ঢাকা,শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪

মাতারবাড়ি প্রকল্পে স্থানীয়দের ছাটাই বহিরাগতরাই নিয়োগ পাচ্ছে

কক্সবাজার প্রতিনিধি ::  মহেশখালী মাতারবাড়ির কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্পে স্থানীয় শ্রমিকদের ছাটাইয়ের মহোৎসব চলছে। কৌশলে স্থানীয়দের শ্রমিকদের ছাটাই করছে দুই আন্তর্জাতিক ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের ৬ কর্মকর্তা। তারা নিজস্ব লোকজনের নামে সাব-ঠিকাদারির প্রতিষ্ঠান খুলে কাজ করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এসব প্রকল্পে ঘুষের বিনিময়ে চাকরি দিচ্ছেন বহিরাগতদের। এ ছাড়া কমিশনের ভিত্তিতে কাজ দিচ্ছেন স্থানীয় কয়েকটি নির্ধারিত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে।
মহেশখালী উপজেলার মাতারবাড়িতে দুটি কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে। এ ছাড়াও একটি বাণিজ্যিক বন্দরের কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। জাপানি সংস্থা জাইকার অর্থায়নে নির্মাণাধীন একটি প্রকল্পে বিভিন্ন অবকাঠামো নির্মাণের মূল দায়িত্বে রয়েছে ১২টি আন্তর্জাতিক ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। এসব প্রতিষ্ঠানের অধীনে কাজ করছে ৩০টির অধিক সাব-ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। প্রকল্পে কর্মরত শ্রমিক ও স্থানীয় ঠিকাদারদের অভিযোগ, দুই আন্তর্জাতিক ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান দক্ষিণ কোরিয়ার পস্কো লিমিটেড ও জাপানের পেন্টাশনে কর্মরত ৬ কর্মকর্তা দুর্নীতিতে জড়িত।
প্রকল্পে কর্মরত কয়েকজন শ্রমিক বলেন পস্কো কোম্পানিতে কর্মরত জসিম উদ্দিন, শাহ-নেওয়াজ নীল, আল-আমিন ও সুমনের নেতৃত্বে গড়ে তুলেছে একটি বিশাল সিন্ডিকেট। স্থানীয় কয়েকজন দালালের মাধ্যমে স্থানীয় শ্রমিকদের ছাটাই করে বহিরাগত লোকদের টাকার বিনিময়ে নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে। সম্প্রতি ধলঘাটার ৪৪ জন শ্রমিককে ছাটাই করলে ধলঘাটার সাবেক চেয়ারম্যান আহসান উল্লাহ বাচ্চুর নেতৃত্বে ছাটাই করা শ্রমিকদের নিয়ে প্রকল্প এলাকায় বিক্ষোভ করে। এদের ছাটাই করে বহিরাগতদের নিয়োগ দিতে চেষ্টা চালায় ওই কর্মকর্তরা। স্থানীয় কয়েকজন শ্রমিক অভিযোগ করেন, পস্কোতে কর্মরত মানবসম্পদ কর্মকর্তা সুমন ও এডমি সিনিয়র অফিসার শাহ্ নেওয়াজ নীল মগডেইল এলাকার এক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি করে প্রতি শ্রমিক থেকে ১০০ টাকা করে কমিশন নিচ্ছে। পস্কোর প্রায় সব টেন্ডারের কাজ দেয়া হচ্ছে শাহ্ নেওয়াজ নীলের বাবার নামের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে।
এ ছাড়া পস্কোর তত্ত্বাবধানে যে গুদাম ভবন হচ্ছে সেই ঠিকাদারি কাজের টেন্ডার গোপন করে উৎকোচের বিনিময়ে বদরখালী ও চট্টগ্রামের একটি সিন্ডিকেটকে দেয়ার পাঁয়তারা চালাচ্ছে। তাদের অধীনে কর্মরত কর্মকর্তা ও শ্রমিকরা এ বিষয়ে কথা বললে তাদের চাকরিচ্যুত করার হুমকি দেয়া হচ্ছে বলেও অভিযোগ অহরহ। এদিকে পেন্টাশন কোম্পানির তত্ত্বাবধানে টেন্ডারের কাজ শেষ করে বিল নিতে গেলে তাদের দিতে হয় প্রতি লাখে ১৫ হাজার টাকা করে কমিশন। কেউ কমিশনের টাকা দিতে গড়িমসি করলে পরবর্তীতে আর কাজ দেয়া হচ্ছে না। কাজ না পেলে কর্মহীন হয়ে পড়ছেন অসংখ্য শ্রমিক।
প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায় দেশের এই বৃহত্তম প্রকল্পে স্থানীয়দের অগ্রাধীকার ভিত্তিতে নিয়োগ দিতে প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি রয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুত গোপন রেখে কতিপয় কর্মকর্তা এসব অপকর্ম করে যাচ্ছে। এসব কর্মকর্তারা উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের বিভিন্ন ভুল বার্তা দিয়ে বিভ্রান্ত করে।
অবশ্য তাদের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ অস্বীকার করে পস্কোর প্রশাসনিক কর্মকর্তা জসিম উদ্দিন ও শাহ্ নেওয়াজ বলেন, ঠিকাদারি কিংবা অন্য কোনো কাজে তারা জড়িত নন।

পাঠকের মতামত: