ঢাকা,শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪

সংসারের হাল ধরতে জীবন যুদ্ধে শিশুরা ঃ বাড়ছে শিশুশ্রম

aaaaaএম শফিউল আলম আজাদ, ঈদগাঁও ::

বাড়ছে ঝুঁকিপূর্ণ শিশু শ্রম। জীবিকার সন্ধানে কোমলমতী শিশুদেরকে অকালে হাতে তুলে নিতে হচ্ছে ঝুঁকিপূর্ণ কাজের চাপ। আর কেউ বা রিক্সা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করছে। অনেককেই দেখা যায়, ফার্নিচারের দোকানে কাঠমিস্ত্রি কিংবা তাদের হেলপার হিসাবে কাজ করতে। সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে নজর দিলে এরকম বহু চিত্র ভেসে আসে। তাদের সাথে কথা বলে জানা যায়, অনেকেই স্বেচ্ছায় এ পেশায় আসেনি। তাদের পরিবারের ভরণ-পোষণের মত কেউ না থাকায় বাধ্য হয়ে তাদেরকে এ ঝুঁকিপূর্ণ পেশায় নামতে হয়েছে। তাদের এ অসহায়তার সুযোগকে কাজে লাগিয়ে এক শ্রেণীর স্বার্থান্বেষী মহল অল্প বেতনে তাদের দিয়ে করিয়ে নিচ্ছে হাড়ভাঙ্গা কঠোর পরিশ্রম। এতে কারণে-অকারণে এসব কোমলমতি শিশুদের ভাগ্যে জোটছে শারীরিক, মানষিক ও শোষন সহ হরেক রকমের নির্যাতন। কখনো আবার বৈষম্যের শিকার ও হচ্ছে। শিক্ষার আলোর সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে শিশুরা। অভাবের তাড়না ও সংসারের অশান্তির কারণে পথকলি শিশুরা বাঁচার তাগিদে জীবিকার সন্ধানে নেমে পড়ে রাস্তায়। এক সময় পথভ্রষ্ট হয়ে চলে যায় টাকার রাজ্যে। ছোট্ট বয়সে সংসারের হাল ধরতে নেমে পড়ে জীবন যুদ্ধে এসব পথকলি শিশুরা। জানা যায়, প্রতি বছর পালিত হয় বিশ্ব শিশু শ্রম প্রতিরোধ দিবস। বিভিন্ন সরকারী বেসরকারী অনুষ্ঠানের মাধ্যমে শিশুদের অধিকার আদায়ের লক্ষে সচেতনতা বাড়ানোর বদৌলতে দিন ব্যাপী চলে নানা কর্মসূচী। ফলে বিশেষ করে সেমিনার সিম্পুজিয়াম থেকে সভায় একমত হয়ে এক বাক্যে শপথের মাধ্যমে শিশু শ্রম বন্ধের উদ্দ্যোগ নেওয়ার প্রতিশ্রুতি বদ্ধ হলেও সময়ের ব্যবধানে কেবল মাত্র দিনটি অতিবাহিত হওয়ার পর বাস্তবে তা মূল লক্ষে পৌছায় না। বর্তমানে শ্রম বাজারে কক্সবাজার সদরের ঈদগাঁওসহ জেলার বিভিন্ন স্থানে কোমলমতী শিশুদের শ্রমকাজে ব্যবহার করা হচ্ছে। বলতে গেলে, শোষকের কাজে শিশু শ্রম বিশেষ করে নিম্ন বিত্তদের দারিদ্রের অন্তরালে সংসারের অভাব, দারিদ্রতা এবং পরিবারের সদস্য সংখ্যা বেশী হয়ে যাওয়ায় উক্ত পরিবারের সদস্যরা শিক্ষা বঞ্চিত অজ্ঞ অভিভাবকদের আর্থিক সুবিধা ক্ষুধার রাজ্যে যুদ্ধ করে এক প্রকার বাধ্য হয়ে পড়ে প্রলোভনে লোভনীয় প্রস্তাবের বিনিময়ে ঐসব শিশুরা শিক্ষার বই-খাতা-কলমের পরিবর্তে নিরুপায় হয়ে ঢুকে পড়ে শ্রম জগতে প্রায় শিশু। সু-শিক্ষার ধ্যান, ধারণা ও বিদ্যালয়ে যাওয়ার মনমানষিকতা থাকলেও অভাব হয়ে উঠে সবচেয়ে বড় বাঁধা। ঈদগাঁও’র বেশ ক’জন হোটেলের গ্লাস বয়ের সাথে কথা হলে জানা যায়, তারা সকাল দশটা থেকে পর দিন সকাল দশটা পর্যন্ত একটানা পরিশ্রম করে মজুরী পায় মাত্র অল্প টাকা। এনিয়ে পরিবার চলাতো দুরের কথা, নিজেও চলা কঠিন হয়ে পড়ে। এভাবে আর কতকাল? একটি অসাধু মহল প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলের কচি-কাঁচা পথকলি শিশুদের ঝুকিপূর্ন কাজের মত হীনকাজে ব্যবহার করছে বলে অভিযোগ উঠছে। পক্ষান্তরে কাগজ কুড়ানো, ঝিনুক বিক্রি, বেকারী, ফেরী ওয়ালা, যানবাহনের হেলপারের কাজে নিয়োজিত করেছে এক শ্রেণীর কতিপয় স্বার্থান্বেষী মহল। এছাড়া মরনাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ পেশায় কাজ করতে গিয়ে দূর্ঘটনায় শিকার হয়ে অনেকেই অকালেই ঝরে পড়ে মৃত্যুর কূলে। আবার অনেকে পঙ্গুতের অভিশাপ নিয়ে জীবন-যাপন করছে। শিশু অধিকার আদায়ের লক্ষে নানা ব্যানারে একাধিক সংগঠন কাজ করলেও তা থাকে কাগজে-কলমে সীমাবদ্ধ। এ ক্ষেত্রে শিশুরা শ্রমের পাশাপাশি নির্যাতনে ও শিকার হচ্ছে। প্রতিনিয়ত শারীরিক, মানষিক ভাবেও আক্রান্ত হচ্ছে। ঈদগাঁওয়ের কয়েক ইটভাটায় ঘুরে ইট আনা নেওয়ার কাজে নিয়োজিত ৭ থেকে ৯ বছর বয়সী সাইফুল, রশিদ, বাবুল, সেকুপা, আরজিনাসহ আরো অনেকে জানায়, তারা ভোর সকাল থেকে ইট ভাটায় নানা কাজের লক্ষে দৈনিক বেতনে চলে আসে। এ অল্প টাকা নিয়ে তারা পরিবারের ভরণ-পোষণ ব্যয় করে। অপরদিকে ৯ বছরের রিক্সা চালক মোজাফ্ফর ও সেলিম উল্লাহ জানায়, পরিবারের অভাব অনটনের কারণে অল্প বয়সে এ পেশা ধরতে হয়েছে। মাত্র তারা ২য় শ্রেণী পর্যন্ত পড়ে আর উচ্চ শিক্ষা অর্জন করা হয়নি। অবশেষে পরিবারের দিকে চেয়ে তাদেরকে নেমে পড়তে হয়েছে এ শ্রম কাজে। সচেতন মহলের মতে, সরকারের উচিত এসব সুবিধা বঞ্চিত অসহায় শিশুদের পুনর্বাসনে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা। তাহলেই এদের মধ্য থেকে বেরিয়ে আসবে “আজকের শিশুরাই আগামী দিনের ভবিষ্যত”। তা না হলে যে শিশু আজকে শিক্ষাবঞ্চিত হয়ে ভিক্ষাবৃত্তি থেকে শুরু করে ঝুঁকিপূর্ণ কাজ কর্ম করে বেড়াচ্ছে বড় হয়ে তারা নানা ধরণের অপরাধ-অপকর্মের সাথে জড়িত হয়ে দেশকে খারাপ পরিণতির দিকে ধাবিত করতে পারে।

পাঠকের মতামত: