ঢাকা,শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪

তোমার ভোটও আমি দেব!

m.r-mahmod,,এম.আর মাহমুদ:
আগে শুনতাম “আমার ভোট আমি দেব, যাকে ইচ্ছা তাকে দেব।” এখন শুনছি “তোমার ভোটও আমি দেব, নির্দিষ্ট একটি প্রতীকে দেব।” গ্রাম পর্যায়ে ইউপি নির্বাচনকে সামনে রেখে ভোটারেরা বড়ই বিপদে আছে। স্বাধীনভাবে কথাও বলতে পারছে না। বর্তমান শাসক দলের প্রতীকটি যেন হযরত নূহ (আঃ) এর কিস্তি। এখানে না উঠলে মহা প্রলয় থেকে রক্ষা পাওয়ার কোন সম্ভাবনা নেই। নৌকার মাঝি ও যাত্রীদের কথাবার্তায় এমনই বুঝা যাচ্ছে। নৌকা প্রতীক ছাড়া অন্যান্য প্রতীক নিয়ে যারা নির্বাচন করছে তারা যেন “ইঁদুর কপালে”। দলের অসংখ্য ত্যাগী নেতাকর্মী মনোনয়ন বঞ্চিত হয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মাঠে থাকলেও তারাও চরম হতাশায়। তাদের মনের কথা শুনতে গিয়ে করুণ আর্তনাদের প্রতিধ্বনি ভেসে উঠছে। ছাত্রজীবন থেকে দল করেছে। দল ক্ষমতায় যাওয়ার পর কাঙ্খিত সুফল তাদের গোলায় উঠেনি। ফলে মনোনয়নের ক্ষেত্রে তাদের ভাগ্যে দলীয় প্রতীক জুটেনি। আবার বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত থেকে নাশকতাসহ আওয়ামীলীগ সরকার পতনের আন্দোলনের সক্রিয় থাকা অনেকেও এবার আওয়ামীলীগের মনোনয়ন পেয়েছেন। তবে এদের কেউ কেউ জেলা আওয়ামীলীগের এক শীর্ষ নেতার নিকটাত্মীয় বলে অভিযোগ উঠেছে।

অপরদিকে সাধারণ ভোটারদের অভিমত ২০১৪ সালের পর থেকে মানুষ বার বার ভোটাধিকার বঞ্চিত হয়েছে। তৃণমূলের ইউপি নির্বাচনে ভোটাধিকার বঞ্চিত হওয়ার আশংকাও কম নয়। ক্ষমতাসীন দলের মনোনয়ন পাওয়ার মাঝিরা প্রকাশ্যে বলে বেড়াচ্ছে। এলাকার উন্নয়ন চাইলে নৌকা প্রতীকে ভোট দিতে হবে। অন্যথায় এলাকায় উন্নয়ন হবে না। দেশের বেশিরভাগ ইউনিয়নে দলীয় প্রতীক ছাড়া অন্যান্য প্রতীক বরাদ্দ পাওয়া প্রার্থী পোস্টার, ব্যানার, যথাযথ স্থানে লাগাতেও পারছে না। রাতে লাগালে সকালে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। কর্মী সমার্থকদের হরহামেশা মারধর করছে। আইনগত ভাবে প্রতিকার পাচ্ছে না। আবার সরকারী দলের প্রার্থী বলে ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নে বিশালাকারের রঙিন ব্যানার, ফেস্টুন ও পোষ্টারে ছেঁয়ে গেলেও প্রশাসন বা নির্বাচন কমিশন ঘুমের ঘোরে আচ্ছন্ন রয়েছে। আইন প্রয়োগকারী সংস্থার লোকজন এসব দেখেও না দেখার ভাঁন করছে। তারা বলছে আমরা হুকুমের গোলাম। ইচ্ছা করলেই আইনগত ব্যবস্থা নিতে পারছে না। একমাত্র আল্লাহই জানে কিভাবে এ অবস্থা থেকে জাতি পরিত্রাণ পায়। ভোট প্রসঙ্গে আলাপ করতে গিয়ে গ্রামের অসংখ্য লোকজনের অভিমত, ‘ল্যাড়াইয়ের মউক বিয়া¹ুনের বউচ (দূর্বল ব্যক্তির স্ত্রী সকলেরই ঠাট্টার পাত্র)’। শক্তিশালী প্রার্থীর পক্ষে ভোট না করলেও বিপদ। ভোট কেন্দ্রে গিয়ে নিজের ভোট নিজে দিতে না পারলে প্রতিকার পাওয়ারও কিছু নেই। নির্বাচন কমিশন শক্তিশালী একটি সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান। কিন্তু অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে নির্বাচন কমিশন একটি প্রতিবন্ধী সংস্থা। বিশিষ্ট পার্লামেন্টারিয়ান ও বর্তমান সরকারের সাবেক মন্ত্রী সুরেঞ্জিত সেনগুপ্ত বর্তমান নির্বাচন কমিশনের অবস্থা দেখে বলেই ফেলেছেন ‘এটা কেমন নির্বাচন কমিশন? নড়েও না, চড়েও না।’ সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মোহাম্মদ এরশাদ বলেছেন, নির্বাচন কমিশন মেরুদন্ডহীন। দু’জনেই বর্তমান ক্ষমতাসীন সরকারের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি। তাদের মুখে এসব বয়ান শুনে ভোটারেরা অনেকটা হতাশ। তবে এটাও সত্য যে এ দেশে ভোট ডাকাতির জনক সাবেক রাষ্ট্রপতি এরশাদই দায়ী। তার মুখ থেকে এ ধরণের বয়ান বেরিয়ে আসা অনেকটা ‘এক বুড়ি আরেক বুড়িকে নানী শাশুড়ী’ বলার মতই। গ্রামের অভিজ্ঞ ও প্রবীণরা বলতে শোনা গেছে, দেশে তৃতীয় ধাপে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে ২৩ এপ্রিল’১৬ইং, সেদিন শনিবার। জানিনা ইউপি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সেই দিন জাতি শনির দশায় পড়ে কিনা!

আবার সরকারি দলের অনেকেই বলতে শোনা গেছে, বিরোধী দলের নেতাকর্মীরা চেয়ারম্যান হলেও এলাকায় উন্নয়ন করা তো দূরের কথা প্রকাশ্যে চলাফেরাও করতে পারবে না। বেশির ভাগ সময় মামলা-হামলায় দিন চলে যাবে। এখন আওয়ামীলীগের যুগ। এক বনে দুই বাঘ থাকা মানায় না। কথা প্রসঙ্গে সরকারের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেছেন, বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর যেভাবে ভোটবিহীন দলের মনোনীত প্রার্থীদেরকে জেলা পরিষদের প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ দিয়েছে, সেভাবে ইউনিয়ন পরিষদে প্রশাসক নিয়োগ দিলে ভোট কেন্দ্রে গিয়ে মানুষের প্রাণহানি হত না। সরকারি কোষাগারের অর্থও বেঁচে যাবে। এখনও সময় আছে নির্বাচন কমিশন ও সরকার কলঙ্কিত নির্বাচন না করে একটি প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে ইউনিয়ন পরিষদে দলীয় নেতাকর্মীদের প্রশাসক হিসেবে বসিয়ে দিলে সব সমস্যা সমাধান হবে রাতারাতি। বর্তমান অবস্থায় অনেক প্রার্থী মাঠেও যেতে পারছে না।

লেখক: প্রবীন সাংবাদিক, চকরিয়া।

 

পাঠকের মতামত: