ঢাকা,বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪

কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে নির্মিত ও নির্মাণাধীন সকল স্থাপনা উচ্ছেদের দাবীতে আন্দোলনে পরিবেশবাদীরা

কক্সবাজার প্রতিনিধি :: কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে নির্মিত ও নির্মাণাধীন সকল স্থাপনা উচ্ছেদ করে এর জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের দাবীতে ফের আন্দোলনে নেমেছে স্থানীয় পরিবেশবাদী সংগঠনগুলো। স¤প্রতি সৈকতের সাগরলতা, ঝাউবাগানসহ জীববৈচিত্র্য ধ্বংস করে বাঁধ, দোকানপাটসহ বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণ করছে প্রভাবশালীরা। আর এসব স্থাপনা উচ্ছেদ করে দেশের সর্বোচ্চ আদালতের নির্দেশনা বাস্তবায়নের দাবী পরিবেশবাদী সংগঠনগুলোর।

সম্প্রতি শহরতলীর দরিয়ানগর প্যারাসেইলিং পয়েন্টে জীববৈচিত্র্য ধ্বংস করে গড়ে ওঠা স্থাপনাসহ সমুদ্র সৈকতের সকল স্থাপনা উচ্ছেদের দাবীতে শুক্রবার এক প্রতিবাদ সভা করেছে কক্সবাজারের পরিবেশবাদী সংগঠন বাপা জেলা শাখা। একই দাবীতে রোববার শহরে মানববন্ধন করেছে ‘কক্সবাজার গ্রীণ ভয়েস’ নামের আরেক পরিবেশবাদী সংগঠন।
সোমবার ইয়ুথ এনভায়রনমেন্ট সোসাইটি (ইয়েস) নামের আরেক পরিবেশবাদী সংগঠন কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে নির্মিত ও নির্মাণাধীন সকল স্থাপনা উচ্ছেদ করে দেশের সর্বোচ্চ আদালতের নির্দেশনা বাস্তবায়নের দাবী জানিয়ে কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান, কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক ও পরিবেশ অধিদপ্তর কক্সবাজার কার্যালয়ের উপপরিচালককে চিঠি দিয়েছে। সোমবার (১৮ জানুয়ারী) সংগঠনের প্রধান নির্বাহী ইব্রাহিম খলিল উল্লাহ মামুনের স্বাক্ষরিত এ চিঠিটি দেওয়া হয়।
চিঠিতে বলা হয়েছে- পৃথিবীর দীর্ঘতম কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতটি সরকার কর্তৃক ঘোষিত প্রতিবেশ সংকটাপন্ন এলাকা (ইসিএ) হওয়ায় সৈকতে যেকোন ধরনের স্থাপনা নির্মাণ নিষিদ্ধ।

এছাড়াও ২০১১ সালে জীববৈচিত্র্য ও প্রাকৃতিক পরিবেশ-প্রতিবেশ রক্ষার স্বার্থে কক্সবাজার শহরের নাজিরারটেক থেকে টেকনাফ বদরমোকাম পর্যন্ত ১২০ কিলোমিটার সৈকতে যেকোন ধরনের স্থাপনা নির্মাণ নিষিদ্ধ করেছে সুপ্রীম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগ। কিন্তু প্রচলিত আইন ও দেশের সর্বোচ্চ আদালতের নির্দেশ অমান্য করে সাম্প্রতিক সময়ে সৈকতের বিভিন্ন পয়েন্টে স্থাপনা নির্মাণ করা হচ্ছে। বিশেষ করে সৈকতের হিমছড়ি প্যারাসেলিং পয়েন্টে প্রায় দুই কিলোমিটার বালিয়াড়ী ও ঝাউবন দখল করে একটি সংজ্ঞবদ্ধ চক্র রাতারাতি নির্মাণ করেছে অন্তত ১৫ টি বিভিন্ন ধরণের স্থাপনা।
এসব স্থাপনার মধ্যে রয়েছে ছোট ছোট ঘর, টয়লেট, মসজিদ ও কবুতরের খামার। বালিয়াড়ীতে অবৈধভাবে বসানো হয়েছে চেয়ার। চালানো হচ্ছে পরিবেশ বিধ্বংসী বীচ বাইক। সৈকতের নিষিদ্ধ এলাকায় অবৈধভাবে এসব কর্মযজ্ঞ চললেও সংশ্লিষ্ট কোন কর্তৃপক্ষকে আজ পর্যন্ত কোন ব্যবস্থা নিতে দেখা যায়নি।
এতে করে দেশের সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রীম কোর্টের আদেশ লংঘিত হচ্ছে। তাই কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে নির্মিত ও নির্মাণাধীন সকল স্থাপনা উচ্ছেদ করে দেশের প্রচলিত আইন ও সর্বোচ্চ আদালতের নির্দেশনা বাস্তবায়নের অনুরোধ জানানো হয়েছে।
বিষয়টি নিশ্চিত করে ইয়ুথ এনভায়রনমেন্ট সোসাইটি (ইয়েস) কক্সবাজার এর প্রধান নির্বাহী ইব্রাহিম খলিল উল্লাহ মামুন চকরিয়া নিউজকে বলেন, ‘এসব অবৈধ স্থাপনার বিরুদ্ধে দ্রæত সময়ের মধ্যে ব্যবস্থা নেয়া না হলে দ্বায়িত্ব অবহেলার অভিযোগে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে আইনের আশ্রয় নেব।’
চিঠি পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান লে. কর্ণেল (অব.) ফোরকান আহমেদ বলেন, ‘বিষয়টি দেখার জন্য আমরা লোক পাঠিয়েছি। রিপোর্ট পাওয়ার পরপরই ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
উল্লেখ্য, ১৯৯৯ সালে ইসিএ এলাকা ঘোষণার পর সৈকতে নির্মিত সকল স্থাপনা অবৈধ ঘোষণা করে গত বছর এক ঐতিহাসিক রায় দিয়েছে দেশের সর্বোচ্চ আদালত। তবে এ রায় এখনও কার্যকর হয়নি।

পাঠকের মতামত: