রফিকুল ইসলাম, কক্সবাজার ::
টেকনাফে কড়াকড়ি, বন্দুক যুদ্ধে স্হানীয় গডফাদারদের কেউ জেলে, কেউবা আত্মগোপনে। এখন এ ব্যবসার প্রায় পুরোটা নিয়ন্ত্রণ করছে আশ্রিত রোহিঙ্গারা। উখিয়া, টেকনাফ ও নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্তের অন্তত ২৭ টি পয়েন্ট ব্যবহার করে রোহিঙ্গারা মিয়ানমার থেকে ইয়াবা এনে বাংলাদেশের সর্বত্র ছড়িয়ে দিচ্ছে।
ক্রেজি ড্রাগ’ ইয়াবা এখন অনেকটা মহামারি রূপ নিয়েছে গ্রামাঞ্চলে। প্রায় প্রতিটি গ্রামের আনাচে কানাচে পর্যন্ত বিস্তার ঘটেছে নীরব ঘাতক ইয়াবা ট্যাবলেটের। স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরাও সেবন ও বহন করছে এই মরণ বড়ি। ইয়াবায় আসক্ত নেই এমন কোনো পেশার লোক পাওয়া যাবে না।
শ্রমজীবী থেকে শুরু করে একেবারে সব পেশার মধ্যে ইয়াবা আসক্তি বিস্তার ঘটছে। ইয়াবায় আসক্ত হওয়ার পর প্রথম প্রথম কিছুটা শক্তি বাড়ছে মনে হলেও পরে ধীরে ধীরে শক্তি কমিয়ে দেয়। উত্তেজিত হয়ে খিটখিটে স্বভাবের আসক্তরা নানা অপকর্মে জড়িয়ে পড়েছে। বাড়ছে পারিবারিক, সামাজিক বিবাদ, কলহ, বিশৃংখলা।
স্হানীয় লোকজন ও সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল ব্যক্তিবর্গের তথ্য মতে,রোহিঙ্গারা স্হানীয় আত্মগোপনে থাকা গডফাদারদের সহায়তায় এ ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করছে। উখিয়ার নাফ নদী ও পাহাড়ি সংলগ্ন বালুখালী কাটা পাহাড়, ধামনখালী, রহমতের বিল, আনজুমান পাড়া, ডেইল পাড়া, পূর্ব ডিগলিয়া, চাকবৈটা – করইবনিয়া, নাইক্ষ্যংছড়ির বাইশপারি,আমতলী গর্জনবনিয়া, ফাত্রাঝিরি, তুমব্রু, ঘুমধুম, টেকনাফের উলুবনিয়া, হউসের দিয়া, উনচিপ্রাং, হ্নীলা, লেদা, মোচনী, ট্রানজিট ঘাট, দমদমিয়া, সাবরাং, খুরের মুখ, শাহপরীরদ্বীপ, লম্বাবিল সহ পয়েন্ট গুলো কার্যত রোহিঙ্গারা বেশী ব্যবহার করছে।
উখিয়া যুবলীগের সভাপতি মজিবুল হক আজাদ বলেন, প্রতি রাতে অসংখ্য রোহিঙ্গা উল্লেখিত সীমান্ত পয়েন্ট দিয়ে মিয়ানমার যায়।১/২ দিন সেখানে থাকার পর লক্ষ লক্ষ পিস ইয়াবা নিয়ে আসে। প্রথমে সীমান্তের স্হানীয় বিভিন্ন গডফাদারের নির্দিষ্ঠ স্হানে রাখে।সেখান থেকে ক্যাম্প রোহিঙ্গা গডফাদারদের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে মজুদ পূর্বক তা সারা দেশ পাচার করে থাকে।
উখিয়া উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ হামিদুল হক চৌধুরী বলেন, সামাজিক অবক্ষয়ের মূলে এই ইয়াবা সেবন। এর কারণে সন্তান মা-বাবাকে মারছে। চুরি,ছিনতাই, ডাকাতি সহ গুরুতর অপরাধের ঘটনাও ঘটছে। ইয়াবার ভয়াবহ আগ্রাসন আগামী প্রজন্মকে ধ্বংসের মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দিচ্ছে। ইয়াবার কারণে পাড়া গাঁয়ে হর হামেশা নানা চুরির ঘটনা ঘটছে।
ইয়াবার ভয়াবহ আগ্রাসন নিয়ে সরকার যেমন উদ্বিগ্ন, চিন্তিত অভিভাবক মহলও। ইয়াবা পাচারে একশ্রেণির আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্মকর্তা, রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী ও প্রশাসনের কর্মকর্তারা ইন্ধন থাকায় এটা নিয়ন্ত্রণ অনেকটা দুঃসাধ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। গত ৭ সেপ্টেম্বর উখিয়া থানায় কমিউনিটি পুলিশের ওপেন হাউস ডে সভা হয়।
এতে স্থানীয় উপস্থিত লোকজন ইয়াবা পাচার,ব্যবসা ও সেবনের হার আশংকা জনক বৃদ্ধিতে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন। দিন দিন উখিয়ার সর্বত্র ইয়াবা দালান উঠছে। তারা যে কোন মূল্যে এসব থেকে পরিত্রাণ চান বলে জানান।সভার প্রধান অতিথি কক্সবাজার জেলা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোঃ ইকবাল হোসেন বক্তাদের ক্ষোভে বিব্রত বোধ করে দুই দিনের মধ্যে উখিয়া থানা পুলিশকে দৃশ্যমান ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছিলেন।
২০১৮ সালের ৪ মে থেকে দেশব্যাপী মাদক বিরোধী বিশেষ অভিযান শুরু করেছিল র্যাব। এর পর পৃথকভাবে মাদক নিয়ন্ত্রণে যুদ্ধে শরিক হন পুলিশও বিজিবি। এ অভিযানে পুলিশ-র্যাব ও বিজিবির সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ এখন পর্যন্ত নিহত হয়েছে প্রায় ৪ শ জন।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, গত এক বছরে কক্সবাজারের ৩২ টি রোহিঙ্গা শিবিরে পাঁচ শতাধিকের বেশি মাদক বিক্রি ও সেবনের আখড়া গড়ে উঠেছে। ইয়াবা মজুতের জন্যও ব্যবহৃত হচ্ছে ঘনবসতিপূর্ণ এই ক্যাম্পগুলো।গত আগস্ট পর্যন্ত দুই শতাধিক ইয়াবা তথা মাদক মামলায় চার শ’র মত রোহিঙ্গা আসামি হয় বলে জানা গেছে। সংশ্লিষ্ট আইন শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর তালিকায়ও রয়েছে ১৮/২০ নেতৃস্থানীয় ইয়াবা ব্যবসায়ী রোহিঙ্গার নাম।
রোহিঙ্গা শিবির গুলোতে মাদকের সঙ্গে জড়িতদের মধ্যে রশিদ উল্লাহ, নজির আহমদ, খতিজা বেগম, জকির আহমদ, কালা সেলিম, হামিদ মাঝি, উম্মি নাহার, সেতেরা বেগম, মুমিনা বেগম, মো. সেলিম, উসমান, মো. জোবাইর, অলি আহমদ, মুন্না, হাসিমুল্লাহ, মো. আমিন, সাহা আহমদ, নুরু মিয়া অন্যতম।
টেকনাফ বিজিবি -২ অধিনায়ক লেঃ কর্ণেল মোঃ ফয়সল বলেন, আপাত দৃষ্টিতে মিয়ানমার থেকে ইয়াবা পাচার কিছুটা কমেছে। আগের মত বড় চালান ও পাচারকারী তেমন আটক করা যাচ্ছে না।বিভিন্ন কারণে স্হানীয় ব্যবসায়ী,পাচারকারীদের দাপট আগের মত নেই। তবে রোহিঙ্গারা এ ব্যবসা ও পাচারের সাথে বেশী সম্পৃত্ত হয়ে পড়ছে বলে তিনি জানান। সম্প্রতি ইয়াবা সহ আটকদের অধিকাংশ মিয়ানমারের রোহিঙ্গা নাগরিক।
প্রকাশ:
২০১৯-০৯-১৩ ১৩:৪১:১৯
আপডেট:২০১৯-০৯-১৩ ১৩:৪১:৫০
- চকরিয়ায় কৃষক প্রশিক্ষণ ও মাঠ দিবস পালিত
- চকরিয়াতে বৃষ্টির জন্য তপ্ত রোদে কাঁদলেন মুসল্লীরা
- কক্সবাজারে ভুল চিকিৎসায় প্রসূতির মৃত্যু, শহরজুড়ে উত্তেজনা
- চকরিয়ার হত্যা মামলার ৭ আসামি ফেনী থেকে গ্রেপ্তার
- চকরিয়া মাতামুহুরী নদীতে মাছের ঝাঁক তৈরিকালে পানিতে ডুবে দুই যুবকের মৃত্যু
- চকরিয়ায় পুলিশের সঙ্গে ডাকাতদের গোলাগুলি কাটা বন্দুক উদ্ধার, নারীসহ আহত ৫
- চকরিয়ায় বনের ভেতরে লাকড়ি কুড়াতে গিয়ে বন্যহাতির আক্রমণে নারীর মৃত্যু
- চকরিয়ার প্রায় দেড়শ বছরের ঐতিহ্যবাহী ৩ গম্বুজ মসজিদের সংস্কার জরুরী
- পেকুয়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচন ২১ প্রার্থীর মনোনয়নপত্র জমা
- চকরিয়ায় মহাসড়কে তেলবাহী ট্রাকের ধাক্কায় মোটরসাইকেল চালক যুবক নিহত, দুইজন আহত
- রামুতে পিতা-পুত্রকে গুলি করে ও কুপিয়ে হত্যা
- ঈদগাঁও উপজেলার ইউপি নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করতে প্রশাসন বদ্ধ পরিকর-জেলা প্রশাসক
- চকরিয়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে ৯ জন, ভাইস চেয়ারম্যান পদে ১০ জন প্রার্থীর মনোনয়নপত্র দাখিল
- চকরিয়া পৌরসভার তরছপাড়া চৌমুহনীতে বিট কমিউনিটি পুলিশিং সমাবেশ অনুষ্ঠিত
- চকরিয়া বদরখালীতে গুলি করে হাত-পা কেটে যুবককে খুনের মামলার আসামি শাকিল গ্রেপ্তার
- রামুতে পিতা-পুত্রকে গুলি করে ও কুপিয়ে হত্যা
- চকরিয়ায় মহাসড়কে তেলবাহী ট্রাকের ধাক্কায় মোটরসাইকেল চালক যুবক নিহত, দুইজন আহত
- চকরিয়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ১৯ জনের মনোনয়নপত্র দাখিল
- চকরিয়ায় পুলিশের সঙ্গে ডাকাতদের গোলাগুলি কাটা বন্দুক উদ্ধার, নারীসহ আহত ৫
- পেকুয়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচন ২১ প্রার্থীর মনোনয়নপত্র জমা
- চকরিয়ার প্রায় দেড়শ বছরের ঐতিহ্যবাহী ৩ গম্বুজ মসজিদের সংস্কার জরুরী
- চকরিয়ায় বনের ভেতরে লাকড়ি কুড়াতে গিয়ে বন্যহাতির আক্রমণে নারীর মৃত্যু
পাঠকের মতামত: