ঢাকা,শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪

কাকে বেঁচে নেবেন শাপলাপুরবাসী? রাত পেরুলেই নির্বাচন!

শাহেদ মিজান, কক্সবাজার :: একটি ইউনিয়নের নিবার্হী ক্ষমতার অধিকর্তা হচ্ছেন ইউপি চেয়ারম্যান। স্থানীয় সরকার ও ‘ভিলেজ পলিটিক্সে’ একজন চেয়ারম্যান কদর সর্বউর্ধ্বে। তাই একজন ইউপি চেয়ারম্যানের নাম, যশ ও খ্যাতি খুব বেশি। তাই যুগে যুগে এই চেয়ারম্যান পদ নিয়ে গ্রাম পর্যায়ে বেশ প্রতিদ্বন্দ্বিতা রয়েছে। মহেশখালী উপজেলার শাপলাপুর ইউনিয়নের ইউপি নির্বাচনের ভোট অনুষ্ঠিত হচ্ছে আগামীকাল বৃহস্পতিবারঅ। স্বাভাবিকভাবে সেখানেও চেয়ারম্যান পদ নিয়ে বেশ আলোচনা চলে আসছে শুরু থেকেই। এই ‘লোভনীয়’ চেয়ারে বসতে প্রপ্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন পাঁচজন বা ১০জন নয়; গুণে গুণে ১৬জন প্রার্থী! তবে অন্যরা প্রায় ছিটকে পড়ে শেষ চেয়ারম্যান পদে প্রপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় উঠেছেন মাত্র তিন প্রার্থী।

তারা হলেন, সাবেক তিনবারের চেয়ারম্যান ও দীর্ঘদিন শাপলাপুরের মাঠে থাকা আবদুল খালেক চৌধুরী, সাবেক চেয়ারম্যান নূরুল আমিন হেলালীর পুত্র, দেশের নামকরা তরুণ সাংবাদিক সালাহ উদ্দীন হেলালী কমল এবং দিদারুল করিম। এর মধ্যে আবদুল খালেক চৌধুরী সরকারি দল আওয়ামী লীগের মনোনিত প্রার্থী এবং অন্য দুইজন স্বতন্ত্র প্রার্থী। তবে সালাহ উদ্দীন কমল আওয়ামী পরিবার ও মুক্তিযোদ্ধার সন্তান। সব মিলে অন্য প্রার্থীদের কথা ভুলে ভোটাররা এখন এই তিন প্রার্থীকে ঘিরেই জল্পনা-কল্পনা করছেন। ভোটের শেষ মাঠ পর্যালোচনায় দেখা গেছে এই তিনহজনের একজনকেই বেঁচে নিবেন শাপলাপুরবাসী। তবে কে সেই ভাগ্যবান; কাকেই চূড়ান্ত বিজয় মাল্য পরাবেন শাপলাপুরবাসী- তার অনুমান বেশ কঠিন। তাই একটি প্রশ্ন এখন ঘুরপাক খাচ্ছে- খালেক, কমল এবং দিদারের মধ্যে কাকেই বেঁচে নিচ্ছেন শাপলাপুরবাসী?

এই তিন প্রার্থী ভোটের ইমেজ বিশ্লেষণে দেখা গেছে, আবদুল খালেক চৌধুরী শাপলাপুরের জনমানুষের কাছের মানুষ হিসেবে খ্যাত। ২০/২৫ বছর আগে শাপলাপুর ইউনিয়ন ছিলো খুব পশ্চাদগামী। যোগাযোগ ব্যবস্থার সংকট, অশিক্ষা, চুরি-ডাকাতিসহ নানা অপরাধপ্রবণ এলাকা ছিলো এই ইউনিয়ন। জনশ্রুিত রয়েছে, আবদুল খালেক চৌধুরী প্রথম চেয়ারম্যান হয়েই এসব অসঙ্গতির উত্তরণে উদ্যোগ নিয়েছিলেন। তিনি শক্তহাতে ডাকাতদের প্রতিরোধ করেছিলেন। ডাকাতদের ধরে ধরে আইনের হাতে সোপর্দ করেছিলেন। এভাবে ডাকাতিসহ অপরাধমুক্ত হয়েছে শাপলাপুর। তেমনিভাবে তিনবার চেয়ারম্যান হয়ে তিনি শাপলাপুরের যোগাযোগ ব্যবস্থা আমূল পরিবর্তন। এছাড়াও সাধারণ মানুষের সামগ্রিক সমস্যা লাঘবে তিনি সব সময় কাজ করেছেন। এসব কারণে তিনি শাপলাপুরের সাধারণ জনগণের হৃদয়ে গেঁথে রয়েছেন। তাই তিন প্রতিদ্ব›িদ্ব প্রার্থীর মধ্যে অন্যতম শীর্ষ প্রার্থী হিসেবে লড়াইয়ে রাখা হচ্ছে তাঁকে।

অপরদিকে সালাহ উদ্দীন হেলালী কমল একজন উচ্চ শিক্ষিত তরুণ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সর্বোচ্চ ডিগ্রি নিয়ে তিনি করেছেন নামকরা অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা। বিবিসি, আলজাজিরা, ইন্ডিপেডেন্ট টিভি এবং যমুনা টিভিতে অত্যন্ত দক্ষতার সাথে কর্মরত ছিলেন। তাই তাঁকে একজন বিচক্ষণ প্রার্থী হিসেবে অবহিত করা হচ্ছে। অন্যদিক তার পিতা মরহুম নূরুল আমিন হেলালীর ক্লিন ইমেজের প্রভাবও পড়েছে পুত্র কমলের উপর। সব মিলে একজন প্রতিশ্রুতিশীল একজন প্রার্থী হিসেবে তার দিকে ভোটারদের বেশ ঝোঁক রয়েছে।

ত্রিমূখী প্রতিদ্বন্দ্বিতার আরেক প্রার্থী দিদারুল ইসলাম। তিনি এলাকায় দীর্ঘদিন সমাজসেবামূলক কাজে লিপ্ত ছিলেন। মসজিদ, মাদ্রাসাসহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং সামাজিক সংগঠনগুলোকে নানাভাবে সহযোগিতা করে করেছেন তিনি। পাশাপাশি গরীব-অসহায় মানুষকে নানাভাবে সহযোগিতা করেছেন বলে এলাকায় প্রচার রয়েছে। একই সাথে নির্বাচন করার মানসিকতা নিয়ে দীর্ঘদিন ভোটের মাঠে গুছিয়েছেন। সে কারণে তার দিকেও ভোটারদের বেশ আগ্রহ রয়েছে।

এই তিন প্রতিদ্বন্দ্বিতা প্রার্থীর নিজস্ব ইমেজ ছাড়াও আঞ্চলিকতার একটি ইস্যু বেশ গুরুত্ব পাচ্ছে। কারণ এই তিন প্রতিদ্বন্দ্বিতা প্রার্থীর মধ্যে সালাহ উদ্দীন হেলালী কমল এবং দিদারুল ইসলাম পড়েছে উত্তর দিকে। বিশেষ করে ১ থেকে ৪নং ওয়ার্ড পর্যন্ত তাদের ঘরের মাঠ হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। অন্যদিকে অন্য ওয়ার্ডগুলো পড়েছে আবদুল খালেক চৌধুরীর দিকে। ৮নং ওয়ার্ড তাঁর জন্মস্থান। তাই ৬ থেকে ৯নং ওয়ার্ড পর্যন্ত চারটি তার জন্য রিজার্ভ হিসেবে ধরা হচ্ছে। তবে ‘পুরাতন মানুষ’ হিসেবে পুরো ইউনিয়জুড়ে একটি ‘স্পেশাল’ ভোট ব্যাংক রয়েছে আবদুল খালেক চৌধুরীর।

মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতায় থাকা এই তিন প্রার্থী ছাড়াও প্রচারণায় থাকা অন্য প্রার্থীরা হলেন- মহেশখালী উপজেলা আওয়ামী লীগের বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী সাইদুল হক (অটোরিক্সা)। এড. রফিকুল ইসলাম মোটর (সাইকেল), নুরুল হক বর্তমান চেয়ারম্যান (ব্যাটারি), একে এম ইলিয়াস (টাইপ রাইটার) নুরুল হুদা ফয়াজু (রজনী গন্ধা)।

এর মধ্যে বর্তমান চেয়ারম্যান হয়েও আলোচনা আসতে পারেননি নূরুল হক। তার গত পাঁচ বছরের শাসনামলে উন্নয়ন বঞ্চিত এবং বিচারহীনতাসহ নানা বিতর্কিত কর্মকান্ডের কারণে তিনি জনগণের আলোচনা থেকে হারিয়ে গেছে বলে এলাকায় প্রকাশ রয়েছে।

পাঠকের মতামত: