ঢাকা,বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪

বাস্তবায়ন হচ্ছে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেলপথ ; ২০২০ সালে যাত্রী ও পণ্য পরিবহন

আতিকুর রহমান মানিক, কক্সবাজার ::rel duha-cox

অান্তঃমহাদেশীয় রেল যোগাযোগ নেটওয়ার্কে যুক্ত হচ্ছে পর্যটন রাজধানী কক্সবাজার। প্রায় দুই যুগের অচলাবস্হা কাটিয়ে অবশেষে বাস্তবায়ন হতে যাচ্ছে বহুল প্রত্যাশিত চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেলপথ। এ জন্য ভূমি অধিগ্রহনের প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। ট্রান্স এশিয়ান রেল নেটওয়ার্কের আওতায় এ রেলপথ বাংলাদেশ, মিয়ানমার, থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুর, কোরিয়া, ভিয়েতনাম, চীন ও কম্বেডিয়া হয়ে ইউরোপ পর্যন্ত বিস্তৃত হবে। এ প্রকল্পের মাধ্যমে পর্যটন রাজধানী কক্সবাজার আন্তঃমহাদেশীয় রেল নেটওয়ার্কের আওতায় আসবে। ফলে পর্যটনশিল্পের বিকাশের পাশাপাশি বিস্তৃত হবে অপরাপর ব্যবসা বাণিজ্য ও আমদানী-রপ্তানী। ট্রান্স এশিয়ান রেল নেটওয়ার্কের আওতায় ১১ হাজার ১৭৭ কোটি টাকা ব্যয়ে এ প্রকল্পের প্রাথমিক কাজ এগিয়ে চলছে। ২০২০ সালের মধ্যেই এ রেলপথে পণ্য ও যাত্রীপরিবহন সম্ভব হবে। চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক মেজবাহ উদ্দিন বলেন, চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজারের মধ্যে নতুন রেললাইন স্থাপনের জন্য ভূমি অধিগ্রহণের অর্থ বরাদ্দ পাওয়া গেছে। শিগগিরই প্রশাসনিক কার্যক্রম শুরু হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১৯৯৭ সালে ৩ জুন এ রেলপথ নির্মাণের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছিলেন। চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেললাইন প্রকল্পের পরিচালক ঈশা-ই-খলিল বলেন, ট্রান্স এশিয়ান রেলওয়ের অংশ হিসেবে এ  রেললাইন চট্টগ্রামের দোহাজারী থেকে কক্সবাজারের ঘুনধুম পর্যন্ত বিস্তৃত করা হচ্ছে। সরকার এ প্রকল্পের কাজ অগ্রাধিকার ভিত্তিতে শুরু করেছে। প্রথম দিকে ঘুনধুম পর্যন্ত শুধু মিটার গেজ রেললাইন স্থাপনের কথা থাকলেও নতুন প্রস্তাবনায় ট্রান্স এশিয়ান রেল নেটওয়ার্কের এই অংশে একই সঙ্গে মিটার ও ব্রডগেজ স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। মূলত এ কারণেই প্রকল্প ব্যয় বেড়েছে। চলতি বছরের ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে মূল পর্বের নির্মাণ কাজের দরপত্র আহ্বান করা হবে। প্রকল্প সূত্র জানায়, এ প্রকল্পের আওতায় দোহাজারী থেকে রামু হয়ে কক্সবাজার পর্যন্ত ১০০ কিলোমিটার এবং রামু থেকে ঘুনধুম পর্যন্ত ২৮ কিলোমিটার নতুন রেললাইন স্থাপন করা হবে। এ ছাড়াও ২৬ কিলোমিটার লুপ লাইন স্থাপিত হবে। সাতকানিয়া, লোহাগাড়া, চকরিয়া, ডুলাহাজরা, রামু, ঈদগাহ, কক্সবাজার ও উখিয়ায় মোট ৯টি নতুন রেলস্টেশন নির্মাণ করা হবে। এ ছাড়া ৪৭টি ব্রিজ, ১৪৯টি কংক্রিট বক্স কালভার্ট ও ৫২টি কংক্রিট পাইপ কালভার্ট নির্মিত হবে। এই রেলপথ নির্মাণ করা গেলে পৃথিবীর দীর্ঘতম সমুদ্রসৈকত কক্সবাজারের সঙ্গে দেশের অন্য অঞ্চলসহ  পার্শ্ববর্তী দেশ মিয়ানমারে পণ্য আমদানি-রপ্তানিতে রেলপথ ব্যবহার এবং ভবিষ্যতে ট্রান্স এশিয়ান দেশগুলোর সঙ্গেও যোগাযোগের সুযোগ সৃষ্টি হবে। বাংলাদেশ রেলওয়ের পূর্বাঞ্চল সূত্র জানায়, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার রেললাইন প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করতে চট্টগ্রাম জেলায় ২৮০ একর এবং কক্সবাজার জেলায় ৯৯৩ একর জমি অধিগ্রহণ করা হবে। ভূমি অধিগ্রহণের জন্য চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের দাবিকৃত ৩৯১ কোটি টাকার মধ্যে ৩১২ কোটি টাকা ইতিমধ্যে পরিশোধ করা হয়েছে। গাছপালা এবং বাড়িঘর ছাড়া কক্সবাজার জেলা প্রশাসন অধিগ্রহণের জন্য দাবি করেছে ৩১৪ কোটি টাকা। প্রকল্পটি ২০১০ সালের ৬ জুলাই একনেকের বৈঠকে অনুমোদন দেওয়া হয়েছিল। তখন ব্যয় ধরা হয় ১ হাজার ৮৯২ কোটি টাকা। পরে নতুন করে জরিপ কাজ হয়েছে। এ জরিপ কাজ গত বছরের জুলাই মাসে শেষ হয়। এ ছাড়া দ্বিতীয়বারের জরিপে দোহাজারী-ঘুনধুম রেললাইনের খরচ বেড়েছে প্রায় চারগুণ। বর্তমান জরিপে প্রকল্পের ব্যয় (সম্ভাব্য) প্রস্তাব করা হয়েছে ১১ হাজার ১৭৭ কোটি টাকা। ভূমি অধিগ্রহণের কাজ সম্পন্ন হলেই রেলপথ ও অন্যান্য অবকাঠামো নির্মাণে অর্থ বরাদ্দ দিতে প্রস্তুত রয়েছে এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (এডিবি)। এ প্রকল্প নির্মাণে দেড় বিলিয়ন ডলার ঋণ দিচ্ছে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি)। এর আগে ২০১৩ সালে প্রকল্পটির সম্ভাবতা যাচাই শুরু হয়। এতে তিন কোটি টাকা ব্যয়ে কাজ করে কানাডার পরামর্শক প্রতিষ্ঠান ক্যানারেল কোম্পানি। সহায়তা করে জার্মানির ডিবি ইন্টারন্যাশনাল, অস্ট্রেলিয়ার স্ম্যাক ও বাংলাদেশের এসিই কনসালট্যান্ট। চলতি বছরের জানুয়ারিতে মাঠ পর্যায়ের কাজ শেষ হয়। এরপর ৪ ফেব্রুয়ারি সম্ভাব্য যাচাই প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়। বর্তমানে প্রকল্পটির বিস্তারিত নকশা প্রণয়ন করছে প্রতিষ্ঠানগুলো। কক্সবাজারের সাথে দেশের অন্যান্য শহরের রেল যোগাযোগ নেটওয়ার্ক সৃষ্টি হলে পর্যটন অর্থনীতিতে নতুন মাত্রা যোগ হবে। পাশাপাশি অান্তঃমহাদেশীয় ব্যবসা বাণিজ্য ও যোগাযোগও বৃদ্ধি পাবে বলে আশা করা হচ্ছে।

পাঠকের মতামত: