ঢাকা,শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪

রাজাখালীর রাজা হলেন ছৈয়দ নূর !

030303_1:::: এম.আর মাহমুদ ::::

এক সময়ের জমিদার শাসিত কক্সবাজার জেলার পেকুয়া উপজেলার রাজাখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হিসেবে নির্বাচিত হয়ে বাজিমাত করলেন জেলার আলোচিত সমালোচিত ও বহু মামলার আসামী ছৈয়দ নূর। জনগণের ভোটে ছৈয়দ নূর বিজয় দেখলেও নিজের ভোটটি নিজে প্রয়োগ করতে পারেনি। বেরসিক একজন ভোটার মন্তব্য করতে শোনা গেছে, যে গাভী দুধ দেয় সে গাভী কি কখনো নিজের দুধ নিজে পান করে?

অবিভক্ত চকরিয়ার ১নং ইউনিয়ন ছিল রাজাখালী। বর্তমানে পেকুয়া উপজেলারও ১নং তালিকায় রয়েছে রাজাখালী। এ ইউনিয়নের বেশিরভাগ ভূ-সম্পত্তির মালিকানা ২টি জমিদার পরিবারের। এ ইউনিয়নের বেশিরভাগ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠার পিছনে বধন্যতা রয়েছে ওই দুই জমিদার পরিবারের। বেশিরভাগ মানুষ শ্রমজীবী। করে ধরে খায়, কারও দ্বারে নাই। ইউনিয়ন সৃষ্টির পর থেকে বেশিরভাগ সম্মানি ও যোগ্য ব্যক্তি চেয়ারম্যান হিসেবে নির্বাচিত হয়েছে। তাদের মধ্যে বিশিষ্ট জমিদার মরহুম মোহাম্মদ কবির চৌধুরী, বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ মাস্টার নুরুল ইসলাম, আলমগীর চৌধুরী, জমিদার পুত্র ফরিদ কবির চৌধুরী, শাহাদত আলী, আনোয়ার হোসেন সিকদার ও নজরুল ইসলাম সিকদার। তারা প্রতিজনেরই নিজস্ব ও পারিবারিক পরিচিতি রয়েছে। নিজস্ব যোগ্যতা বলে এসব গুণি ব্যক্তি চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছে। সর্বশেষ ২০১৬ সালের সদ্য সমাপ্ত ইউপি নির্বাচনে দলীয় মনোনয়নের যুগেও নৌকা প্রতীকের মাস্টার আজমগীর চৌধুরী ও ধানের শীষ প্রতীকে সাবেক চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন সিকদারকে কুপোকাত করে বিপুল ভোটে নির্বাচিত হলেন স্বতন্ত্র প্রার্থী ছৈয়দ নূর।

ছৈয়দ নূরের নিজস্ব কোন পরিচিতি নেই। যে পরিচিতি আছে তার কোন সুখ্যাতি নেই। তারপরও সাধারণ ভোটারেরা ছৈয়দ নূরকে এত বেশি ভোট দেয়ার মোজেজা কি তা হয়ত একদিন বুঝা যাবে। আ’লীগ ও বিএনপি’র দুইজন প্রভাবশালী প্রার্থীকে ভোট না দিয়ে কেন ছৈয়দ নূরকে ভোট দিয়েছে তা বলতে পারবে রাজাখালীর সাধারণ পাবলিক। শুটকির গোদামে বিড়াল পাহারাদার হলে যে অবস্থা হয় সে অবস্থা যেন এ ইউনিয়নবাসীর না হয়। আল্লাহ পৃথিবীতে যে সময় যেমন কওম ছিল তেমনি পয়গাম্বর পাঠিয়েছে। আবার তা বলে যারা ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছে তাদের অনুভূতিতে আঘাত দেয়া কোন যুক্তিকতা নেই। গণতন্ত্রের সুফল যেমন আছে তেমন কুফলও রয়েছে। অনেক সময় গণতন্ত্রের আবেগে সাধারণ মানুষ অযোগ্য, অতর্ব ও খারাপ প্রকৃতির মানুষকে নির্বাচিত করে থাকে। আল্লাহ ইচ্ছা করলে রাজাকে ফকির, ফকিরকে বাদশা বানাতে পারে। যার একটি উৎকৃষ্ট প্রমাণ রাজাখালী। সমাজে সুশীল দাবীদার অনেকেই আত্ম অহমিকায় ভোগে। অহংকার ভাল নয়। সমাজে উচ্চবর্ণের লোকজন মনে করে ভাত ছিটালে কাকের অভাব হয় না। ভাত চিটালে কাক পাওয়া কাক জুটলেও কোকিল জুটে না।

বর্তমান নির্বাচনে মানুষ নির্বাচন কমিশনের ভোট পদ্ধতির ওপর আস্থা হারিয়েছে বলে যোগ্য ব্যক্তিরা ক্রমান্বয়ে নর্বাসনে যেতে শুরু করেছে। ভোটারদের আস্থা নষ্ট হওয়ার কারণে এসব অঘটন ঘটছে। এক মনিষী বলেছিলেন, এমন একটি সময় আসবে যে সময় জ্ঞানী গুণী ও যোগ্য ব্যক্তিরা নিজের যোগ্যতার জন্য অনুশোচনা করবে। আর অযোগ্য ব্যক্তিরা তাদের অযোগ্যতার জন্য উল্লাস বোধ করবে। ওই মনিষী সময়টি কখন না বললেও অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে এখনই সে সময় জাতি অতিবাহিত করছে। তারপরও জনগণের ভোটে নির্বাচিত ইউপি চেয়ারম্যান ছৈয়দ নূরকে অভিনন্দন জানানো যায় একটি কারণে। সে সমাজের জন্য যতই খারাপ হোক, নিজের ভোটটি নিজে দিতে না পারলেও চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়ে প্রমাণ করেছে জনগণই ক্ষমতার উৎস।

 

পাঠকের মতামত: