিরিয়ানি জোরপূর্বক খাইয়ে দেয়।
দুই শিশুকন্যার মা ও মামলার বাদী ইয়াছমিন আক্তার বুলু বলেন, ‘ওই রাতে দুই শিশু ঘুমিয়ে পড়েছিল, কিন্তু স্বামী মিজান ইচ্ছার বিরুদ্ধে দুই শিশুকে ঘুম থেকে জাগিয়ে জোর করে বিরিয়ানি খাইয়ে দেয়। এর পর পরই বমি ও ডায়রিয়ার মতো পরিস্থিতি হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে শিশু কন্যা মাহি আর মিলি। অবস্থা আশঙ্কাজনক দেখে পরিবারের সদস্যরা আমাদের চকরিয়া পৌরশহরের জম জম হাসপাতালে ভর্তি করায়। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক মিলিকে মৃত ঘোষণা করে এবং মাহি ও আমাকে চট্টগ্রাম মেডিক্যার কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করে। ওই রাতেই মারা যায় মাহিও। বয়স বেশি হওয়ায় প্রাণে বেঁচে যাই আমি। অনেকটা সুস্থ হওয়ার পর স্বামীর বিরুদ্ধে পেকুয়া থানায় মামলা করতে গেলে মামলা না নিয়ে ফিরিয়ে দেন ওসি। এর পর ২৬ অক্টোবর চকরিয়া উপজেলা সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে নালিশী অভিযোগ দিলে তা মামলা হিসেবে নেওয়ার জন্য পেকুয়া থানার ওসিকে নির্দেশ দেন আদালত।’
বাদী ইয়াছমিন আক্তার বুলু আরো বলেন, ‘ময়না নামের এক মহিলার সঙ্গে পরকীয়ায় আসক্ত হয়ে দুই শিশুসন্তানসহ আমাদের তিনজনকে হত্যা করতে লম্পট স্বামী মিজানুল হক ও তার চারজন সহযোগী পেকুয়ার বারবাকিয়ার মনছুরুল হক, বাঘগুজারার মুজিবুল হক, মাহমুদুল হক এবং টেকনাফের আউলিয়াবাদ এলাকার আজিজুল হক পরিকল্পনা করে। এরই অংশ হিসেবে আমাদের হত্যা করতে বিরিয়ানির সঙ্গে বিষ মেশায় তারা।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও পেকুয়া থানার ওসি বলেন, ‘শিশু দুটি থেকে ইয়াসমিন আক্তার মিলি (৩) মারা যাওয়ার কারণ ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন পাওয়া গেছে তবে ওই প্রতিবেদনে খাদ্যে বিষের কোন অস্থিত্ব পাওয়া যায়নি। খাদ্য বিষক্রিয়ায় শিশুটি মারা গেছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
উল্লেখ্য কক্সবাজার সদর হাসপাতালের ময়না তদন্তকারী মেডিকেল অফিসার ডাঃ আব্দুস ছালামের বিরূদ্ধে বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ প্রমানিত হয়েছিল। যা গত ২৮ মার্চ বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় প্রাকাশিত হয়। ভুয়া জখমী সনদ প্রদান, জখমী সনদ জালিয়াতি, ও চিকিৎসকের স্বাক্ষর নকল সহ একজন ডাক্তারের স্বাক্ষরে সনদ দেয়ার বিধান না থাকলেও তিনি নিজেই অপর দুটি স্বক্ষর জালিয়াতি করে অহরহ সনদ প্রদান করে আসছিলেন। ফলে বারে বারে প্রকৃত অপরাধীরা থাকে যায় ধরা ছুঁয়ার বাইরে।
পরিকল্পিত হত্যাকান্ডের প্রধান আসামী প্রভাবশালী হওয়ায় নিজেকে বাঁচিয়ে রাখতে সত্যকে মিথ্যা দিয়ে ঢেকে দেওয়ার বিভিন্ন অপচেষ্টা চালাচ্ছেন বলে দাবি করেন স্ত্রী ইয়াছমিন আক্তার বুলু। পরকিয়া আসক্ত স্বামী ও তার স্বীয় দুই শিশু সন্তানকে খাবারে বিষ মিশিয়ে হত্যাকান্ডের প্রধান আসামী পাষন্ড পিতা মিজানুল হকের সর্বোচ্চ শাস্তি দাবী করেন মামলার বাদী।

পাঠকের মতামত: