ঢাকা,শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪

উখিয়ায় ১৯ হাজার একর বনভূমি অস্থিত্ব সংকটে

12144705_889534974455838_5989135785643671443_nশাহজাহান চৌধুরী শাহীন, কক্সবাজার, ২৮ এপ্রিল ॥

কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলায় বনভুমি দিনদিন বেহাত হয়ে যাচ্ছে। গড়ে উঠছে নতুন নতুন স্থাপনা। সংরক্ষিত বনসম্পদ নির্বিচারে উজাড় করে বসতি গড়ে তুলার কারণে প্রায় ১৯ একর বনভুমি অস্থিত্ব সংকটে পড়েছে। এতে করে জীব বৈচিত্র ও বন্য পশু প্রাণি তাদের আবাসস্থল হারিয়ে লোকালয়ে চলে আসছে। গত সপ্তাহে একটি বাঘ ছাবক (বাচ্ছা) উদ্ধার করে স্থানীয় কাঠুরিয়া শিশুরা। পরে তা বনকর্মীরা ওই ছাবকটি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারী পার্কে হস্তান্তর করা হয়।

ইতোপূর্বে উখিয়ার মধুর ছড়া এলাকায় বনভূমি দখল করে গড়ে তোলা ৫০ টি পাকা স্থাপনা উচ্ছেদ এবং অবৈধ বসতি স্থাপনে সম্পৃক্ততার অভিযোগে উখিয়া রেঞ্জ কর্মকর্তা, সদর বনবিট কর্মকর্তা ও বালুখালী বনবিট কর্মকর্তাকে সাময়িক বহিস্কার করা হয়।

স্থানীয় সুত্রে প্রাপ্ত অভিযোগে জানা যায়, চলতি বছর জানুয়ারীতে মাসে কক্সবাজার দক্ষিণ বনবিভাগের উখিয়ায় রেঞ্জ কর্মকর্তা হিসেবে যোগদান করেন মনিরুল ইসলাম। তিনি এ রেঞ্জ যোগদান করার পরপরই উখিয়া উপজেলার প্রায় ১৯ হাজার একর বনভূমি অস্থিত্ব নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে উখিয়া উপজেলার বিভিন্ন বনবিটে দায়িত্বরত বনবিট কর্মকর্তাদের অভিযোগ, রেঞ্জ কর্মকর্তা মনিরুল ইসলাম সরাসরি আর্থিক কেলেঙ্কারী, কর্মস্থলে অনুপিস্থিতি ও বনবিট কর্মকর্তাদের সাথে সমন্বয়হীনতার কারণে বন বিভাগে চেইন অব কমান্ড ভেঙ্গে পড়েছে। ফলে আশংকাজনক ভাবে বেড়েছে বনভূমি জবর দখলের অসম তৎপরতা।

সরেজমিন ঘুরে জানা যায়, স্থানীয় মোঃ খলিল (৪৮) বালুখালী বিট অফিসের পার্শ্বে পাহাড় কেটে বহুতল ভবন নির্মাণ করছে।

বিট কর্মকর্তা মোবারক আলী জানান, রেঞ্জ কর্মকর্তা মনিরুল ইসলাম ঘটনাস্থল পরিদর্শন করলেও দখলদার ও পাহাড় নিধনকারীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেননি। ফলে তার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করাও সম্ভব হয়নি। একই ব্যক্তি বালুখালী কাস্টমস এর সম্মুখস্থ প্রায় ২ একর বনভূমি ভোগ দখল করছে।

স্থানীয়রা জানান, গত ২০১২-২০১৩ অর্থ বছরে বিদেশী অর্থায়নে বিপুল বনভূমিতে বনায়ন করা হয়েছিল। সৃজিত বনায়ন ধবংস করে ভুমিদস্যু মোঃ খলিলের মতো আরো অনেকে বনভুমি জবর দখল করেছে।

স্থানীয় পরিবেশবাদী সংগঠনের নেতা নুরুল আমিন চৌধুরী জানান, বনভুমি দখল, বসতি স্থাপন, সামাজিক বনায়নের গাছপালা লুটের কারণে এখানকার মুল্যবান প্রাকৃতিক সম্পদ বিলুপ্ত হচ্ছে। আবাস স্থল হারিয়ে বন্য পশু প্রাণি লোকালয়ে হানা দিচ্ছে।

কক্সবাজার পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক সর্দার শরিফুল ইসলাম জানান, পাহাড় কর্তনকারীদের বিরুদ্ধে তদন্ত করে মামলা দায়েরের প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। বালুখালী সামাজিক বনায়নের উপকারভোগী কমিটির সভাপতি বদিউর রহমান সিকদার জানান, সামাজিক বনায়নের গাছ লুটের বিষয়ে উখিয়া রেঞ্জ কর্মকর্তাকে অবহিত করার পরও কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি।

কক্সবাজার দক্ষিণ বন বিভাগের বিভাগীয় কর্মকর্তা (ডিএফও) মোঃ আলী কবির বলেন, বনভুমিতে অবৈধ স্থাপনা নির্মাণে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণসহ উচ্ছেদ অভিযান চালানো হবে।

প্রসংগত, বনভুমি জবরদখলকারীদে সহযোগীতার অভিযোগে ইতোপূর্বে উখিয়ার মধুর ছড়া এলাকায় বনভূমি দখল করে গড়ে তোলা ৫০ টি পাকা স্থাপনা উচ্ছেদ এবং অবৈধ বসতি স্থাপনে সম্পৃক্ততার অভিযোগে উখিয়া রেঞ্জ কর্মকর্তা মোঃ ইব্রাহিম হোসেন , সদর বনবিট কর্মকর্তা মোজাম্মেল হক ও বালুখালী বনবিট কর্মকর্তা মোঃ শাহ জাহান সহ ৩ জন কর্মকর্তাকে সাময়িক বহিস্কার করা হয়।

 

পাঠকের মতামত: