ঢাকা,শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪

উখিয়া ইউপি নির্বাচন: পালংখালী ইউনিয়নে আওয়ামীলীগ-বিএনপির মনোনয়ন দৌড়ে একঝাঁক মেধাবী তারুণ্য

zzzzzফারুক আহমদ,

উখিয়া উপজেলার সর্বশেষ প্রান্তের ইউনিয়ন হচ্ছে পালংখালী। উখিয়া-টেকনাফ সীমান্ত এলাকায় অবস্থিত পালংখালী ইউনিয়ন নানা কারণে বেশ আলোচিত ও সমালোচিত। বিশেষ করে চিংড়ি প্রজেক্ট দখল বে-দখল, আধিপত্য বিস্তার, নিজস্ব গ্র“প ও রাজনীতির নেতৃত্ব নিয়ে ব্যাপক ঘটনা প্রবাহ রয়েছে। আওয়ামীলীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ, বিএনপি, যুবদল ও ছাত্রদলের জেলা পর্যায়ে শীর্ষ পদে নেতৃত্ব দিয়েছেন এ ইউনিয়নের মেধাবী ও দক্ষ নেতৃবৃন্দরা। এবারের ইউপি নির্বাচনে আওয়ামীলীগ-বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী প্রার্থীরা হচ্ছে কক্সবাজার জেলার শীর্ষ পদে নেতৃত্ব দেওয়া একঝাঁক মেধাবী তারুণ্য।

সচেতন ভোটারদের সাথে কথা বলে জানা যায়, দীর্ঘ ৪০ বছরের অধিক পালংখালী ইউনিয়নের চেয়ারম্যানের পদটিতে নির্বাচিত হয়ে আসছিল দু’রাজনৈতিক পরিবার। তারা হচ্ছেন কক্সবাজার জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক মরহুম আনোয়ার ইসলাম চৌধুরী অন্যজন হচ্ছে মুক্তিযোদ্ধা চেতনার বিশ্বাসী মরহুম মকবুল হোসেন এমএ। তাদের অবস্থান পালংখালীর একই গ্রামে। অর্থাৎ আঞ্জুমান পাড়ায়। এই দু’রাজনৈতিক নেতার রয়েছে নিজস্ব ভোট ব্যাংক ও জনপ্রিয়তা। ২০১১ সালের নির্বাচনে বিএনপি সমর্থিত গফুর উদ্দিন চৌধুরী সবাইকে চমক দিয়ে পালংখালী ইউনিয়নে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন।

এবারের নির্বাচনে আওয়ামীলীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী সম্ভাব্য চেয়ারম্যান প্রার্থীরা হচ্ছেন, জেলা যুবলীগের সাবেক উপ-দপ্তর সম্পাদক শাহাদত হোসেন জুয়েল, জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি আলী আহমদ, উপজেলা আওয়ামীলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট জমির উদ্দিন ও ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক এম.এ মনজুর। বিএপির মনোনয়ন প্রত্যশীরা হল, বর্তমান চেয়ারম্যান গফুর উদ্দিন চৌধুরী, কেন্দ্রীয় যুবদলের নির্বাহী সদস্য এম মোক্তার আহমদ। স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে হাফেজ মাওলানা শাহ আলমের নাম শুনা যাচ্ছে।

বর্তমান চেয়ারম্যান এম. গফুর উদ্দিন চৌধুরী বলেন, স্থানীয় ভাবে আমার ব্যাপক জনপ্রিয়তা ও বিশাল বংশের কারণে অসংখ্য আতœীয়স্বজন রয়েছেন। এলাকায় ব্যাপক উন্নয়ন ও সমাজের ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা সহ জনসেবায় নিজেকে আতœনিয়োগ করায় এবারও চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করার প্রস্তুতি রয়েছে। গেল ইউপি নির্বাচনে আওয়ামীলীগ সমর্থিত ও বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীকে পরাজিত করে চেয়ারম্যন নির্বাচিত হয়েছিলাম। তাই এবারের নির্বাচন দলীয় প্রতীকে অনুষ্ঠিত হওয়ায় একটু বিব্রত অবস্থায় পড়েছি। অপর এক প্রশ্নের জবাবে, বিএনপির মনোনয়ন নিয়ে নির্বাচন করবেন কি না তিনি সু-নির্দিষ্ট কিছু বলতে না পারলেও পারিবারিক মুরব্বী, সাধারণ ভোটার ও শুভাকাংখিতদের পরামর্শ নিয়ে বিএনপির মনোনয়ন নিয়ে অথবা স্বতন্ত্র প্রার্র্থী হিসাবে নির্বাচন করবেন।

আওয়ামীলীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী জেলা যুবলীগ নেতা শাহাদত হোসেন জুয়েল জানান, ১৯৯৪ সালে পৌর প্রিপ্রাটারী স্কুল ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি দায়িত্ব নিয়ে ছাত্র রাজনীতি শুরু করেন। ১৯৯৮ সালে কক্সবাজার জেলা ছাত্রলীগের সদস্য এবং ২০০৪ সালে জেলা ছাত্রলীগের দপ্তর সম্পাদক হিসাবে দায়িত্বপালন করে। ২০১০ সালে জেলা যুবলীগের উপ-দপ্তর সম্পাদক এবং বর্তমানে জেলা স্বেচ্ছাসেবকলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক হিসাবে দায়িত্ব পালন করছে।

তিনি আরো বলেন, আমার মরহুম পিতা মকবুল হোসেন এমএ এলাকার গণ মানুষের সমাজসেবক ছিল। তিনি ১৯৮৩ সাল ও ১৯৯২ সালে পালংখালী ইউনিয়ন পরিষদে সফল চেয়ারম্যান হিসাবে দায়িত্বপালন করেছিল। আমার পিতার মারা যাওয়ায় গত ২০১১ সালে আমি সর্বপ্রথম চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দিতা করে মাত্র অল্প ভোটের ব্যবধানে হারিয়ে যায়। আমার পিতার দীর্ঘদিনের রাজনীতি ও মানুষের সেবা করায় এলাকায় আমাদের ব্যাপক জনসমর্থন রয়েছে। আমিও পিতার আদর্শ ও স্বপ্ন বাস্তবায়ন করার জন্য দিনরাত্রী মানুষের সেবা করে আসছি। তাই আওয়ামীলীগের মনোনয়ন নিয়ে নৌকার প্রতীকে প্রতিদ্বন্দিতা করলে আমি চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার দৃঢ় আশাবাদী।

বিএনপির দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশী এম মোকতার আহমদ জেলায় জাতীয়তাবাদী পরিবারে এক মেধাবী তরুণ নেতা। তার বর্ণাঢ্য রাজনীতি আকাশ চুম্বি জনপ্রিয়তা রয়েছে। তিনি কে বলেন, কক্সবাজার সরকারী কলেজ ছাত্রদলের আহ্বায়ক হিসাবে দায়িত্বপালন করার পর ২০০২ সালে কক্সবাজার জেলা ছাত্রদলের সভাপতি নির্বাচিত হন। ২০০৫ সালে জেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বপালন করেন। মোকতার আহমদ কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের নির্বাহী সদস্য ছিলেন। বর্তমানে তিনি কেন্দ্রীয় যুবদলের নির্বাহী সদস্য এবং জেলা বিএনপির সদস্য হিসাবে রয়েছেন। তিনি বলেন, ২০১১ সালের নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দিতা করে জনগণ ও সাধারণ ভোটারদের ব্যাপক সমর্থন পেয়ে বিপুল ভোট পান। এবারে বিএনপির মনোনয়ন নিয়ে ধানেরশীর্ষ প্রতীকে নির্বাচন করলে জয়ী হওয়ার যতষ্ট সুযোগ ও সম্ভাবনা রয়েছে।

পালংখালী উচ্চ বিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি নির্বাচিত হয়ে আলী আহমদের ছাত্র রাজনীতি শুরু। ২০১০ সালে কক্সবাজার জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি নির্বাচিত হয়ে পুরো জেলায় আলোচিত হয়ে ছাত্রসমাজের প্রিয়মূখ উঠে তিনি। সাবেক জেলা ছাত্রলীগ সভাপতি আলী আহমদ। তিনি বলেন, দক্ষিণ এশিয়ার সর্ববৃহৎ সংগঠন বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের ছাত্রসংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগ কক্সবাজার জেলা শাখার সভাপতি হিসাবে ২০১০ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত সফলতার সহিত দায়িত্বপালন করেছি। গত ২ বছর ধরে আমার নিজ এলাকা পালংখালী ইউনিয়নে গ্রাম থেকে গ্রাম ও প্রত্যন্ত অঞ্চলে ছুটে গিয়ে মানুষের সাহয্য সহযোগিতা ও অবহেলিত এলাকার উন্নয়নে সম্পৃত্ত হই। বর্তমান আওয়ামীলীগ সরকারের সহযোগিতা ও উখিয়া-টেকনাফ আসনের সংসদ সদস্য আবদুর রহমান বদির একান্ত সহযোগিতায় রাস্তাঘাট, ব্রীজ, কালভাট, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, বেরিবাঁধ নির্মাণ ও বিদ্যুৎতের লাইন সম্প্রসারণসহ জনসেবা কাজে নিজেকে উজাড় করে দিয়েছি। তিনি আরো বলেন, সাধারণ পরিবারের সন্তান হিসাবে সকল স্থরের মানুষ ও ভোটারদের সাথে আমার ব্যাপক সম্পর্ক ও জনপ্রিয়তা রয়েছে। আওয়ামীলীগের মনোনয়ন নিয়ে নৌকার প্রতীকে নির্বাচন করলে আমার বিজয় কেউ ঠেকাতে পারবে না।

অপর স্বতন্ত্র প্রার্থী দুবাই প্রবাসী হাফেজ মাওলানা শাহ আলম দৈনিক কক্সবাজার কে জানান, বিদেশের কষ্টার্জিত অর্থ দিয়ে থাইংখালী এলাকায় স্কুল, মাদ্রাসা, হেফজখানা, ফোরকানিয়া মাদ্রাসাসহ বিভিন্ন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছি। এছাড়াও ব্যক্তিগত অর্থ দিয়ে এলাকার অবহেলিত গ্রামের রাস্তাঘাট নির্মাণ করেছি। এলাকায় সাধারণ ভোটারদের প্রতি আমার জনপ্রিয়তা রয়েছে।

উল্লেখ্য যে, নির্বাচন কমিশনের তপশীল অনুযায়ী আগামী ৪ মে উখিয়ার পালংখালী ইউনিয়নে মনোনয়ন পত্র দাখিলের শেষ তারিখ এবং ৪ জুন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।

পাঠকের মতামত: