ঢাকা,বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪

বাংলানিউজ আয়োজিত মতবিনিময় সভায় পর্যটন মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন আরও সাজাতে হবে কক্সবাজারকে

Nupa-News-Pic-200-300x169কক্সবাজার প্রতিনিধি :::
পর্যটন শহর কক্সবাজারের সমস্যাসমূহ কেবল একটি মন্ত্রণালয় কেন্দ্রিক নয়; তাই কয়েকটি মন্ত্রণালয় এক যোগে কাজ না করলে এ সমস্যা সমাধান হবে না বলে মনে করেন স্বয়ং বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটনমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন এমপি।
তিনি বলেছেন, কক্সবাজারকে পর্যটনবান্ধব করতে স্থানীয় সরকার, সড়ক ও যোগাযোগ মন্ত্রণালয় এবং বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে বৈঠক করা হবে। এ বৈঠক কক্সবাজারে করার পরিকল্পনা রয়েছে। যেন সরেজমিনে সমস্যা দেখে আমরা সমাধানের পথ বেছে নিতে পারি। তাই পর্যটন নগরী হিসেবে কক্সবাজারের সব সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করতে দ্রুত সময়ের মধ্যে আন্ত?ঃমন্ত্রণালয়ের বৈঠক কক্সবাজারেই করার পরিকল্পনার কথা জানান তিনি।
আন লাইন নিউজ পোর্টাল বাংলানিউজের উদ্যোগে গতকাল শনিবার বিকেলে পেঁচারদ্বীপস্থ মারমেইড বিচ রিসোর্টে আয়োজিত ‘বছরজুড়ে দেশ ঘুরে: কক্সবাজারে পর্যটন’ শীর্ষক এক মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে মন্ত্রী এ পরিকল্পনার কথা বলেন।
এসময় মন্ত্রী বলেন, পর্যটন শিল্পের উন্নয়ন শুধু পর্যটন করপোরেশনের একক চেষ্টায় সম্ভব নয়। এ শিল্পের উন্নয়নের জন্য কানেকটিভির প্রয়োজন। এজন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোর সঙ্গে বৈঠক করে একটা সিদ্ধান্তে আসতে হবে। এ বৈঠকে স্থানীয় প্রতিনিধিদের মতামতও নেওয়া হবে।
কক্সবাজারকে নিয়ে তৈরী হওয়া মাস্টারপ্ল্যানের কথা উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, আমরা কক্সবাজারকে পর্যটকবান্ধব হিসেবে গড়ে তুলতে এখনো পারিনি। কক্সবাজার সারাবছরের পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে ওঠেনি। যেমন থাইল্যান্ডের পাতায়া বিচসহ অন্যান্য বিচ সারাবছরের জন্যই উপযোগী। তার জন্য একটি সামগ্রিক মাস্টারপ্ল্যান করার প্রয়োজন রয়েছে। তিনি বলেন, এ কক্সবাজারকে আরও সাজাতে হবে।
রাশেদ খান মেনন বলেন, পর্যটন শিল্প দিন দিন এগিয়ে যাচ্ছে। ১১ লাখ লোক পর্যটনের সঙ্গে পরোক্ষ ও প্রত্যক্ষভাবে জড়িত। আগামী ১০ বছরে এ সংখ্যা দ্বিগুন হবে বলে আশা করছি।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে কক্সবাজার-৩ আসনের সংসদ সদস্য সাইমুম সরওয়ার কমল বলেন, কক্সবাজারের ডেভেলপম্যান্ট না হলে মানুষ আমাকে গালি দেয়। কারণ যারা এ কক্সবাজারে আসে তারাই উন্নয়ন না দেখলে আমাকেই গালি দেয়। যে এখানকার এমপিরা কি করে? কাজ করে না।
তিনি কক্সবাজারের উন্নয়নের জন্য কয়েকটি মন্ত্রণালয়কে একযোগে কাজ করার প্রস্তাব উপস্থাপন করেন এবং বলেন, কক্সবাজার উন্নয়নে যেহেতু কয়েকটি মন্ত্রণালয়ের জড়িত তাই তাদের মধ্যে সমন্বয়ের প্রয়োজন রয়েছে।
সাংসদ কমল কক্সবাজারের মেগা উন্নয়ন বাস্তবায়ন করতে কক্সবাজার পৌরসভাকে সিটি করপোরেশনে পরিণত করার দাবিও জানান।
অনুষ্ঠানের অপর বিশেষ অতিথি ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, ইন্দোনেশিয়া তাদের ভিসা পদ্ধতি সহজ করেছে পর্যটন বিকাশের জন্য। বাংলাদেশেরও এমন কিছু উদ্যোগ নিতে হবে পর্যটক বাড়াতে হলে। এক্ষেত্রে ভিসা প্রক্রিয়া সহজ করে পরিবর্তন আনতে হবে।
আগেই দাবি ওঠে চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার রুটে ইউএস-বাংলার ফ্লাইট চালু করার। পর্যটনমন্ত্রী নিজেও বেসরকারি এয়ারলাইন্সটির ব্যবস্থাপনা পরিচালককে সে কথা স্মরণ করিয়ে দেন। তিনি বলেন, কথা এখনই দিতে হবে না, তবে বিষিয়টি যেনো তিনি গুরুত্বের সঙ্গে দেখেন।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে কক্সবাজার ২ আসনের সংসদ সদস্য আশেক উল্লাহ রফিক বলেন, কক্সাবাজার শহরে শুধু হোটেল গড়ে তুললে যে ব্যবসা হয় এই ধারণা ভুল। হুমায়ূন আহমেদ সেন্টমার্টিন গিয়েছিলেন বলে আজ সেন্টমার্টিন চেনে সারা বাংলাদেশ। তিনি মহেশখালী যাননি বলে এখনও পিছিয়ে মহেশখালী। তবে গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণ হলে মহেশখালী বিশ্বময় পরিচিত হয়ে উঠবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
জেলা প্রশাসক মো. আলী হোসেন বাংলানিউজের রিপোর্টগুলোর প্রশংসা করে বলেন, এরই মধ্যে কিছু কিছু সমস্যার সমাধান আমরা করতে পেরেছি। তবে কক্সবাজার নিয়ে তার চোখে সম্ভাবনার দিকগুলোই বেশি। বললেন, প্রশাসন থেকে আমরা ভালো কিছু কাজও করি। বাংলানিউজ ভালো কাজগুলোও সামনে এনেছে বলে ধন্যবাদ জানান তিনি।
মারমেইড ইকো বিচ রিসোর্টের তরুণ উদ্যোক্তা আনিসুল হক চৌধুরী বলেন, বিচকে অক্ষত রেখেই আমাদের আরও বিস্তৃত ইকো রিসোর্ট তৈরি করতে হবে। নতুন নতুন ট্যুরিজমের দিক উন্মোচন করতে হবে। তিনি বলেন, আমরা এটিকে পৃথিবীর দীর্ঘতম সিবিচ বলছি। কিন্তু এক নজরে সে সৈকত দেখার কোনও একটি স্থান নেই। পাশেই হিমছড়ি টিলা রয়েছে সেখানে কেবল কার দিয়ে, এস্কেলেটর বসিয়ে সেই সুযোগ তৈরি করা যায়।
কক্সবাজার ট্যুরিষ্ট পুলিশের সহকারী কমিশনার রায়হান কাজমী বলেন, কক্সবাজারের লাবনী পয়েন্ট সুগন্ধা ও কলাতলী তিনটি বিচেই দিনে-রাতে ২৪ ঘণ্টা নিরাপত্তার কাজ করছে ট্যুরিস্ট পুলিশ। পুরো এলাকা জুড়ে ১৩৯ জন ট্যুরিস্ট পুলিশ কাজ করে। স্বল্প সংখ্যক জনবল নিয়ে পুরো বিচের নিরাপত্তা কাজ করতে আমাদের কষ্ট হয়। তবুও আমরা কাজ করছি।
বাংলানিউজের এডিটর ইন চিফ আলমগীর হোসেনের সভাপতিত্বে এ আয়োজনে অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মো. আলী হোসেন, কক্সবাজার ট্যুরিস্ট পুলিশের সহকারী কমিশনার রায়হান কাজেমী, বিচ ম্যানেজমেন্ট কমিটির সদস্য ও জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট সিরাজুল মোস্তফা, দৈনিক আজকের কক্সবাজার সম্পাদক ও জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক মুজিবুর রহমান, কক্সবাজার সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি আবু তাহের, মারমেইড গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আনিসুল হক চৌধুরী সোহাগ, স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান আবদুল মাবুদ প্রমুখ।

পাঠকের মতামত: