ঢাকা,শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪

মহেশখালী-কক্সবাজার জেটি ঘাটের-এ বিড়ম্বনার শেষ কোথায় ? নিরব প্রশাসন

আবদুর রাজ্জাক, কক্সবাজার ::  মহেশখালী-কক্সবাজার জেটিঘাটের যাত্রীদের ভোগান্তি শেষ হবে কবে ? জেলার সাথে মহেশখালী দ্বীপের যাতায়াতের একমাত্র পথ নৌ-রুটের, দু’ঘাটের চিত্র দেখলে মনে হয় এখানে কোন সরকারের কর্তৃপক্ষ নেই। ২০ টির অধিক স্পীড বোট ঘাটে মজুদ থাকলেও শতশত যাত্রীদের অনুরোধে কেন ভাড়ায় ব্যবহার হচ্ছেনা সে বিষয়টি জানার কারো অধিকার নেই। যার যেমন ইচ্ছা তেমনি ভাবেই চলছে ঘাটের চলাচল। যাত্রী অধিকারে তোয়াজ নেই বোট মালিক ও সরকারী কর্তৃপক্ষের। জেটি ঘাটের-এ বিড়ম্বনার শেষ কোথায়—? নিরব প্রশাসন।

বোটে উঠতে পারা যেন যুদ্ধ জয়ের সমান। জীবন ঝুঁকি নিয়ে বোটে উঠছে নারী শিশুসহ সাধারণ মানুষ। উপকূলীয় দ্বীপ উপজেলা মহেশখালী-কুতুবদিয়ার জনমানুষের যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম মহেশখালী-কক্সবাজার নৌ-রুটে ব্যপক নৈরাজ্যের সৃষ্ঠি হয়েছে। একটি সংঘবদ্ধ সিন্ডিকেটের কারণে এমন অবস্থার সৃষ্টি হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। বর্তমান পর্যটন মৌসুম শুরু হওয়ার পর থেকে এখানে পর্যটক ও সাধারণ যাত্রী হয়রানীর মাত্রা বহুলাংশে বেড়ে গেছে। এখানে দুইটি ঘাটে একাধিক বোট থাকলেও মালিক-কর্তৃপক্ষের একঘোয়ামী সিন্ডিকেটবাজীর কারণে খেয়া পারাপারে ভোগান্তির সৃষ্টি হচ্ছে বলে জানাগেছে।

বিভিন্ন সূত্রের সাথে কথা বলে জানাগেছে, কক্সবাজার-মহেশখালী ফেরীঘাটের ইজারা প্রথা বাতিল হওয়ায় এই খাত থেকে সরকারের রাজস্ব আদায় প্রায় অর্ধেকে নেমে এসেছে। ফলে সরকার যেমন হারাচ্ছে রাজস্ব তেমনি মহেশখালীর সাধারন মানুষ ওই ঘাটের খাস খালেকসনের নামে প্রভাবশালীদের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছে। এখানে সরকারী খাস কালেকশনের আড়ালে সম্প্রতি টোল আদায়ের মূল দায়িত্ব আবারও প্রভাবশালী সিন্ডিকেটের কাছে চলে যাওয়ায় এনিয়ে সিন্ডিকেটের বাইরে অবস্থান করা সাধারণ বোট মালিকদের সাথে চরম দ্বন্দ্ব শুরু হয়েছে। ফলে মহেশখালীর সাড়ে ৪ লক্ষ মানুষসহ প্রতিদিন যুক্ত হওয়া হাজার হাজার পর্যটক দ্বীপের সাথে যোগাযোগ করতে যেতে চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন।

জানাগেছে, বিগত ২০১০ সালের ১৩ এপ্রিল বাংলা ১৪১৭ সালের জন্য ঘাটটি সর্বোচ্চ দরে ইজারা পেয়েছিলেন মহেশখালীর ব্যবসায়ী মনিরুল ইসলাম। সেসময় ঘাটটির ইজারা বাবদ সরকার মোট ১ কোটি ২৩ লাখ ৯০ হাজার টাকার রাজস্ব পেয়েছিলেন। নানা টানাপোড়েনের জের ধরে পরবর্তীতে উচ্চ আদালতের আদেশে ইজারা ও এই ইজারা পদ্ধতি বাতিল করা হয় বলে সূত্রে প্রকাশ। ইজারা বাতিলের জন্য আদালতে জনস্বার্থে আবেদনটি করেছিলেন মহেশখালী পৌরসভার বর্তমান মেয়র মকছুদ মিয়া।তবে জনস্বার্থে নামে মামলাটি হলেও পরবর্তিতে বর্তমান সময়কাল পর্যন্ত ব্যবসায়িক ভাবে ভাল লাভবান হচ্ছে ওই পক্ষটির সাথে যুক্ত থাকা লোকজনই-এমন অভিযোগ একাধিক সূত্রের। অভিযোগ রয়েছে বর্তমানে এই খাসকালেকসন পদ্ধতিটি ঠিকিয়ে রাখতে ওই মহলটির সাথে গোপনে আতাত করে চলেছেন সঙ্গবদ্ধ সিন্ডিকেট। এতে ফেরি পারাপারে ভুক্তভোগিরা মনে করেন ‘যে যায় লক্ষায় সে হয় রাবণ’ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। ওয়াকিবহাল মহল মনে করেন রাজনৈতিক পালাবদলের মাঝে যেসব ব্যক্তিগণ মহেশখালী উচ্চ ক্ষমতায় আসিন হননা কেন এইসব ঘাটের ইস্যুতে ব্যবসায়ীক অর্থের যোগসূত্রতায় তারা নৈতিক ও জনগণের কাছে প্রতিশ্রুত অবস্থান থেকে সরে এসে নীরব দর্শকের ভূমিকায় লিপ্ত হন বলে সাধরণ মানুষের অভিমত। এদিকে আদালতে উত্তাপিত অভিযোগে বলা হয়েছিল, উচ্চ দরে ফেরীঘাট ইজারা দিলে জনগণ আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। আদালত বাদীর আর্জির প্রতি আস্থা রেখে ইজারা বাতিলের আদেশ দেন। এরপর থেকে শুরু হয় বহুল আলোচিত এই খাস কালেকশন। অভিযোগ রয়েছে বর্তমানে নানা অনিয়ম, অব্যবস্থাপনা, ইচ্ছামত টোল আদায়, নৌযানের সিরিয়াল প্রদানসহ নানা স্বেচ্ছাচারী কার্যকলাপ অব্যহত রয়েছে বলে অভিযোগ করেন সাধারণ যাত্রীরা। তারা বলেন বর্তমানে বোটের সিরিয়াল মানা হচ্ছে না। সিন্ডিকেটের বাটগুলো দৈনিক ৫ থেকে ৭টি ট্রিপের ছাড় পেলেও অন্যান্য বোট মালিকদের ট্রিপ দেয়া হচ্ছে নামে মাত্র ফলে অনেক সময় ঘাটে বোট থাকলেও সিডিউল না থাকার কারণে যাত্রীদের নিয়ে গন্তব্যে ছেড়ে যেতে পারছেননা বলে জানিয়েছেন একাধিক স্পীড় বোট চালক। সাথে সাথে চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছে দেশ-বিদেশ থেকে মহেশখালী আসা পর্যটক ও সাধারণ যাত্রীর। এই নৌ-রুট ব্যাবহারকারী নিয়মিত যাত্রীরা জানান, খাস কালেকশনের মাধ্যমে বছরের পর বছর ধরে রাজস্ব আদায় হলেও পূর্বকার ইজারাদারের চেয়ে কোন টোল এক কড়িও কমানো হয়নি। বাড়েনি যাত্রী সেবার মান ও ধরণ। সিলেটের মৌলভিবাজার থেকে সপরিবারে প্রথম বারের মত মহেশখালী বেড়াতে আসা সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব বাবুল আহমেদ ও চট্টগ্রাম শহরতলী থেকে আসা সরকারী কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ জানান পৃথিবীর অনেক দেশে আমাদের ভ্রমণ হয়েছে। কিন্তু দেশের ভেতরে মহেশখালী বেড়াতে এসে পদে পদে যে হয়রানীর শিকার হতে হয়েছে তা আজীবন মনে থাকার মত। তারা এবিষয়ে প্রশাসনের ভুমিকা নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেন।দোষারোপ করেন স্থানীয় গণমাধ্যমের।নিয়মত মত একটি রুটে যাতায়াতের জন্য কোন যাত্রীকে একটি নির্দৃষ্ট অংকের ভাড়া প্রদান করতে হয়। যাত্রীদের প্রদেয় এই ভাড়ার বিপরীতে যতাযত গন্তব্যে তাকে পৌছিঁয়ে দেওয়ার কথা। সেক্ষেত্রে একজন যাত্রীকে মহেশখালী আসতে হলে এই নিয়ম ডিঙিয়ে প্রতিনিয়ত নতুন নতুন ভোগান্তির মুখোমুখি হতে হয়। এখানে নির্দৃষ্ট অংকের ভাড়া দিয়েও ঘাটে ঘাটে যাত্রীদের কাছ থেকে বিভিন্ন অযুহাতে আদায় করা হচ্ছে অযৌক্তিক ভাবে বাড়তি টাকা। এর ব্যত্যয় ঘটলে যাত্রী সাধরণকে চরম নাজেহাল হতে হচেছ প্রতিনিয়ত। অনেক সময় যাত্রীদের মারধরসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা ভদ্র পর্যটকদের লঞ্চিত করা দৃশ্য হরহামেশা চোখে পড়ার মত। এক্ষেত্রে ঘাটে নিয়োজিত প্রশাসনের লোকজন নীরব দর্শকের ভুমিকায় লিপ্ত থাকেন। বিশেষত সন্ধ্যার পর থেকে এই নিন্ডিকেটের অনৈতিক তৎপরতা অধিক হারে শুরু হয়। এসময় ঘাটে এমন অমানবিক পরিস্তির সৃষ্টি হয় যা বর্ননাতিত বলে সূত্রে প্রকাশ। অনেক সময় ঘাটের এই অব্যবস্থাপনার কারণে জেটির উপরেই গর্ভবতি নারীর সন্তান প্রসব হওয়ার মত ঘটনা প্রশাসন অবগত রয়েছেন।এমতবস্থায় পর্যটনের এই মৌসুমে জেলার মান অক্ষুন্ন রাখতে ও যাত্রী হয়রাণী লাঘব করতে জেলা প্রশাসনের জরুরী হস্তক্ষেপ দরকার বলে মনে করেন ওয়াকিবহাল মহল।

পাঠকের মতামত: