ইমাম খাইর, কক্সবাজার :: কক্সবাজার শহরের ‘ভিআইপি সড়ক’ হলো শহীদ সরণি। যে সড়কের দুই পাশে সরকারি-বেসরকারি হাই অফিসিয়াল প্রতিষ্ঠানসমূহ। কিন্তু সড়কটির যে ভঙ্গুর দশা তা দেখে বলা যাবে না যে এটি কোন ভিআইটি সড়ক। মাত্র দেড় থেকে দুই কিলোমিটার সড়কে অন্তত ১০০টি ছোটবড় গর্ত হবে।
যেসব গর্তে প্রতিদিন দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছে যানবাহন। বিশেষ করে দুই-তিন চাকার গাড়িগুলো এই সড়ক দিয়ে অতিক্রম করতে গিয়ে পড়ে মহাবেকায়দায়। গর্তে পড়ে আহত হচ্ছে যাত্রী ও সাধারণ পথচারীরা। নষ্ট হয়ে যাচ্ছে যানবাহন।
শহীদ সরণির শুরুতে রয়েছে কক্সবাজার উত্তর ও দক্ষিণ বনবিভাগের অফিস। পর্যায়ক্রমে রাস্তার দুই পাশে পড়েছে জেলা জজ আদালত, পুলিশ সুপার কার্যালয়, জেলা পরিষদ, প্রেসক্লাব, সরকারী গণগ্রন্থাগার, সমাজসেবা অফিস। একটু পরে গেলে পুলিশ সুপারের বাস ভবন, সরকারী অরুণোদয় স্কুল, সার্কিট হাউজ, আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস, বিএসটিআই অফিস, সিভিল সার্জন অফিস, জেলা রেজিস্ট্রি অফিস, এনএসআই অফিস, কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ ও জেলা প্রশাসকের বাংলো।
এছাড়াও এই সড়কে অনেক বেসরকারি অফিস ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান অবস্থিত। তবু প্রশাসনিক বিবেচনায় গুরুত্বপূর্ণ সড়কটিও যেন অভিভাবকহীন। সামান্য বৃষ্টি হলেই এই সড়কে জমে থাকে পানি। আটকে যায় যানবাহন।
গত দুইদিনের বর্ষণে প্রেসক্লাবের সামনের সড়কে আটকে যায় সরকারি একটি প্রতিষ্ঠানের গাড়ি। পরে অনেক চেষ্টার পর সেটি উদ্ধার করা হয়। একইভাবে প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনায় পতিত হচ্ছে সরকারী, বেসরকারী ও ব্যক্তি মালিকানাধীন গাড়ি।
সড়কের এমন বেহাল দশা দেখে ‘এমরান ফারুক অনিক’ নামের একজন যুবক নিজের ফেসবুক ওয়ালে দুঃখ ও ক্ষোভ মিশ্রিত স্ট্যাটাস দেন। তিনি লিখেন, ‘কক্সবাজার শহরখানা এখন দুই শিবিরে বিভক্ত! এক পক্ষে কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (কউক), যারা কক্সবাজারের প্রধান সড়কের দায়িত্বে। অন্যপক্ষ কক্সবাজার পৌরসভা, তারা প্রধান সড়ক বাদে অন্যান্য বা আভ্যন্তরীণ সড়কগুলো। আমি আবার কোন পক্ষেরই না। সোজা বাংলায় বলতে পারি- আমি আমার পক্ষ। তাই পক্ষের নোংরামি বাদ দিয়ে, আসন্ন শুস্ক মৌসুমে কক্সবাজারের প্রধান সড়ক ও আভ্যন্তরীণ সড়কগুলো দ্রুত টেকসই সংস্কার করে আমাদের মুক্তি দিন…।’
এ প্রসঙ্গে কক্সবাজার পৌরসভার মেয়র ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মুজিবুর রহমানের কাছে জানতে চাইলে বলেন, ‘ প্রধান সড়ক তথা হলিডে মোড় থেকে কেন্দ্রীয় বাসটার্মিনাল পর্যন্ত কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের। বাকি সড়কগুলো পৌরসভার অধীনে।
এসব সড়ক-উপসড়কের উন্নয়ন কাজ শুরু হয়েছে। তবে করোনা ও বর্ষার কারণে গত ৫ মাস মতো কাজ বন্ধ ছিল। চলতি বর্ষা শেষে পুরোদমে কাজ শুরু হবে। আগামী ৬ মাসের মধ্যে সড়কের উন্নয়ন দৃষ্টিগোচর করব। ১ থেকে দেড় বছরের মধ্যে দৃষ্টিনন্দন করব।’
মেয়র বলেন, ‘সকড়গুলো সম্পূর্ণ আরসিসি হবে। থাকবে কালভার্ড, ফুটপাথ ও স্ট্রিট লাইট। সন্ধ্যা বেলায় কক্সবাজার শহর দেখতে মনে হবে সিঙ্গাপুর।’
উন্নয়ন কাজ নিয়ে যারা বিভ্রান্তি ছড়ায় তাদের উদ্দেশ্যে মুজিবুর রহমান চকরিয়া নিউজকে বলেন, ‘আমাকে করার জন্য সুযোগ, সময় দিতে হবে। এটা এমন না যে আলাদিনের চেরাগ হাতে পেয়েছি, তা ঘঁষা দিলেই দিনে দিনে হয়ে যাবে।’
সড়কের এমন আধুনিকায়ন হবে যা আগামী ১০০ বছরেও নষ্ট হবে না। শহরের ৩২ কিলোমিটার সড়কের উন্নয়ন দেখার মতো। প্রতি বছর যে রাস্তা ‘খুঁতখুঁত’ হয়ে যায়, তা আর হবে না। এমন মন্তব্য মেয়র মুজিবুর রহমানের।
পাঠকের মতামত: