ঢাকা,শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪

কক্সবাজার কারাগারের ৬ কর্মকর্তা দুদকের জালে 

অবৈধ সুবিধায় ১০২ ইয়াবা কারবারি আলাদা সেলে ২৫ হাজার টাকার বিনিময়ে রাখা হয় হাসপাতালে

কক্সবাজার প্রতিনিধি :: কক্সবাজার জেলা কারাগারের জেল সুপারসহ ৬ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ তদন্তে নেমেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। কারা হাসপাতালে রোগীদের বদলে মাদক মামলার আসামি এবং আত্মসমর্পণ করা ১০২ ইয়াবা কারবারিকে আলাদা সেলে রেখে অবৈধভাবে আর্থিক সুবিধা নেয়ার অভিযোগ উঠেছে এসব কর্মকর্তার বিরুদ্ধে। তদন্তের জন্য দুদক প্রধান কার্যালয় থেকে দুই সদস্যের কমিটিও গঠন করা হয়েছে।
অভিযোগ ওঠা কর্মকর্তারা হলেন, কক্সবাজার জেলা কারাগারের জেল সুপার মো. বজলুর রশিদ আখন্দ, জেলার রিতেশ চাকমা, দুই ডেপুটি জেলার মনির হোসেন ও অর্পন চৌধুরী, ফার্মাসিস্ট ফখরুল আজিম চৌধুরী এবং কারাগারের চিকিৎসক মহিউদ্দিন চৌধুরী। সংশ্লিষ্টদের অভিযোগ, দুর্নীতির স্বর্গরাজ্য হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে কক্সবাজার জেলা কারাগার। এই কারাগারে অবৈধ সুবিধা দেয়ার বিনিময়ে হাজতি ও কয়েদিদের কাছ থেকে হাতিয়ে নেয়া হচ্ছে কোটি কোটি টাকা। এ নিয়ে প্রধান কার্যালয়ে জমা হওয়া একটি অভিযোগের ভিত্তিতে এনফোর্সমেন্টের অভিযানে গিয়ে অভিযোগের সত্যতা পান দুদক কর্মকর্তারা।

জানা যায়, কক্সবাজার কারা হাসপাতালে ২৫টি সিট রয়েছে। কিন্তু হাসপাতালটিতে রাখা হয়েছে একশ জন বন্দিকে। তাদের মধ্যে বেশিরভাগই মাদক মামলার আসামি। এনফোর্সমেন্টের অভিযানে দুদক কর্মকর্তারা জানতে পারেন, হাসপাতালে থাকার জন্য প্রত্যেক বন্দির কাছ থেকে মাসে ২৫ হাজার টাকা করে আদায় করে কারা কর্তৃপক্ষ। তাছাড়া চলতি বছরের ১৬ ফেব্রুয়ারি আত্মসমর্পণ করা টেকনাফের ১০২ জন ইয়াবা কারবারির অনেককে আলাদা সেলে রাখা হয়েছে। যাদের কাছ থেকে আর্থিক সুবিধা নেন কারা কর্মকর্তারা। অথচ সাধারণ বন্দিদের রাখা হয়েছে নোংরা অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দুদক প্রধান কার্যালয়ের এক কর্মকর্তা চকরিয়া নিউজকে বলেন, ‘কক্সবাজার জেলা কারাগারে অভিযানে গিয়ে অনেক অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে। হাসপাতালে অবস্থান করা বন্দিরাই বলেছেন, মাসে তাদের কাছ থেকে ২৫ হাজার টাকা করে নেওয়া হচ্ছে। এসব আর্থিক লেনদেন হয় থানার বাইরে বন্দিদের আত্মীয় স্বজনদের মাধ্যমে।’
এ কর্মকর্তা বলেন, ‘বন্দিরা তথ্য দিলেও তারা পরিচয় দিতে ভয় পাচ্ছেন। এতে বন্দিদের কাছ থেকে আর্থিক সুবিধা নেয়ার অভিযোগ দালিলিকভাবে প্রমাণ কষ্টসাধ্য। তাই এনফোর্সমেন্টের প্রতিবেদনের প্রেক্ষিতে কক্সবাজার জেলা কারাগারের ৬ কর্মকর্তার অবৈধ সম্পদ অর্জনের বিষয়টি তদন্ত করার পদক্ষেপ নিয়েছে কমিশন।

তদন্তের সুবিধার্থে চট্টগ্রাম সমন্বিত জেলা কার্যালয়-২ এর উপ-পরিচালক মাহবুবুল আলমকে টিম লিডার করে দুই সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে।’ গতকাল সন্ধ্যায় চট্টগ্রাম সমন্বিত জেলা কার্যালয়-২ এর উপ-পরিচালক মাহবুবুল আলমের কাছে মুঠোফোনে জানতে চাইলে তিনি একটি মামলার তদন্ত কাজে ঢাকায় অবস্থান করছেন জানিয়ে বলেন, আমি বিস্তারিত বলতে পারব না। তবে কমিটিতে আমাকে সদস্য রাখা হয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে জেল সুপার মো. বজলুর রশিদ আখন্দের মুঠোফোনে বেশ কয়েকবার ফোন করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি। পরে খুদে বার্তা পাঠানো হলেও কোনো প্রত্যুত্তর পাওয়া যায়নি।

পাঠকের মতামত: