ঢাকা,বৃহস্পতিবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪

১০ বছরে মাদকাসক্তির কারণে ২০০ মা-বাবা খুন

নিউজ ডেস্ক ::  দেশে প্রায় ৭০ থেকে ৭৫ লাখ মাদকাসক্ত রয়েছে। প্রতি বছর মাদকের পেছনে প্রায় ৬০ হাজার কোটি টাকা নষ্ট হচ্ছে। বর্তমানে শিশু ও নারীদের মধ্যে মাদকাসক্তের সংখ্যা বাড়ছে। বিশেষ করে ইয়াবা ছেলেদের মতো মেয়েরাও অবলীলায় গ্রহণ করছে। বিগত ১০ বছরে মাদকাসক্তির কারণে ২০০ মা-বাবা খুন হয়েছেন।

রোববার (১ নভেম্বর) সংসদ ভবনের মিডিয়া সেন্টারে অনুষ্ঠিত ‘মাদক নিয়ন্ত্রণে ডোপ টেস্ট- এই মুহূর্তে করণীয়’ শীর্ষক মিট দ্য প্রেসে এ তথ্য জানানো হয়। শিশু অধিকার বিষয়ক সংসদীয় ককাস এবং সমাজকল্যাণ ও উন্নয়ন সংস্থা (স্কাস) এর আয়োজন করে। একাত্তর টিভির বার্তা সম্পাদক পলাশ আহসান ও পার্লামেন্টনিউজবিডি.কমের সম্পাদক সাকিলা পারভীন প্রবন্ধটি তৈরি করেন। এটি সঞ্চালনা করেন সিনিয়র সাংবাদিক নিখিল ভদ্র।

প্রবন্ধে আরও উল্লেখ করা হয়, মাদকের ভয়াবহতার চিত্রটা বেশ পরিষ্কার। গণমাধ্যমগুলোই বলছে দু-একটি বিশেষ ক্ষেত্র ছাড়া, আজ দেশে যত অপরাধ হচ্ছে প্রতিটির গোড়া মাদকের ঘরে। এই যে গ্যাঙ নামের অপসংস্কৃতি- এই গ্যাঙ তৈরির পেছনেও রয়েছে মাদক। মাদকের কারণে উচ্ছনে যাচ্ছে বহু মেধাবী শিক্ষার্থী। ভাঙছে সমাজ, সংসার ও পরিবার। মাদকের টাকা জোগাড় করতে মা কিংবা বাবার গলায় ছুরি ধরছে সন্তান। কোনো কোনো ক্ষেত্রে ছুরি বসিয়ে দেয়ার ঘটনাও উঠে এসেছে গণমাধ্যমগুলোতে। ভয়াবহ সব উদাহরণ প্রকাশ হচ্ছে প্রতিদিনের খবরে। খোদ মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের হিসাবে দেশে মাদকাসক্তের সংখ্যা প্রায় ৭০ লাখ। এর তিনভাগের দুই ভাগই তরুণ। একসময় ফেনসিডিল, হেরোইনের মতো মাদক বেশি থাকলেও, এখন তার জায়গা দখল করেছে ইয়াবা। কারণ এটি সহজেই বহন করা যায়।

২৪ ধরনের মাদক চলে বাংলাদেশে

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দেশে এখন পর্যন্ত ২৪ ধরনের মাদক উদ্ধার হয়েছে। দুই প্রতিবেশী দেশের সীমান্ত এলাকা থেকে বাংলাদেশে প্রবেশ করে এসব মাদক। মাদকের প্রবেশপথ হিসেবে বাংলাদেশের সীমান্ত সংলগ্ন ৩২টি জেলাকে সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ বিবেচনা করে সর্বশেষ বার্ষিক প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর (ডিএনসি)।

অধিদফতরের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের পশ্চিম সীমান্ত দিয়ে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের হাসনাবাদ, টাকি, বসিরহাট, স্বরূপনগর, বাদুড়িয়া, উত্তর চব্বিশ পরগনা, বনগাঁ, পেট্রাপোল, হেলেঞ্চা, ভবানীপুর, রাণাঘাট, অমৃতবাজার, বিরামপুর, করিমপুর, নদিয়া, মালদহ, বালুরঘাট, আওরঙ্গবাদ, নিমতিতাসহ সীমান্ত সংলগ্ন প্রায় সব এলাকা দিয়ে ১৫টি পয়েন্টে বাংলাদেশের সাতক্ষীরা, যশোর, চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুর, রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, জয়পুরহাট ও দিনাজপুর এলাকায় মাদক ঢুকছে। আর ভারতের আসাম ও মেঘালয়ের বাংলাদেশ ঘেঁষা এলাকাগুলোর চারটি পয়েন্ট দিয়ে মাদক ঢুকছে কুড়িগ্রাম, শেরপুর, ময়মনসিংহ ও নেত্রকোনায়।

বাংলাদেশের পূর্ব সীমান্তে ভারতের আসাম, ত্রিপুরা ও মিজোরামের চারটি পয়েন্ট দিয়ে মাদক ঢুকছে সিলেট, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, কুমিল্লা ও ফেনীতে। এছাড়াও ভারতের দক্ষিণ দিনাজপুর হয়ে নওগাঁয় ফেনসিডিল পাচারের নতুন রুটের সন্ধান পাওয়ার কথা প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। এসব রুট দিয়ে দেশে হেরোইন, ফেনসিডিল, গাঁজা ঠেকাতে বাংলাদেশের আহ্বানে ভারত ইতিবাচক সাড়া দিয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে সীমান্তের ৫০ কিলোমিটারের মধ্যে ফেনসিডিল ও ফেনসিডিল তৈরির উপকরণ সরবরাহ এবং বহন বন্ধে কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে ভারত সরকার।

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের একজন কর্মকর্তা বলেন, অবৈধ মাদক আমদানিতে প্রতি বছর কত টাকা পাচার হচ্ছে এর সুনির্দিষ্ট কোনো হিসাব কারও পক্ষে করা সম্ভব নয়। এক হিসাবে দেখা গেছে, সারাদেশে মাদকাসক্তের সংখ্যা ২৫ লাখের কম নয়।

পাঁচ শতাধিক মাদকাসক্তের ওপর জরিপ চালিয়ে দেখা গেছে, প্রতিদিন গড়ে তাদের ১৫০ টাকার মাদক লাগে। এ হিসাবে একজন মাদকাসক্ত বছরে ৫৪ হাজার ৭৫০ টাকার মাদকের জন্য ব্যয় করে। ২৫ লাখ মাদকাসক্ত বছরে ১৩ হাজার কোটি টাকার মাদক সেবন করে। এসব মাদকের পুরোটাই অবৈধভাবে দেশে আসছে। পাচার হয়ে যাচ্ছে হাজার হাজার কোটি টাকা।

মিয়ানমারের সঙ্গে মাত্র ২৭১ কিলোমিটারের সীমান্তের সবচেয়ে সক্রিয় মাদক রুটগুলো গোটা দেশের মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। কারণ মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশের কক্সবাজার ও সংলগ্ন এলাকা দিয়ে ঢুকছে কোটি কোটি পিস ইয়াবা। বেশির ভাগ ইয়াবা তৈরি হয় মিয়ানমার-চীন সীমান্তের শান এবং কাচিন প্রদেশে। মিয়ানমারের সাবাইগন, তমব্রু, মংডুর মতো ১৫টি পয়েন্ট দিয়ে টেকনাফের সেন্টমার্টিন, শাহপরীর দ্বীপ, ধুমধুমিয়া, কক্সবাজার হাইওয়ে, উখিয়া, কাটাপাহাড়, বালুখালি, বান্দরবানের ঘুমধুম, নাইক্ষ্যংছড়ি, দমদমিয়া, জেলেপাড়ার মতো অর্ধশত স্পট দিয়ে ইয়াবা ঢুকছে বাংলাদেশে।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি মো. শামসুল হক টুকু বলেন, শুধু চাকরি, বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি, গাড়ির ড্রাইভার ও পুলিশদের ডোপ টেস্ট নয়, রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের ডোপ টেস্টের আওতায় আনতে হবে। এটি করতে হবে একটি অধিদফতর গঠনের মাধ্যমে। যে প্রতিষ্ঠান এই ডোপ টেস্টের মান বজায় রাখার ক্ষেত্রে কঠোর ভূমিকা পালন করবে।

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের মহাপরিচালক বলেন, দেশে মাদকের চাহিদা কমলে জোগানও কমে যাবে। এ জন্য আমাদের সবাইকে সচেতন হতে হবে।

সভাপতির বক্তব্যে শিশু অধিকার বিষয়ক সংসদীয় ককাস এবং সমাজকল্যাণ ও উন্নয়ন সংস্থার চেয়ারম্যান জেসমিন প্রেমা বলেন, মাদকপাচার, বেচাকেনার ক্ষেত্রে নারীদের ব্যবহার করা হচ্ছে। বাবা-মা খবর রাখছেন না তার ছেলেমেয়ে কোথায় যাচ্ছে, কার সাথে যাচ্ছে, কেন যাচ্ছে আর কী করছে। অনেক সময় ব্যস্ততার কারণে বাবা-মা ছেলেমেয়েদের সময় দিচ্ছেন না। এতে করে তারা মাদকাসক্ত হয়ে পড়ছে।

পাঠকের মতামত: