ঢাকা,বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪

আজ ভয়াল ২৯ এপ্রিল : ২৫ বছরেও নির্মিত হয়নি পর্যাপ্ত সাইক্লোন সেল্টার ও টেকসই বেড়িঁবাধ

pic (1)29 april 1991আতঙ্কে কক্সবাজার উপকুলের ১৫লাখ জনসাধারণ

এম.জিয়াবুল হক, চকরিয়া :

আজ ২৯ এপ্রিল। ১৯৯১ সালের এই দিনে কক্সবাজার জেলার উপকূলীয় অঞ্চলের বেশিরভাগ জনপদে নেমে আসে মহা প্রলয়ংকারী ঘুর্ণিঝড়। সেই ঝড়ের তান্ডবে লন্ড ভন্ড হয়ে যায় উপকূলীয় এলাকা চকরিয়া উপজেলার বদরখালী, পশ্চিমবড় ভেওলা, ঢেমুশিয়া, কোণাখালী, পেকুয়া উপজেলার মগনামা, উজানটিয়া, রাজাখালী, মহেশখালী উপজেলার মাতারবাড়ি, ধলঘাটা, হোয়ানক, কালারমারছড়া ইউনিয়ন এবং দ্বীপ উপজেলা কুতুবদিয়া জনপদের শত বছরের গড়ে উঠা মানব সভ্যতা। শুধু তাই নয় ওইদিন ঝড়ের ভয়াল থাবায় পানিতে ডুবে মুহুর্তের ব্যবধানে মৃত্যু ঘটে হাজার হাজার মানুষের। সেই সাথে গৃহ পালিত পশু, মৎস্য সম্পদ সহ মাথা গুজার ঠাই হারায় উপকুলের হাজার হাজার পরিবার। প্রলয়ংকারী ঘুর্ণিঝড়ের এই তান্ডবে উপকুলীয় জনপদের সব ধরণের রাস্তাঘাট, বনজ সম্পদ সহ নানা সেক্টরে ঘটে ব্যাপক আর্থিক ক্ষয়-ক্ষতি। যা ঘুর্ণিঝড়ের পর ২৫ বছর সময় অতিবাহিত হওয়ার পরও ক্ষতিগ্রস্থরা এখনো পুরোটাই পুষিয়ে উঠতে পারেনি। সেই দিনের স্মৃতিতে এখনো তাড়া করে উপকূলীয় এলাকার স্বজনহারা লোকজনকে। স্মৃতি মনে পড়লে এখনো তাদের মাঝে নেমে আসে স্বজন হারানো বেদনা । চোখের পর্দায় ভেসে উঠে ওই দিনের স্মৃতি। কিন্তু সেই স্মৃতির বেদনায় উপকূলবাসী শুধু শুধুই দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে আর সেই দিনের পূর্বকার স্মৃতি আর স্বজন ও সহায় সম্পত্তি হারানোর কথা। এখনো আতঙ্কে রয়েছে দেশের উপকূলীয় চর ও দ্বীপ অঞ্চলের প্রায় ৮০ লাখ মানুষ। তারমধ্যে কক্সবাজার অঞ্চলের উপকুলের ১৫লাখ জনসাধারণ এখনো জানমাল নিয়ে চরম অরক্ষিত অবস্থায় রয়েছে। কারন ঘুর্ণিঝড়ের তান্ডবলীলার পর ২৫বছর সময় অতিবাহিত হলেও কক্সবাজারের এসব দুর্গত এলাকায় এখনো নির্মাণ করা হয়নি পর্যাপ্ত পরিমাণ সাইক্লোন সেল্টার ও উপকুলের নিরাপত্তার রক্ষাকবচ টেকসই বেড়িবাঁধ। তবে অভিযোগ উঠেছে, কক্সবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ড প্রতিবছর বেড়িঁবাধ সংস্কারের নামে সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তর থেকে নানাভাবে বরাদ্ধ এনে হরিলুটের মহোৎসব চালাচ্ছে। পক্ষান্তরে বরাদ্ধ অপ্রতুল বা একেবারে বরাদ্ধ পাওয়া যায়নি এমন অভিযোগ তুলে উপকুলের ক্ষতবিক্ষত বেড়িঁবাধ সমুহ সংস্কারে কোন ধরণের উদ্যোগ নিচ্ছেনা।

Coxs-bazar_ 29 APRILস্থানীয় সুত্রে জানা গেছে, ১৯৯১ সালে ২৯ এপ্রিল রাতেই প্রলয়ংকারী ঘুর্ণিঝড়ে সর্বাধিত আঘাত হানে কক্সবাজার জেলা ও চট্টগ্রাম বিভাগের উপকূলীয় অঞ্চলে। বিশেষ করে কক্সবাজারের চকরিয়া, পেকুয়া মহেশখালী, কুতুবদিয়া, টেকনাফ উখিয়া ও কক্সবাজার সদর। চট্টগ্রামের আনোয়ারা, বাঁশখালী, সন্দ্বীপের বিস্তীর্ণ উপকূলীয় গ্রামগুলো প্রলয়ংকারী ঘুর্ণিঝড়ে লন্ড ভন্ড হয়ে যায়। ওইদিন উপকূলের হাজার হাজার মানুষের মৃত্যু ঘটে। ক্ষতি হয়েছে হাজার কোটি টাকার দীর্ঘ দিনের সঞ্চিত ও রক্ষিত সহায় সম্পত্তি সহ ঘরবাড়ী। উপকুলীয় বেল্টের ভেঁড়িবাধ ভেঙ্গে গিয়ে নেমে আসা পানি ও ধমকা হাওয়ায় সব কয়টি কাঁচা, পাকা, ঘরবাড়ী ভেঙ্গে যায়। ভেসে যায় গৃহপালিত পশু, মৎস্য ও বনজ সম্পদ। ওই দিনে পুরো কক্সবাজার সহ চট্টগ্রামে তখন নেমে আসে হাহাকার ও চরম দূর্ভিক্ষ অবস্থা। বিগত ২৫বছরে উপকুলীয় অঞ্চলের লোকজনের নিরাপত্তার বিষয়টি যেমন রয়ে গেছে চরম উপেক্ষিত, তেমনি গোটা উপকূলীয় অঞ্চল এখনও রয়েছে অরক্ষিত অবস্থায়।

সুত্র জানায়, ত্রাণ ও পূর্নবাসন মন্ত্রণালয়ের তালিকা অনুযায়ী দেশের ৩৩টি উপজেলাকে সাগর সংলগ্ন বিপদ সংকুলন এলাকা হিসাবে চিহ্নিত করা হয়। এসব উপজেলা গুলোতে পরিকল্পিত ভাবে উন্নয়ন সমন্বিত কোন কার্যক্রম না হওয়ায় ৭১০ কিলোমিটার দীর্ঘ উপকূলীয় অঞ্চলের প্রায় ৮০ লাখ মানুষ চরম ঝুকির মধ্যে রয়েছে এখনো। ঘুর্ণিদূর্গত এলাকা সমূহে এখনো নির্মিত হয়নি পর্যাপ্ত সাইক্লোন সেন্টার। বেড়িবাঁধতো টেকসই হয়নি বছরের পর বছর। ফলে এখনো উপকূলীয়বাসী অরক্ষিত ও নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছে।

চকরিয়া উপজেলা রেড ক্রিসেন্ট কর্মকর্তা মনির চৌধুরী বলেন, ৯১সালের পর সরকার ও বেসরকারী সাহায্য সংস্থার অনুদানে চকরিয়ায় ৮১টি ও পেকুয়া উপজেলায় ৫৩টি সাইক্লোন সেন্টার নির্মাণ করে। এগুলোর বেশির ভাগ বর্তমানে ব্যবহৃত হচ্ছে বিদ্যালয় কাম সাইক্লোন সেন্টার হিসেবে। তিনি বলেন, বিগত ২৫বছরে এসব সাইক্লোন সেন্টারের মধ্যে ৮-১০টি ঝুকির্পুন অবস্থায় রয়েছে। এগুলোর কোনটি অবকাঠামো ও কোনটির দরজা-জানালা বর্তমানে নষ্ট হয়ে পড়েছে।

 

পাঠকের মতামত: