ঢাকা,বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪

বন্ধ হচ্ছে না প্রাইভেট বাণিজ্য

choching businesssসরকারের পক্ষ থেকে কয়েক দফা আইন করে এবং কয়েক দফা কড়া সতর্ক করেও বন্ধ করা যাচ্ছে না কোচিং বা প্রাইভেট বাণিজ্য। বরং দ্রব্যমূল্যের মত বাড়ছে কোচিং ফি। আবার কমিয়ে আনা হয়েছে কোচিং সময়ও। সম্প্রতি শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে যেসব শিক্ষক কোচিং বা প্রাইভেট বাণিজ্যের সাথে জড়িত থাকবে তাদের এমপিও বন্ধ করার কড়া সতর্কতা জারী করে পরিপত্রও জারি করেছে। তবুও কক্সবাজারে কোচিং বাণিজ্যে পিছিয়ে নেই সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মাধ্যামিক স্কুল এবং কলেজ শিক্ষকরা। শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের অভিযোগ কোচিং বাজার ঠিক রাখতে শিক্ষকরা নানান ভাবে ক্লাসে শিক্ষার্থীদের আকৃষ্ট করে। আর তারাও কিছুটা ভাল ফলাফলের আশায় বাধ্য হয়ে প্রাইভেট পড়ে।
কক্সবাজার সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী অভিভাবক বাহারছড়ার নাজেম উদ্দিন, আবছার কামাল বলেন আমাদের মেয়েরা সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ে। সম্প্রতি তারা বাড়ীতে বায়না ধরছে তাদের শ্রেণি শিক্ষকের কাছে প্রাইভেট পড়তে হবে। কারন তাদের সব বান্ধবিরা পড়ে। শ্রেণি শিক্ষক ইকবাল ফারুক তাকে বলেছে, সবাই তার কাছে প্রাইভেট পড়ে সে কেন আসেনা। পরে তার কাছে মাসে ৫০০ টাকা করে প্রাইভেট পড়তে দিয়েছি ১ মাস যেতে না যেতেই এখন বলছে তাদের শিক্ষক রিয়াজ উদ্দিন এবং আবু সফিয়ান ও তাদের প্রাইভেট পড়তে ইংরেজি বিষয়ে প্রাইভেট পড়তে বলেছে। আমরা মধ্যম আয়ের মানুষ কিভাবে এত খরচ বহন করবো বুঝতে পারছি না। খোঁজ নিয়ে জানতে পেরেছি তারা স্কুলের মেয়েদেরকে দিয়ে কোচিং করতে বাধ্য করে। এটা উচিত না। শহরের ঘোনার পাড়ার বাসিন্দা মোঃ আরিফ বলেন, আমার ছেলে সরকারি প্রাথমিক স্কুলে পড়ে , সে তার বন্ধুদের কাছে শুনেছে জালাল আহম্মদ নামের এক শিক্ষকের কাছে পড়লে ভাল হয়। বাড়িতে সেটা বলার পর খোঁজ নিয়ে জানতে পেরেছি সাহিত্যিকা মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ঐ শিক্ষক ভোলাবাবুর পেট্রোল পাম্পের পাশে রীতিমত বিশাল কোচিং সেন্টার খোলে শত শত ছাত্রছাত্রী পড়ায় এবং সবার কাছ থেকে ৫০০ টাকা করে নেয়। আমি বুঝিনা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এত কোচিংএর কি দরকার। আর জালাল আহাম্মদের সাথে কথা বলে জানতে পারলাম তিনি সংশ্লিষ্ট প্রশাসনকে নিয়মিত টাকা দিয়ে এই কোচিং সেন্টার চালু রেখেছেন। শহরের আইনজীবী এড.আবু তাহের, মোঃ আবদুল্লাহ বলেন, আমাদের জানামতে সরকারি চাকরি করে এধরনের কোন শিক্ষক নিয়ম অনুযায়ী কোচিং বা প্রাইভেটের সাথে জড়িত থাকতে পারেন না। তবে আমরা অভিভাবকরা লক্ষ্য করছি সেই নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করে বেশকিছু শিক্ষক সরাসরি কোচিং সেন্টার খুলে এবং নিজস্ব উদ্যোগে প্রাইভেট পড়িয়ে মাসে কয়েক লাখ টাকা আয় করছে। এমন কি সেখানে সব সরকারি কর্মকর্তাদের বাচ্চারা পড়ে সেটা দেখার কেউ নেই। এদিকে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে কক্সবাজার সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক জাকারিয়া মোঃ হাসান, আব্বাস আহাম্মদ, সুমন তালুকদার, আবদুল আমিন, শাহাজাহান কুতুবী, শাহজাহান কবির, সুমন দত্ত, রফিকুল ইসলাম খান, নারায়ন প্রসাদ দেব, এছাড়া সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক নুরুল আজিম, রিয়াজুল ইসলাম, সুপর্ণা চৌধুরী, মোঃ জাহেদ হোসাইন, পৌর প্রিপ্যার‌্যাটরী উচ্চ বিদ্যালয়ের উৎপল বাবু, আর পেশকার পাড়ার জয়নাল নামের এক শিক্ষক সরাসরি কোচিং এবং প্রাইভেট বাণিজ্যে জড়িত রয়েছেন।
আর কক্সবাজার সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী নাজমুল আলম, ফরিদা ইয়াছমিন, সেতেরা পারভিন বলেন, আমাদের জানা মতে সরকারি কলেজের শিক্ষক মিঠুন চক্রবর্তি, শেখ দিদারুল আলম, নেছারুল হক, মুফিদুল আলম, রাধু বড়–য়া, অহিদুল ইসলাম, নেজাম উদ্দিন ফারুকী, মোঃ কশেম প্রাইভেট বাণিজ্যের সাথে জড়িত। আমাদের জানা মতে বিজ্ঞান বিভাগ, বাণিজ্য বিভাগ আর ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থীরা অনেকটা জিম্মি সবার কাছে। ইদানিং প্রাইভেট বাণিজ্যের সাথে থাকা শিক্ষকরা মাসিক ফি বাড়ানোর জন্য নোটিশ দিয়েছে এর প্রতিবাদ জানিয়েছে অনেকে। আবার কোচিং এর সময়ও কমিয়ে আনার কথা বলছে। এককথায় শতভাগ বাণিজ্যিক হিসাব নিকাশ। তারা বলেন আমাদের জানা মতে বর্তমান শিক্ষকরা ৪০/৫০হাজার টাকার নিচে বেতন নাই। সবার বেতন ভাতা অনেক বেড়েছে তার পরও উনারা শ্রেণিতে পাঠদান সম্পন্ন না করে শিক্ষার্থীদের প্রাইভেট নির্ভর করে রেখেছে। এদিকে শহরের কমার্স কলেজের বেশির ভাগ শিক্ষক নিজেদের শিক্ষকদের বাধ্যতামূলকভাবে প্রাইভেট পড়িয়ে অতিরিক্তি ফি আদায় করে বলেও অভিযোগ করেছে ঐ কলেজের শিক্ষার্থীরা।
এ ব্যাপারে কক্সবাজারের ভারপ্রাপ্ত জেলা শিক্ষা অফিসার রাম মোহন সেন বলেন, সরকার কোচিং প্রাইভেট বিষয়ে সুনির্দিষ্ট নীতিমালা আছে এর বাইরে কোন শিক্ষক প্রাইভেট বা কোচিং বিষয়ে জড়িত থাকলে সে ধরনের কেউ যদি কোন অভিযোগ করে করে তাহলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তিনি বলেন, আমিও ব্যক্তিগতভাবে মনে করি অনেকে কোচিং নিয়ে একটু সীমা লঙ্গন করছে।
এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসক মোঃ আলী হোসেন বলেন, কোন শিক্ষার্থী বা অভিভাবক যদি কোন ধরনের হয়রানির বিষয়ে অভিযোগ করে তাহলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

পাঠকের মতামত: