ঢাকা,শুক্রবার, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪

চকরিয়ায় আওয়ামীলীগের কাউন্সিলে জালভোট প্রয়োগের অভিযোগ, অবশেষে সম্মেলন ভন্ডুল!

এম.জিয়াবুল হক, চকরিয়া ::  ২০১৮ সালে অনুষ্টিত এসএসসি পরীক্ষায় চকরিয়া সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে অসাধু শিক্ষক কাইছার লিটনের খাতা জালিয়াতির কালো হাতের থাবায় শিক্ষাজীবন নিয়ে অনিশ্চয়তার মুখোমুখি হয়েছিলেন চকরিয়া কোরক বিদ্যাপীঠের মেধাবী শিক্ষার্থী তাওরিন তাসফিয়া তাসফি। অবশ্য সেসময় চকরিয়া কোরক বিদ্যাপীঠ স্কুলের প্রধান শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর পরিবারের চ্যালেঞ্জের মুখে চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ড ঘটনাটির রহস্য উৎঘাটন করতে সক্ষম হন। ধরাপড়ে শিক্ষক লিটন কতৃক ওই শিক্ষার্থীর খাতা জালিয়াতির ঘটনা। সেই যাত্রায় শিক্ষার্থী তাসফি নতুন জীবন ফিরে পেলেও অপর্কমের জন্য অভিযুক্ত শিক্ষক কাইছার লিটনকে বহিস্কার করেন শিক্ষাবোর্ড।

একবছর আগে শিক্ষার্থীর খাতা জালিয়াতির ঘটনাটির রেশ কাটতে না কাটতে আবারও আলোচনায় এসেছেন সেই শিক্ষক লিটন। এবার তিনি আলোচনার কেন্দুবিন্দুতে নাম লিখেছেন মাতামুহুরী সাংগঠনিক উপজেলার পুর্ববড় ভেওলা ইউনিয়নের ৬নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামীলীগের সম্মেলনে সভাপতি প্রাথী হয়ে নিকট আত্মীয় পোলিং কর্মকর্তাদের যোগসাজসে ভোটকেন্দ্রে ঢুকে জাল ভোট প্রয়োগের ঘটনার জন্ম দিয়ে। গতকাল রোববার (২২ সেপ্টেম্বর) উত্তর ভেওলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ওয়ার্ড আওয়ামীলীগের সম্মেলনের শুরুতে ঘটেছে এ ঘটনা।

সম্মেলনে প্রধান অতিথি ছিলেন মাতামুহুরী সাংগঠনিক উপজেলা আওয়ামীলীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি চকরিয়া উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান এসএম জাহাংগীর আলম বুলবুল। প্রধান বক্তা ছিলেন মাতামুহুরী সাংগঠনিক উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাহারবিলের চেয়ারম্যান মহসিন বাবুল, বিশেষ অতিথি ছিলেন মাতামুহুরী সাংগঠনিক উপজেলা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি চকরিয়া উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান মকছুদুল হক ছুট্টু, সাংগঠনিক সম্পাদক আজিজুর রহিম ছাড়াও সিনিয়র নেতৃবৃন্দ।

সম্মেলন চলাকালে সভাপতি প্রার্থী কাইছার লিটন কর্তক জাল ভোট প্রয়োগের ঘটনাটির সত্যতা নিশ্চিত করেছেন মাতামুহুরী সাংগঠনিক উপজেলা আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আজিজুর রহিম। তিনি বলেন, সম্মেলনে ৬ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামীলীগের মোট কাউন্সিলর ছিলেন ১৮৩জন। সভাপতি ও সম্পাদক পদে প্রার্থী ছিলেন মোট পাঁচজন। তারমধ্যে সভাপতি পদে বর্তমান সভাপতি নাছির উদ্দিন, কাইছার লিটন, রবি সুশীল ও সাধারণ সম্পাদক পদে জয়নাল আবেদিন সওদাগর এবং মোহাম্মদ সোহেল প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন।

সম্মেলন উপস্থিত নেতাকর্মীরা জানান, প্রার্থীদের আবেদন মতে আমরা কাউন্সিলের মাধ্যমে সভাপতি সম্পাদক নির্বাচনে উদ্যোগ নিই। এরই অংশহিসেবে প্রথম অধিবেশন শেষে কাউন্সিলরদের ভোট গ্রহন শুরু করা হয়। ভোট গ্রহন চলাকালে সভাপতি প্রার্থী কাইছার লিটন ভোট দেয়ার অজুহাতে কেন্দ্রের ভেতরে ঢুকে কৌশলে একসঙ্গে একাধিক পরিমাণ ভোট বাক্সে ঢুকিয়ে দেয়ার চেষ্ঠা করেন। এসময় অন্য প্রার্থীদের এজেন্টরা চ্যালেঞ্জ করলে ঘটনাটি জানতে পারি। পরবর্তীতে সম্মেলনে উপস্থিত মাতামুহুরী সাংগঠনিক উপজেলা আওয়ামীলীগের সিনিয়র নেতৃবৃন্দের পরামর্শে কাউন্সিল কার্যক্রম স্থগিত ঘোষনা করা হয় বলে নিশ্চিত করেন উপজেলা আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আজিজুর রহিম।

অবশ্য কাউন্সিল অধিবেশনের শুরুতে মাতামুহুরী সাংগঠনিক উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি ও সম্পাদকের কাছে পোলিং এজেন্ট হিসেবে দায়িত্বপ্রাপ্ত হারুন সরওয়ার বাদল, জসিম উদ্দিন ও আবু মোর্শেদ নামের তিনজনকে উল্লেখিত দায়িত্ব থেকে বিরত রাখতে লিখিত আবেদন করেন সভাপতি নাছির উদ্দিন। তিনি আবেদনে দাবি করেন, অভিযুক্ত এই তিনজন অপর সভাপতি প্রার্থী কাইছার লিটনের নিকট আত্মীয়। এদের একজন চাচাতো ভাই, একজন মামা ও অপরজন লিটনের ভগ্নিপতি।

তাঁরা দায়িত্বে থাকলে সভাপতি প্রার্থী কাইছার লিটন তাদের যোগসাজসে কাউন্সিলে যে কোন সময় অনিয়মের আশ্রয় নিতে সুযোগ পেতে পারে। সেই কারণে আশঙ্কা থেকে এই তিনজনকে পোলিং এজেন্ট হিসেবে দায়িত্ব থেকে বিরত রাখতে তিনি উপজেলা আওয়ামীলীগের কাছে আবেদন করেছেন বলে দাবি করেন সভাপতি প্রার্থী নাছির উদ্দিন।

জানতে চাইলে মাতামুহুরী সাংগঠনিক উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাহারবিলের চেয়ারম্যান মহসিন বাবুল বলেন, পোলিং এজেন্ট সম্পর্কে এক প্রার্থী লিখিতভাবে যেই অভিযোগটি করেছেন, আমরা সম্মেলন চলাকালে তাঁর কোন ধরণের সত্যতা পায়নি। তবে সম্মেলন নিয়ে দুইপক্ষের মধ্যে উত্তেজনামুলক পরিস্থিতি তৈরী হওয়ায় আমরা শান্তি-শৃঙ্খলার স্বার্থে সম্মেলন স্থগিত ঘোষনা করেছি।

মাতামুহুরী সাংগঠনিক উপজেলা আওয়ামীলীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি চকরিয়া উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান এসএম জাহাংগীর আলম বুলবুল বলেন, কাউন্সিল চলাকালে একজন ভোটার সভাপতি প্রার্থী একজনের হয়ে বেশি পরিমাণ ভোট বাক্সে ঢুকিয়ে দেয়ার চেষ্ঠা করছিলেন। ওইসময় সম্মেলনে বিশৃঙ্খলা দেখা দিলে সঙ্গে সঙ্গে জালভোট গুলো জব্দ করে পুড়িয়ে দেয়া হয়। এরপর উপজেলা ও ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সিনিয়র নেতৃবৃন্দের পরামর্শক্রমে সম্মেলন স্থগিত ঘোষনা করা হয়। পরবর্তীতে সুবিধা মতো সময়ে উল্লেখিত ওয়ার্ডের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। #

পাঠকের মতামত: