ঢাকা,শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪

সমুদ্রসৈকত ঘিরে ওশান গ্রুপের মহাপ্রতারণা

ওসান গ্রুপসহজ কিস্তিতে প্লট বরাদ্দ; ব্যাংক ঋণ সুবিধা নিয়ে প্লটের মালিক হউন। কি ভাবছেন ভাই? আমি মিথ্যা বলি নাই। কেনার দরকার নাই, চলো আমার বাড়ির ঠিকানায়। আমরাই একমাত্র পৃথিবীর বিখ্যাত কম্পানির কাছে জমি বিক্রয় করেছি। আমাদের কম্পানির রয়েছে এডিবির প্রশংসাপত্র।’ উল্লেখিত বাক্যগুলো একটি আবাসন প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপনে ব্যবহার করা হচ্ছে। অথচ এ প্রতিষ্ঠানের প্রচার করা প্রকল্পের অনুমোদন নেই। এমনকি যে জায়গায় সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে ক্রেতাদের দেখানো হচ্ছে তা-ও ভাড়া করা। নামমাত্র জমি ক্রয় করে শত শত বিঘা কাগজে-কলমে দেখিয়ে ক্রেতাদের বলা হচ্ছে। ক্রেতারাও মনভোলানো বিজ্ঞাপন আর সংশ্লিষ্টদের ব্যবহারে মুগ্ধ হয়ে নিজের সারা জীবনের সঞ্চয় দিয়ে স্বপ্নের বীজ বপন করছেন। কালের কণ্ঠ’র অনুসন্ধানে প্রায় এক ডজন আবাসন প্রকল্প নিয়ে হাজার হাজার গ্রাহকের সঙ্গে ওশান গ্রুপের এমন প্রতারণার প্রমাণ মিলেছে। এ প্রতিষ্ঠানটি শুধু রাজধানী ও এর আশপাশে নয়, কক্সবাজারের সমুদ্রসৈকত ঘিরে প্রতারণার জাল ফেলেছে। ইতিমধ্যে শত শত কোটি টাকা শুধু সাইনবোর্ড দেখিয়ে হাতিয়ে নিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। তবে শেষ পর্যন্ত ওই প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে যাচ্ছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। জানা যায়, ওশান গ্রুপের মালিকানাধীন পূর্বাচলে ওশান স্যাটেলাইট সিটি-১, ওশান স্যাটেলাইট সিটি-২, গান্ধারিয়া সিটি, আবেদন নগর, আমার বাড়ি, গান্ধারিয়া পল্লী, ওশান সিটি-কুয়াকাটা, ওশান আর্থ লিমিটেড- কক্সবাজার, ওশান পার্ক, ওশান ভিউ, ওশান এঞ্জেল, ওশান  সানরাইজ, ওশান ব্লু মাউন্টেন-ইনানী, ওশান জোমারহ, ওশান ড্যান্স রিভার, ওশান ভিউ রয়েছে। বিশ্বের দীর্ঘতম সৈকত কক্সবাজার। সাগরের তরঙ্গমালার সঙ্গে পাহাড়-পৃথিবীর বিরল দৃশ্যও বটে। এমন স্থানে কে না চাইবে এক টুকরো জমিতে একটি ডুপ্লেক্স বাড়ি নির্মাণ করতে! সাগরতীরের আবাসন প্রকল্প ‘ওশান ব্লু মাউন্টেন’, ‘ওশান জুমেরিয়া’ এবং ‘ওশান ড্যান্স রিভার’-এর মতো আকর্ষণীয় নাম দেখে ক্রেতাদের ভিড় লেগেই থাকার কথা। কিন্তু বাস্তবতা সেখানে ভিন্ন। কক্সবাজার সাগরপারের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, পাহাড় এবং সাগরের ঢেউকে পুঁজি করে এক ‘মহাপ্রতারণা’র আশ্রয় নেওয়া হচ্ছে সেখানে। আর এ রকম প্রতারণার মাধ্যমেই হাতিয়ে নেওয়া হচ্ছে নিরীহ লোকজনের কোটি কোটি টাকা। ওশানের বিজ্ঞাপন থেকে দেখা যায়, সাগরতীরে পাঁচতারা মানের হোটেল, প্রশস্ত সড়ক, বিনোদনের অত্যাধুনিক ব্যবস্থা, আন্তর্জাতিকমানের স্কুল-কলেজ, মাল্টিস্টোরেড শপিং সেন্টার, ব্যাংক, পার্ক, মসজিদ, মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল থাকছে এসব বাণিজ্যিক ও আবাসন প্রকল্পে। বলা হচ্ছে—এসব প্রকল্প সাগর থেকে মাত্র ১০০ মিটার দূরত্বে অবস্থিত। প্রতিটি প্রকল্পে এ, বি ও সি পর্যন্ত একাধিক ব্লকে ভাগ করা রয়েছে। প্রকল্পের প্লটের সাইজ উল্লেখ করা হয়েছে ৫, ৮ ও ১০ শতক করে। ওশান গ্রুপের আবাসন প্রকল্পের এসব বিবরণ দেওয়া হয়েছে কম্পানির নিজস্ব ওয়েবসাইটে। এ রকম লোভনীয় প্রচারণার মাধ্যমে ‘মহাপ্রতারণা’র ঘটনা কিভাবে চালানো হচ্ছে সেটাই উঠে এসেছে কালের কণ্ঠের অনুসন্ধানে। ওশান গ্রুপ নামের প্রতিষ্ঠানটির ওয়েবসাইটে কক্সবাজারে ওশান আর্থ লিমিটেড নামের সাইট অফিসের আওতায় তিনটি আবাসন প্রকল্পের বিবরণ দেওয়া হয়েছে। কক্সবাজার সাগর পারের উখিয়া উপজেলার ইনানী মৌজার জমি নিয়ে তিনটি পৃথক প্রকল্প এগুলো। এই প্রকল্প তিনটিতে মোট জমির পরিমাণ ওয়েবসাইটে উল্লেখ করা হয়েছে ১৫০ দশমিক ৬ একর। অথচ সরেজমিন অনুসন্ধান এবং স্থানীয় ভূমি অফিসের রেকর্ডপত্রে পাওয়া গেছে মাত্র ৩৮ দশমিক ৫০ শতক জমি। এই জমি নিয়েই শত শত লোককে ধোঁকা দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। ৪৯ একর জমির প্রকল্পে অস্তিত্ব মাত্র ২৩ শতক : প্রকল্পের নাম-ওশান ব্লু মাউন্টেন। কক্সবাজার শহর থেকে সাগর তীরবর্তী পাহাড় ঘেঁষা এলজিইডি সড়ক দিয়ে টেকনাফ যাওয়ার পথে ৪০ কিলোমিটার দূরত্বে প্রকল্পটির অবস্থান। পশ্চিমে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রকৌশল বিভাগের নির্মাণাধীন মেরিন ড্রাইভ সড়ক এবং পূর্বে ইনানী-টেকনাফ এলজিইডি সড়ক। এই দুই সড়কের মাঝখানে প্রকল্পটির অবস্থান। এলজিইডি সড়কের পশ্চিমে পাকা পিলারের বিরাট সাইনবোর্ডে লেখা ক্রয় সূত্রে মালিক-ওশান গ্রুপ। কালের কণ্ঠ প্রতিবেদক সরেজমিন ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখতে পান সাইনবোর্ড-সংলগ্ন পূর্ব পার্শ্বের জমিতে ধান রোপণ করা হচ্ছে। উখিয়া উপজেলার জালিয়া পালং ইউনিয়নের ইমামের ডেইল গ্রামের বাসিন্দা সৈয়দ আলমের ছেলে বেলাল উদ্দিনসহ সেই জমিতে চাষাবাদ করছিলেন আরো কয়েকজন। বেলাল জানান, তিনি স্থানীয় মেম্বারের ছেলে মোসতাক আহমদের মালিকানাধীন জমি ইজারা নিয়ে চাষাবাদ করছেন। ওশান গ্রুপের সাইনবোর্ড লাগানো জমিতে চাষাবাদ করছেন কিভাবে জানতে চাইলেই বেলাল দেখিয়ে দেন পাশের এক দোকানিকে। ঘটনাস্থলেই ফরিদ আলমের চা-সিগারেটের দোকানটি। এলাকার নারী ইউপি সদস্য জাহানারা বেগমের স্বামী ফরিদ আলম কালের কণ্ঠকে জানান, তিনি ওশান গ্রুপের সাইনবোর্ড লাগানো জমির খণ্ডটি এক বছর চাষাবাদের জন্য ইজারা নিয়েছেন ৯০০ টাকার বিনিময়ে। কম্পানির কর্মচারী সোহেল রানা দোকানি ফরিদকে এ জমি ইজারা দিয়েছেন। ‘ওশান ব্লু মাউন্টেইন’ প্রকল্পের ওয়েবসাইটে উল্লিখিত ৪৯ দশমিক ৬ একর জমির বার্ষিক ইজারা মাত্র ৯০০ টাকা কিভাবে হয় তা জানতে চাইলে ইজারা গ্রহীতা দোকানি ফরিদ বলেন, ‘সাইনবোর্ড টাঙ্গানো প্রকল্পের স্থানে জমি আছে ১৭ শতক। এটিই আমি ৯০০ টাকায় চাষাবাদের জন্য নিয়েছি। তবে পার্শ্ববর্তী এলজিইডি সড়কসংলগ্ন পূর্ব পাশে পৃথক আরো ছয় শতক (পতিত এবং বিরোধীয়) মিলে মোট ২৩ শতক জমির অস্তিত্ব রয়েছে প্রকল্পে।’ দোকানি ফরিদ আলম আরো জানান, ওশানের ওয়েবসাইটে যে পরিমাণ জমির তথ্য দেওয়ার কথা শুনলাম তা আশপাশের সব জমি একসঙ্গে করলেও হবে না। কেননা এখানে এত বিপুল পরিমাণের জমিও নেই। ওয়েবসাইটে ব্লু মাউন্টেন প্রকল্পে চার হাজার ৫০০ শতকের প্লটও রেডি থাকার তথ্য উল্লেখ রয়েছে। প্রতিটি কমপক্ষে পাঁচ শতক করে হলেও এ পরিমাণ জমিতে ৯০০টি প্লট রেডি থাকার কথা। অর্থাৎ একটি করে হলেও কমপক্ষে ৯০০ ব্যক্তির কাছে প্লট বিক্রি করা যায়। ওয়েবসাইটে পাঁচ শতকের একটি প্লটের মূল্য ১৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা উল্লেখ করা হয়েছে। প্রতি শতকের মূল্য তিন লাখ ৫০ হাজার টাকা। কিস্তিতে প্রতি মাসে ৪৫ হাজার ৮৩৩ টাকা পরিশোধযোগ্যর কথা বলা হয়েছে। খাসজমিও প্রকল্পে : প্রকল্পের নাম ওশান জুমেরিয়া। কক্সবাজার থেকে এলজিইডি সড়ক পথে টেকনাফ যাওয়ার পথে ৪৭ কিলোমিটার দূরত্বে ইনানী মৌজার চেপটখালী নামক স্থানে অবস্থিত। সাগর পারের সরকারি খাসজমিতে একটি বেসরকারি সংস্থা (এনজিও) বেশ কয় বছর আগে একটি গুচ্ছগ্রাম গড়ে তুলেছিল। সেই গুচ্ছগ্রামসংলগ্ন এককানি (চল্লিশ শতক) খাসজমির দখলস্বত্ব ওশান গ্রুপকে বিক্রি করেছিলেন এলাকার বাসিন্দা মকবুল আহমদ। সেই খাসজমিতে ওশান গ্রুপের প্রকল্পটির সাইট অফিস নির্মাণ করা হয়েছে। এ ছাড়া স্থানীয় সৈয়দ হোসেন ও কবির আহমদ সওদাগর ওশান গ্রুপের কাছে দেড় একর জমি বিক্রি করেছিলেন। কিন্তু সেই পুরো জমি খণ্ডটিই মেরিন ড্রাইভ সড়কের পশ্চিমে সাগরে বিলীন হয়ে গেছে। ওশান জুমেরিয়া প্রকল্পের ওয়েবসাইটে জমির পরিমাণ উল্লেখ করা হয়েছে ৫৩ একর। সেই সঙ্গে রেডি প্লটের তথ্য দেওয়া হয়েছে পাঁচ হাজার শতক। অর্থাৎ পাঁচ শতক করে হলেও এক হাজার প্লট বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে এই প্রকল্পে। চেপটখালীর বাসিন্দা মৌলভী নুরুন্নবী কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘ওশান গ্রুপের সামান্য খাসজমি এবং বড়জোর ১২ শতক জোতজমি থাকতে পারে। তাদের আর কোনো জমি এখানে নেই। কম্পানিটি আমার খতিয়ানভুক্ত (বিএস খতিয়ান-৪৬৪৯) জমিতেই তাদের সাইনবোর্ড টাঙ্গিয়েছে। এ কারণে আমি সেই সাইনবোর্ডের লেখা আলকাতরা দিয়ে মুছে দিয়েছি।’ মৌলভী নুরুন্নবী আরো জানান, ওশান গ্রুপের প্রকল্পের পাশেই রয়েছে সাবেক যোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী সালাউদ্দিন আহমেদের ক্রয় করা জমি, দীন এম রানা নামের একজন এবং আরো দুটি ডেভেলপার কম্পানির জমি। তাই এখানে ওশান গ্রুপের এত বিপুল পরিমাণের জমি থাকার কোনো সুযোগও নেই। ওশান জুমেরিয়া প্রকল্পে কর্মরত পাহারাদার স্থানীয় বাসিন্দা মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর বলেন, ‘প্রকল্পে প্লট কেনার জন্য রাজধানী ঢাকা থেকে প্রচুর লোকজন সাইট দেখতে আসে। আসলে এই সাইটটি দেখতে বেশ সুন্দর তাই পছন্দ করে বেশির ভাগ আগত। আমার মালিক কী পরিমাণ জমি কিনেছেন তা বড় কথা নয়—তবে ১০-১২ কানির মতো (পাঁচ একর) বায়না করা জমি রয়েছে।’ তিনি আরো জানান, ওশান গ্রুপের মালিকের জন্য জমি কোনো ব্যাপারই নয়। জমির অস্তিত্ব নেই তবুও প্লট বেচা চলছে : ওশান গ্রুপের ইনানী মৌজার ইমামের ডেইল লোকেশনের ওশান ব্লু মাউন্টেন প্রকল্পে প্লটের বুকিং দিয়ে প্লট পরিদর্শনে আসেন এক ব্যবসায়ী। তাঁর সঙ্গে বেশ কিছু বিত্তবান ব্যক্তিও রয়েছেন। তাঁদের সবার পক্ষে এই ব্যবসায়ী লোকেশন দেখতে এসে পছন্দও করেছেন। পরবর্তী সময়ে আরো বেশ কজন বন্ধুবান্ধবকে সঙ্গে নিয়েও বুকিং দিয়েছেন। তিনি জানেন না বাস্তবে এই লোকেশনে মাত্র ১৭ শতক জমি রয়েছে ওশানের। অথচ তাঁরা বন্ধুবান্ধব মিলেই প্রকৃত জমির চেয়েও কয়েক গুণ বেশি জমির জন্য বুকিং দিয়ে ফেলেছেন। সম্প্রতি এই প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে তিনি পরিচয় প্রকাশ না করতে অনুরোধ জানিয়ে দুঃখের সঙ্গে বলেন, ‘সমাজের এতগুলো বিশিষ্ট ব্যক্তির সঙ্গে এ রকম একটা প্রতারণা করতে পারল তারা? আর সাধারণ মানুষের অবস্থাটা তাহলে কী হবে?’ এ ব্যক্তির মতো আরেকজনও প্রতারিত হয়েছেন। টানা তিন দশক সরকারি পদস্থ চাকরির পর অবসরে গেছেন তিনি। এবার স্ত্রীর ইচ্ছা—কক্সবাজার সৈকতে একটি বাড়ি করবেন। তাই স্বামী-স্ত্রীর এই ইচ্ছার পর তিনি ওশানের ইনানী মৌজার প্রকল্প পরিদর্শনে আসেন। প্রকল্প দেখার আগে কম্পানির কর্মচারীকে ধরে বারবার বলছেন, ‘আমার স্ত্রীর ইচ্ছা পূরণের জন্য সারা জীবনের সঞ্চয়টুকু এখানে দিতে এসেছি। আপনি সত্যি করে বলুন—এখানে বাস্তবে জমি আছে কি না।’ কিন্তু কম্পানির চাকরি যাওয়ার ভয়ে সেই কর্মচারী বারবারই বলেছেন প্রকল্পে জমি থাকার মিথ্যা তথ্যটি। এ রকম আহাজারির কথা প্রকল্প এলাকায় লোকজনের কাছে ব্যাপকভাবে প্রচার রয়েছে। তার পরও বিক্রি থেমে নেই। কম্পানির ওয়েবসাইটে ক্রেতাদের আইডি নম্বরসহ একটি তালিকাও দেওয়া রয়েছে। এমনকি ওশান জুমেরিয়া প্রকল্পে ইতিমধ্যে বিক্রির তালিকায় ৮১৭ জনের ক্রমিক নম্বর উল্লেখ করা রয়েছে। অনুরূপ ওশান ব্লু মাউন্টেনে ৫২৩ জন ক্রেতার ক্রমিক নম্বর উল্লেখ রয়েছে। যখন ক্রেতা তখন সাইনবোর্ড : অনুসন্ধানে আরো জানা গেছে, ইনানী মৌজার ইমামের ডেইল, চেপটখালী ও শামলাপুর এলাকায় কিছু সাইনবোর্ড আগে থেকেই রেডি রাখা হয়। রাজধানী ঢাকা থেকে প্রকল্পের সাইট দেখার জন্য ক্রেতারা যখন আসেন তার একটু আগেভাগেই ওই সব এলাকায় তাৎক্ষণিক সাইনবোর্ডগুলোর স্ট্যান্ড ক্ষণিকের জন্য জমিতে পুঁতে দেওয়া হয়। এসব সাইনবোর্ড দিয়ে পরিদর্শনকারীদের দেখানো হয়—এই কম্পানির বিপুল পরিমাণ জমি রয়েছে। আবার এ সময় সেখানে কয়েকজন প্রশিক্ষিত লোকও রাখা হয়। এসব লোক পরিদর্শনে আসা ক্রেতাদের সামনে জানান দেবে—এই কম্পানির লেনদেন বেশ ভালো এবং অত্যন্ত বিশ্বস্ত। প্লট পরিদর্শনকারীরা সরে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে সেই সব সাইনবোর্ডও সরিয়ে ফেলা হয়। বাস্তবে জমিবিহীন এসব প্রকল্পে ক্রেতা ভিড়িয়ে প্রতারণার মাধ্যমে টাকা হাতিয়ে নেওয়ার জন্য এই জঘন্য ফাঁদ পাতা হয়েছে। এসব প্রকল্পের বিষয়ে স্থানীয় জালিয়া পালং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘ইনানী মৌজায় সাগরের ঢেউ আর পাহাড় দেখিয়ে টাকা হাতিয়ে নেওয়ার এক অসাধু কাজের প্রতিযোগিতা চলছে। এখানে নামিদামি ডেভেলপার কম্পানির বিরুদ্ধে এমন জঘন্য কাজের বদনাম নেই। তবে বেশ কিছু ছোটখাটো ডেভেলপার কম্পানি এসে প্লট দেওয়ার নামে প্রতারণা করছে। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন।’  এ ব্যাপারে কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মো. আলী হোসেন কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘এ ধরনের প্রকল্প করতে হলে জেলা প্রশাসন, কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদের অনুমোদন প্রয়োজন। কিন্তু আমার জানা মতে ওশানের এ ধরনের কোনো অনুমোদন নেই। তাই সংশ্লিষ্ট বিভাগের সঙ্গে কথা বলে ব্যবস্থা গ্রহণ করব।’ ওশান গ্রুপের এমডি খন্দকার আলী আজমের ব্যক্তিগত ফোনে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি তা ধরেননি। পরে বিষয়টি উল্লেখ করে তাঁর ব্যক্তিগত মোবাইলে খুদে বার্তা পাঠানোর পরও তাঁর দিক থেকে সাড়া মেলেনি।

 

পাঠকের মতামত: