ঢাকা,বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪

ডোনেশনের নামে শিক্ষকদের সহায়তায় নিষিদ্ধ বই বিক্রি

প্রশ্নবিদ্ধ সৃজনশীল শিক্ষা ব্যবস্থা !

download_3পলাশ বড়ুয়া:

উখিয়ায় প্রাথমিক, নিন্ম মাধ্যমিক, মাধ্যমিক স্কুল ও মাদ্রাসা গুলোতে নিষিদ্ধ গাইড বই বিক্রির প্রতিযোগীতায় নেমে পড়েছে প্রকাশক কোম্পানী গুলো। গাইড বই প্রকাশকদের পক্ষে নিয়োজিত মার্কেটিং বিভাগের প্রতিনিধিরা স্কুল ও মাদ্রাসা গুলোতে বিক্রির জন্য ইতিমধ্যে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলোর কতিপয় শিক্ষক সহ স্থানীয় একাধিক শিক্ষক সমিতির নেতাদের সাথে ডোনেশন চুক্তি সম্পন্ন করেছে। এ ডোনেশন বানিজ্য উপজেলার সর্বত্রই কম-বেশী ছড়িয়ে পড়েছে। এ বাণিজ্যের পরিমাণ কয়েক কোটি টাকা হবে বলে একাধিক সূত্রে জানা গেছে। অন্যদিকে, গাইড নির্ভরশীলতার ফলে সরকারের সৃজনশীল শিক্ষা ব্যবস্থা অনেকটা চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বে বলে শিক্ষার সাথে সংশি¬ষ্ট দায়িত্বশীল ব্যক্তিরা মনে করছেন।

জানা যায়, উখিয়ার উপজেলার ৫টি ইউনিয়নে ৩টি কলেজ ১৩টি মাধ্যমিক বিদ্যালয় ৬টি মাদ্রাসা ও ৭৭ টি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, ১৬১টি এবতেদায়ী মাদ্রাসা (স্বতন্ত্র) সহ নতুন কোমলমতি শিক্ষার্থীদের টার্গেট করে জননী, পপি, এডভান্সড, দিগন্ত, প্রাইম, জুপিটার, নিউটন, পাঞ্জেরী, ক্যাপিটাল, স্কলার, গ্লোবাল, নবপুথি ঘর, ক্যাপ্টেন, রূপসি, গোল্ডেন এ প্লাস, কনকর্ট, সাইমা, আশার আলো, আলফাতা, আল বারাকা, আল বানার, আল ইত্তেফা, লেকচার, গ্যালাক্সি, অনুপম, ইসলামিক পাঞ্জেরী, নবদূত, আলফালা ও আল সামাদ পাবলিকেশন্স সহ শতাধিক প্রকাশনী ব্যাপক ভিত্তিতে ১ম শ্রেনী থেকে স্নাতক (সম্মান) পর্যন্ত গাইড বই প্রকাশ করছে। এছাড়া বাংলা ব্যাকরণ, ইংরেজী গ্রামার ও এস,এস,সি টেষ্ট পেপারসহ স্বস্ব বিভাগের শিক্ষক, প্রধান শিক্ষক ও সুপারদের সাথে ডোনেশনের নামে চলছে অর্থনৈতিক চুক্তি। স্কুলের ছাত্র সংখ্যার ভিত্তিতে এ ডোনেশন নির্ধারণ করা হচ্ছে। তবে স্কুল প্রতি এক থেকে দেড়লাখ টাকা পর্যন্ত ডোনেশন দেয়া হচ্ছে। শুধু ডোনেশন নয় তার সাথে সারা বছরের সকল পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফ্রি দেয়ার চুক্তিও হচ্ছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক বই বিক্রেতা বলেন, যে গাইড বইয়ের দাম ৬৫০/৭০০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে বাস্তবে তার মূল্য ২০০/২৫০ টাকা গাইড প্রতি ২০/২৫ ভাগ কমিশন নেয়া হচ্ছে। প্রকাশকরা বই প্রতি ২/৩ গুন দাম বেশি ধার্য করেছে। বাড়তি টাকা অভিভাবকদের পকেট থেকে কোম্পানীগুলো হাতিয়ে নিচ্ছে। এছাড়া সারা বছর বই বিক্রি করে ২০/২৫ হাজার টাকা লাভ করা গেলেও বাংলা ব্যকরণ/ইংরেজী গ্রামার সহ বিষয়ভিত্তিক এক এক জন শিক্ষক কমিশন পাবে ৫০ হাজার থেকে লাখ টাকা। এছাড়া স্থানীয় শিক্ষক সমিতি ইতিমধ্যে কোম্পানি গুলোর কাছ থেকে লক্ষ লক্ষ টাকা ডোনেশন নিয়েছে এবং মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতি তার ব্যতিক্রম নয়। এ বিষয়ে প্রত্যন্ত অঞ্চলের অভিভাবকরা জানিয়েছেন সরকারী বই পেলেও এখন নতুন করে দুই থেকে আড়াই হাজার টাকার গাইড বই কিনতে হয়। তাও আবার শিক্ষকদের চাহিদা মোতাবেক।

এ ব্যাপারে জানতে চাওয়া হলে ঐতিহ্যবাহী পালং আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ইদ্রিস মিয়া জানান, এ ব্যাপারে তাঁর কোন ধরণের সংশ্লিষ্ট নেই। তবে শিক্ষকরা আন্তরিক হলে ছাত্র/ছাত্রীদের গাইড বইয়ের প্রয়োজন পড়েনা। কিছু অসাধু শিক্ষক অনৈতিক সুবিধা আদায়ের জন্য ছাত্র/ছাত্রীদের মাথা বিক্রি করে কোম্পানীগুলোর কাছ থেকে বাড়তি সুবিধা নিচ্ছে। সৃজনশীল পদ্ধতিতে মুল বই পড়াতে হলে শিক্ষকদের ব্যাখ্যা বিশে¬ষন পড়তে হয়। আর এজন্য শিক্ষকদের পড়ালেখা করে ক্লাসে আসতে হয়। অনেক শিক্ষক প্রাইভেট নিয়ে এত ব্যস্ত থাকেন যে, পড়াশুনা করার সময় তারা পান না। তাই শিক্ষকরা ক্লাসে গাইড বই পড়ান বলে এমন অভিমত ব্যক্ত করেন একাধিক প্রতিষ্ঠান প্রধান। অন্যদিকে, নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক শিক্ষক জানান, গাইড প্রকাশনা কোম্পানী গুলোর সাথে অনৈতিক চুক্তি করে শিক্ষক নামধারী ব্যাক্তিরা তাদের স্বার্থ হাসিল এর জন্য সৃজনশীল শিক্ষা ব্যবস্থাকে ধ্বংস করতে চাইছে। এব্যাপারে শীগ্রই মন্ত্রনালয়ের কঠোর পদক্ষেপ নেয়া উচিত।

উখিয়া উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা রায়হানুল ইসলাম মিঞা জানান, এ ব্যাপারে তিনি কোন ধরণের খবর পাননি। তবে সৃজনশীল শিক্ষা ব্যবস্থায় কোন ভাবেই গাইড বই ব্যবহার প্রশ্নই আসে না। তাছাড়াও যারা কোমলমতি শিক্ষার্থীদের মাথা বিক্রি করে ডোনেশনের নামে অনৈতিক সুবিধা নিবে ওই সকল শিক্ষক ও প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে বিধিমোতাবেক ব্যবস্থা নেয়া হবে। এ ব্যাপারে দিগন্ত, জুপিটার, স্কলার, আলবারাকা, প্রাইম ও গ্লোবাল সহ কয়েকটি পাবলিকেশন্স এর মার্কেটিং বিভাগের প্রতিনিধিদের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তাঁদের কোন বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

 

 

পাঠকের মতামত: