ঢাকা,বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪

দরিদ্র কৃষকদের ঠকাচ্ছে অসাধু সার-বীচ বিক্রেতারা

ওমর ফারুক হিরু, কক্সবাজার ::  কক্সবাজার শহরের সার বিক্রয় কেন্দ্রেগুলোতে সরকার কর্তৃক নির্ধারিত মূল্য তালিকা টাঙ্গানো থাকলেও তা মানছেনা অসাধু ব্যবসায়ীরা। তারা কৃষকদের কাছ থেকে নিচ্ছে নির্ধারিত মূল্যের বাড়তি দাম। একইভাবে উন্নত বীজ বিক্রির নামে কৃষকদের ধরিয়ে দিচ্ছে নি¤œমানের বীজ। এতে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে দরিদ্র কৃষকগণ। ভূক্তভোগী প্রায় ৪০ জনের অধিক কৃষক গণ স্বাক্ষরের মাধ্যমে এই প্রতারণার বিরুদ্ধে অভিযোগ দিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে। এ বিষয়ে কৃষি কর্মকর্তা বলেন, কালই অভিযান বের হবেন। আর অভিযোগ প্রমাণিত হলে নেওয়া হবে ব্যবস্থা।
অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, শহরের বাহারছড়া বাজার সংলগ্ন ‘মেসার্স আল মদিনা বীজ বিতান‘, ছয় নাম্বার রাস্তার মাথা বিমান বন্দর সড়ক সংলগ্ন ‘মেসার্স কৃষি বিপণী‘ ও খুরুশকুল রাস্তার মাথা সংলগ্ন ‘মেসার্ম মদিনা কৃষি বিতান‘ সহ বেশ কয়েকটি সার ও বীজ বিক্রয় কেন্দ্রে সিন্ডিকেট করে সরকারের নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে বাড়তি দাম রাখছে। পাশাপাশি উন্নত বীজের কথা বলে ধরিয়ে দিচ্ছে নী¤œ মানের বীজ।
ভূক্তভোগী কৃষকদের অভিযোগের ভিত্তিতে জানা যায়, সরকারের নির্ধারিত মূল্য অনুযায়ী ইউরিয়া সারের বস্তা প্রতি দাম হল ৭৮০ টাকা কিন্তু তারা বিক্রি করছে ৮৮০ টাকা। টিএসপি সারের মূল্য ১১০০ টাকা কিন্তু তারা বিক্রি করছে ১৪৫০ টাকা। এমওপি সারের মূল্য ৭২০ টাকা কিন্তু তারা বিক্রি করছে ৮৫০ টাকা। ডিএপি সারের মূল্য ১২০০ টাকা কিন্তু বিক্রি করছে ১৩০০ টাকা।
তারা কেজি‘তে ১৬ টাকার ইউরিয়া সার বিক্রি করছে ১৮ টাকা, ২২ টাকার টিএসপি বিক্রি করছে ২৫ টাকায়, কেজিতে ১৫ টাকার এমওপি সার বিক্রি করছে ১৭ টাকায় এবং কেজিতে ২৪ টাকার ডিএপি সার বিক্রি করছে ২৬ টাকায়। কৃষকদের অভিযোগের ব্যাপারে ‘মেসার্স আল মদিনা বীজ বিতান‘এর মালিক খোরশেদ আলমের কাছে জানতে চাইলে তিনি বাড়তি দাম রাখার বিষয়টি স্বীকার করেন। তিনি বলেন সরকার নির্ধারিত দাম ধরে দিলেও ডিলাররা তাদের কাছ থেকে অতিরিক্ত দাম রাখে। তাই বাধ্য হয়ে কেজি প্রতি বাড়তি দাম রাখা হচ্ছে। নয়ত ব্যবসায় লোকসান গুনা ছাড়া কোন উপায় থাকবেনা।
একইভাবে মেসার্স কৃষি বিপনী‘র মালিক মো: আজিজুল হক বলেন, ‘সরকার নির্ধারিত দাম দিলেও অনেক সময় কিছু করার থাকছেনা ডিলাররা বাড়তি দাম রাখার কারণে। এছাড়া কেরিং চার্জ (যাতায়ত খরচ), প্যাকেটিং সহ নানা খরচ রয়েছে তাই অনেক সময় ১-২ টাকা বাড়তি হয়ে যায়। এইটা এত বড় বিষয়না।
এ ব্যাপারে খুরুশকুলের মেসার্স মদিনা বীচ বিতানের মালিক মোহাম্মদ মিজান বিষয়টি অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, ‘আমরা ডিলার। আমরা সরাসরি কোন কৃষককে সার বা বীজ বিক্রয় করিনা। সরকারি ভাবে দেওয়া নির্ধারিত মূলেই আমরা সার বিক্রি করি।‘
সার বিক্রিতে বাড়তি দাম রাখা ছাড়াও শহরের বাহারছড়া বাজার সংলগ্ন ‘মেসার্স আল মদিনা বীজ বিতান‘ এর বিরুদ্ধে নি¤œমানের বীজ বিক্রয়ের অভিযোগ তুলেন শহরের বালিকা মাদ্রাসা সংলগ্ন পশ্চিম বাহারছড়া‘র আব্দুল করিমের ছেলে মো: মাসুদ। কৃষি কর্মকর্তার কাছে তার অভিযোগ নি¤œমানের বীজ বিক্রয় করে তার সাথে প্রতারনা করায় তার লক্ষাধিক টাকার ক্ষতি হয়েছে।
অভিযোগে তিনি বলেন, আমি চেয়েছি সুবর্ণ ব্র্যান্ড এবং সুমি ব্র্যান্ডের বীজ। কিন্ত ‘মেসার্স আল মদিনা বীজ বিতান‘ এর মালিক মো: খোরশেদ আলম বাড়তি টাকা লাভের জন চালাকি করে আমাকে নি¤œ মানের বীজ ধরিয়ে দিয়েছে। এতে আমার মারাত্বক ক্ষতি হয়েছে। আমি ঋণ নিয়ে চাষাবাদ করেছিলাম কিন্তু এই নি¤œমানের বীজের কারনে আমাকে লোকসান গুনতে হয়েছে। তিনি আরো বলেন, শুধু আমি নই। এই ধরণের শত শত চাষীকে তারা ঠকাচ্ছে ভাল বীজের কথা বলে নি¤œ মানের বীজ দিয়ে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা জীবাংসু দাশ জানান, তিনি এই ধরণের একটি অভিযোগ পেয়েছেন। এই অভিযোগের ভিত্তিতে সংশ্লিষ্ট উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের সাথে নিয়ে নিজেই কাল অভিযানে যাবেন। অভিযোগ প্রমানিত হয়ে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।
কৃষি কর্মকর্তার কাছে অভিযোগ প্রদানকারী ভূক্তভোগী কৃষকগণ হচ্ছেন, পশ্চিম বাহার ছড়ার মো: মাসুদ, মোক্তার হোসেন, মো: রুবেল, ফারুক আহমেদ, আব্দুল মান্নান, আব্দুল মালেক, জামরুল ইসলাম, সুজা মন্ডল, রিয়াজ মো: জুয়েল, ছালেহা বেগম, মনোয়ারা বেগম, মোতাহারা বেগম, রফিকুল ইসলাম, মো: আলম, নুরুল ইসলাম, মনোয়ারা বেগম, রোকেয়া বেগম, দিল মোহাম্মদ, নুরুন্নাহার, রিজিয়া বেগম, মো: হামিদ, নুর আলম, মো: লোকমান, মো: নেজাম, মো: কামাল, হোসনেআরা, আবুল বশর, মো: নুরুল ইসলাম, সাব্বীর আহম্মদ, সৈয়দ আকবর পুতু, মো: আজিম, শফি আলম, মো: হাসান, মো: মাসেল ও সোলতান সহ প্রায় ৪০ জন কৃষক।

পাঠকের মতামত: