নিজস্ব প্রতিবেদক, কক্সবাজার :::
কক্সবাজারের ঈদগাঁও-ঈদগড়-বাইশারী সড়কের দৈর্ঘ্য ১৭ কিলোমিটার। সড়কটি চলে গেছে পাহাড়ি জনপদের চার ইউনিয়নের ওপর দিয়ে। প্রায় তিন লাখ মানুষের চলাচলের এই সড়কটি সংস্কার হচ্ছে না দীর্ঘদিন। এর ফলে সড়কজুড়ে সৃষ্টি হয়েছে অসংখ্য গর্ত। ভাঙা সড়কে চলাচলে ভোগান্তিতে পড়ছেন যাত্রীরা।
কক্সবাজার সদর উপজেলার ঈদগাঁও থেকে রামু উপজেলার ঈদগড় বাজার পর্যন্ত সড়কের দৈর্ঘ্য ১০ কিলোমিটার। সেখান থেকে বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির বাইশারী বাজার পর্যন্ত সড়ক আছে আরও সাত কিলোমিটার। এর মধ্যে ঈদগাঁও স্টেশন থেকে গজালিয়া পর্যন্ত অংশটি ঈদগাঁও ইউনিয়নে, গজালিয়া থেকে ঈদগড়ের ঢালা পর্যন্ত অংশটি ইসলামাবাদে, ঈদগড় ঢালা থেকে ছগিরাকাটা-ব্যাঙডোবার মুখ পর্যন্ত ঈদগড়ে ও বাকি প্রায় তিন কিলোমিটার পড়েছে বাইশারী ইউনিয়নের আওতায়।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগ (এলজিইডি) সূত্র জানায়, ২০১৫ সালে সড়কটি সংস্কারের জন্য দরপত্র আহ্বান করা হয়। কাজের জন্য ঠিকাদার নিয়োগ করে কার্যাদেশও দেওয়া হয়। কিন্তু ওই সালের জুন ও জুলাই মাসে কয়েক দফা বন্যার কবলে পড়ে সড়ক ভেঙে যাওয়ায় সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার সংস্কারকাজে হাত দেননি।
সম্প্রতি সরেজমিনে দেখা গেছে, সড়কের ঈদগাঁও পালপাড়া থেকে শুরু হয়ে চৌধুরীপাড়া ও ভোমরিয়াঘোনা পর্যন্ত প্রায় ১০ কিলোমিটারে ছোট-বড় গর্তে ভরা। ভাঙনের কারণে হাজী শফিক দাখিল মাদ্রাসার রাস্তার মাথায় ৫০ ফুটের মতো সড়ক ভেঙে ছড়ায় পরিণত হয়েছে। এটি পারাপারে ব্যবহার করা হচ্ছে নড়বড়ে বাঁশের সাঁকো। সাঁকো দিয়ে লোকজন চলাচল করলেও গাড়ি চলে নিচের সড়ক দিয়ে।
যাত্রীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ভাঙাচোরা এই সড়কে চলাচলের সময় প্রায়ই গর্তে পড়ে উল্টে যায় গাড়ি। তা ছাড়া সড়কে চলাচলকারী লোকজনের মধ্যে ৯০ শতাংশ কৃষক। এই সড়ক দিয়ে কৃষকেরা ধান-চাল ও শাকসবজি নিয়ে যান কক্সবাজার শহরে।
ঈদগড় ইউনিয়নের কোনারপাড়ার কৃষক নুরুল আলম (৬৫) চকরিয়া নিউজকে বলেন, ৩৫ একর জমিতে তিনি ধান চাষ করেন। উৎপাদিত বিপুল পরিমাণ ধান ঈদগড়ের বাইরে সরবরাহ করতে হচ্ছে। কিন্তু ভাঙা সড়কের কারণে পরিবহন খরচও বেড়ে গেছে।
ঈদগড় ইউনিয়নের রাজঘাট এলাকার ব্যবসায়ী আবুল কাশেম (৩৪) চকরিয়া নিউজকে বলেন, দুই বছর ধরে সড়কটি চলাচলে অযোগ্য হয়ে পড়েছে। টানা কয়েক বছর পাহাড়ি ঢলের মাত্রা বেড়ে ভাঙনের কবলে পড়েছে সড়কের ভোমরিয়াঘোনাসহ বেশ কয়েকটি অংশ। কিছু অংশ নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। সুযোগটা কাজে লাগাচ্ছে অপরাধীরা। আগে গাড়িতে লুটপাট করতে হলে সড়কে ব্যারিকেড দিয়ে যানবাহন থামাতে হতো। এখন গর্তের কারণে এমনিতেই গাড়ি চলে কচ্ছপগতিতে।
এই সড়কে যাত্রী পরিবহন করে হিললাইন পরিবহন সার্ভিস। দুই বছর আগেও এই সড়কে শতাধিক বাস চলাচল করত। এখন ৮০ শতাংশ কমে গেছে।
হিললাইন পরিবহন মালিক সমিতির সভাপতি সাহাবউদ্দিন চকরিয়া নিউজকে বলেন, মালিক-চালক উভয়ে যাত্রীসেবা দিতে পারলেই খুশি। কিন্তু ভাঙা রাস্তার কারণে যাত্রী কমে গেছে। গত তিন বছরে অর্ধশতাধিক বাস নষ্ট হয়ে গেছে। যাত্রীদের নিরাপত্তার জন্য সন্ধ্যার পর ভাঙা সড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ রাখা হচ্ছে।
বাইশারী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আলম চকরিয়া নিউজকে বলেন, তিন মাস আগে বাইশারী বাজার পরিদর্শনে এসে পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী বীর বাহাদুর ভাঙা সড়কটি মেরামতের আশ্বাস দিয়েছেন। কিন্তু এখনো পর্যন্ত কাজ শুরু হয়নি। এলজিইডি কক্সবাজারের নির্বাহী প্রকৌশলী মনজুরুল আলম ছিদ্দিকী বলেন, ২০১৫ সালেই সড়কের ১০ কিলোমিটার অংশ সংস্কারের জন্য ৬ কোটি ৩৬ লাখ টাকা বরাদ্দ ছিল। কিন্তু কাজ শুরুর আগে বন্যার কবলে পড়ে ভাঙন বৃদ্ধি পাওয়ায় ব্যয় বেড়ে যায়। তখন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান আর কাজ শুরু করেনি। পরে আরও ৬ কোটি টাকা বরাদ্দ মঞ্জুর করে কাজের পরিধি বাড়ানো হয়। কিন্তু বৈরী আবহাওয়ার কারণে এত দিন কাজ করা যায়নি। এখন দ্রুত সময়ের মধ্যে সড়কটির সংস্কারকাজ শুরু হবে।
পাঠকের মতামত: