ঢাকা,বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪

অকেজো রাবার ড্যামের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে ৬০ হাজার কৃষক

মাহাবুবুর রহমান, কক্সবাজার :: কক্সবাজারের বাঁকখালী নদীর উপর নির্মিত রাবার ড্যাম সংস্কার কাজের চরম ধীরগতির কারণে কক্সবাজার সদর এবং রামু উপজেলার প্রায় ৬০ হাজার কৃষক চাষাবাদ জন্য পানি পাচ্ছে না। এতে প্রায় ১৩ হাজার হেক্টর জমি অনাবাদি থেকে যাবে বলে মনে করছেন স্থানীয় কৃষকরা।

কৃষকদের দাবী, শহরের পার্শ্ববর্তী চান্দের পাড়া এবং পিএমখালী অংশে নির্মিত রাবার ড্যামটি জরুরী ভিত্তিতে সংস্কারের কথা থাকলেও ঠিকাদার এবং স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অফিস চরম গাফেলতী এবং অনিয়ম দূর্নীতির কারনে অনেকে পথে বসার অবস্থা হয়েছে। তাই দ্র‍ুত রাবার ড্যাম পূর্ন নির্মাণ সহ সংস্কারের দাবী জানিয়েছেন সচেতন মহল।

পিএমখালী ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মোঃ শহীদুল্লাহ বলেন, ১৯৯৫ সালে স্থানীয় কৃষকদের ব্যাপক চাহিদার ভিত্তিতে ঝিলংজা ইউনিয়নের চান্দের পাড়া এবং পিএমখালী ইউনিয়নের ঘাটকুলিয়াপাড়া অংশে নির্মিত রাবার ড্যামটি প্রায় ১ বছর ধরে অকেঁজো হয়ে পড়েছে। সেটার এক অংশে ধ্বসে পড়ার কারনে রাবার ড্যাম ফুলাতে না পারায় এখন ভরামৌসুমে কৃষকরা চাষাবাদের জন্য পানি পাচ্ছে না। আমার জানা মতে সেখানে সরকার দ্রæত রাবার ড্যাম সংস্কারের জন্য ঠিকাদার নিয়োগ করে কাজ করছে তবে কাজ খুবই ধীরগতির বর্তমানে কাজের ৩০% ও শেষ হয়নি। মাত্র কয়েকজন শ্রমিক দিয়ে কাজ করা হচ্ছে এতে কাজ শেষ হতে কয়েক বছর সময় লাগতে পারে এতে সাধারণ কৃষকরা খুবই ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে তাই আমি রাবার ড্যাম পূর্ন নির্মাণ কাজ দ্রæত শেষ করার দাবী জানাচ্ছি।
এদিকে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে এই রাবার ড্যামের কারনে কক্সবাজার সদর উপজেলার ৮ হাজার এবং রামু উপজেলা ৫ হাজার হেক্টর জমিতে চাষাবাদের জন্য পানির সুবিধা পায় প্রায় ৬০ হাজার কৃষক। ১৯৯৫ সালে স্থানীয় প্রকৌশল অধিদপ্তর হতে এই রাবার ড্যাম নির্মাণ করা হলেও এ পর্যন্ত ৩ বার বড় ধরনের সংস্কার বা মেরামত করতে হয়েছে। তবে প্রতিবারেই কাজ হয়েছে খুবই দ্রুত কিন্তু বর্তমানে সংস্কার কাজ হচ্ছে অত্যন্ত ধীর গতীতে এতে সাধারণ কৃষকরা বর্তমানেও চাষাবাদের জন্য পানি না পেয়ে চরম ক্ষতির সম্মুখিন হচ্ছে এবং আগামীতেও ব্যাপক ক্ষতির আশংকা করছে।

রাবার ড্যাম সংস্কারের কাজ করা ঠিকাদার ফারুক জানান, আমি অন্যজনের কাছ থেকে কাজটি নিয়েছি এলজিইডির কর্মকর্তাদের অনুরোধে। সেখানে যে বাজেট ধরা ছিল সেটা বর্তমানে খরচ হয়ে গেছে জানিনা বাকি কাজ কিভাবে করবো সে বিষয়ে এলজিইডি কর্মকর্তাদের সাথে আমার কথা হচ্ছে। আমি চেষ্টা করছি দ্র‍ুত কাজ শেষ করার জন্য।

ঝিলংজা ইউনিয়নের ঘাটপাড়া এলাকার কৃষক আবদুল আলীম বলেন,আমরা দীর্ঘ বছর ধরে বাঁকখালী নদীর পানির উপর নির্ভরশীল হয়ে চাষাবাদ করি বর্তমানে রাবার ড্যামের সমস্যার কারনে পানি না পাওয়ায় শীতকালীন সবজি চাষ করতে পারিনি। আমার ২ হেক্টর জমির মধ্যে খুব অল্প জমিতে শীতকালীন সবজি চাষ করেছি তাও পানির অভাবে ভাল ফলন হয়নি।

পিএমখালী ঘাটকুলিয়াপাড়ার কৃষক শহিদুল ইসলাম বলেন,আমি রাবার ড্যামের খুব কাছের মানুষ তবুও আমি পানি পাচ্ছিনা। আর পানি না হলে চাষাবাদ করা কঠিন। যেহেতু আমাদের আর কোন বিকল্প আয় নেই তাই কৃষিকাজের উপর নির্ভরশীল। এখন রাবার ড্যামের সমস্যার কারনে এলাকার শত শত কৃষক খুবই কষ্টে আছে।

তিনি জানান, বাকঁখালী নদী থেকে অবৈধ ভাবে বালি উত্তোলন করায় রাবার ড্যামের নীচ থেকে মাটি সরে যাওয়ায় রাবার ড্যামটি ধ্বসে পড়েছে। আর বর্তমান সংস্কার কাজ খুবই নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে হচ্ছে এতে কিছুদিন পরে আবারো ধ্বসে পড়ার আশংকা আছে অন্যদিকে সরকারি কোটি কোটি টাকা লুটপাট হচ্ছে।

এদিকে বাঁকখালী রাবার ড্যাম ব্যবস্থাপনা কমিটির সাবেক সাধারণ সম্পাদক বেদারুল আলম বলেন, মূলত প্রায় ৫ বছর ধরে কোন নির্বাচিত ব্যবস্থাপনা কমিটি না থাকায় রাবার ড্যামটি অভিভাবকহীন হয়ে পড়েছে। তাই আমি মনে করি দ্রুত নির্বাচনের মাধ্যমে কৃষকদের কাছে রাবারড্যামের দায়িত্ব দেওয়া হলে সবার জন্য উপকার হবে।

এ ব্যপারে কক্সবাজার সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার সুরাইয়া আকতার সুইটি বলেন,সরকারি কাজে ধীরগতি হওয়ার কারন নেই হয়তো কোন লজিস্টিক কারনে ধীরগতী হতে পারে। তবুও আমাদের পক্ষ থেকে কাজ দ্রæত শেষ করার তাগাদা দেওয়া হবে।

পাঠকের মতামত: