ঢাকা,শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪

পেকুয়ায় ১৫ হেক্টর বন দখল নিয়ে বিএনপি ও আ’লীগের মধ্যে রক্তপাতের শংকা

পেকুয়া প্রতিনিধি ::  পেকুয়ায় ১৫ হেক্টর বন দখল নিয়ে ক্ষমতাসীন দল আ’লীগের কর্মী-সমর্থক ও স্থানীয় বিএনপির শীর্ষ পর্যায়ের নেতাদের মধ্যে বিরোধ প্রকট আকার ধারণ করেছে। সরকারী রিজার্ভ সম্পত্তি নিয়ে দু’রাজনৈতিক শক্তির মধ্যে ধাওয়া ও পাল্টা ধাওয়া হয়েছে। বন দখলকে কেন্দ্র করে দু’পক্ষের মধ্যে আধিপত্য বিরাজ করছে। এর সুত্র ধরে পাহাড়ে উত্তেজনা বিরাজ করছে। যে কোন মুহুর্তে উভয়পক্ষের মধ্যে রক্তপাতসহ খুনোখুনির শংকা দেখা দিয়েছে বলে পাহাড়ে বসবাসরত লোকজন দাবী করছে। উপজেলার টইটং ইউনিয়নের পূর্ব টইটং জোঁকখোলা নামক দুর্গম পাহাড়ী স্থানে এ উত্তেজনা বিরাজ করছে। স্থানীয় সুত্র জানায়, ১৫ হেক্টর বন নিয়ে টইটং ইউনিয়নের কাচারীমোড়া গ্রামের মৃত আবুল ফজলের ছেলে ফয়েজ আহমদ প্রকাশ মুন্সী মিয়া গং ও জালিয়ারচাং গ্রামের মৃত মৌলভী ইয়ার মোহাম্মদের ছেলে ডা: শফিউল্লাহ গংদের মধ্যে বিরোধ চলছিল। ২০১৪ সাল থেকে মুন্সি মিয়া গং জোঁকখোলা নামক স্থানে পাহাড়ের চওড়ায় বাগান সৃজন করেন। তারা ব্যক্তিগত উদ্যোগে বনের জায়গায় বিভিন্ন প্রজাতির গাছ রোপন করে। পরিচর্যা ও কঠোর পরিশ্রমে পাহাড়ে সবুজের সমারোহ সৃষ্টি করে। বনজ ও ফলজ বাগান সৃজন করে তারা। বেকার দুরীভূত করতে দারিদ্র বিমোচনের জন্য মুন্সি মিয়াসহ ৪০ জন হতদরিদ্র ব্যক্তি সরকারী রিজার্ভ জায়গায় বাগান সৃজন করে। বর্তমানে পাহাড়ের জোঁকখোলা নামক স্থানে মুন্সীমিয়া গংদের বাগানে বৃক্ষের সারিতে ওই স্থানটি পরিপূর্ণ বনায়নে উন্নীত হয়। সুত্র জানায়, সম্প্রতি ১৫ হেক্টর বাগান ও এর ভূমি নিয়ে বিরোধ দেখা দিয়েছে। স্থানীয় সুত্র জানায়, ডা: শফিউল্লাহ গং পাহাড়ের এ অংশ নিজদের দখলীয় বন দাবী তুলছে। তবে এ নিয়ে পরষ্পর বিরোধী বক্তব্য পাওয়া গেছে। পূর্ব টইটংয়ের লোকজন জানায়, বনভূমিতে মূলত সবুজায়ন ও বাগান সৃজন করেছেন মুন্সী মিয়া গং। তারা পাহাড়ের ফাঁকা স্থান ও পতিত ভূমিতে দারিদ্র বিমোচর করতে ২০১৪ সালের গোড়ার দিকে বাগান সৃজনের উদ্যোগ নেয়। ৪০ জন যুবক যৌথ উদ্যোগ ও মূলধন বিনিয়োগ করে এ বাগান সৃজন করেছেন। ডা: শফিউল্লাহ গং ২০০৩ সালের দিকে বনায়নের উপকারভোগীর তালিকাভূক্ত হন। ১০ বছর মেয়াদী অংশীদারিত্ব বনায়নে শফিউল্লাহসহ জোঁকখোলা পাহাড়ে ১৫ জন ব্যক্তি বনায়নের জন্য মনোনীত হয়েছিলেন। তারা কাগজপত্র ও দলিল পেলেও মূলত বাগান সৃজন করেননি। সে সময় জোট সরকার দলীয় নেতা-কর্মীদের অনুকুলে স্বনামে বেনামে বনভূমি দখলে দেয়। তারা বিএনপির রাজনীতির শীর্ষ পর্যায়ের নেতা হওয়ায় নীতিমালায় সাংঘর্ষিক থাকলেও ওই ব্যক্তিরা দলীয় কোঠায় উপকারভোগী হন। সুত্র জানায়, ডা: শফিউল্লাহসহ ১৫ জন উপকারভোগী বন সৃজনে অক্ষম ছিলেন। সরকার ওই ব্যক্তিদের বনভূমি দিয়ে কোন ধরনের লাভবান হননি। কিন্তু বড় অংকের ঘাটতি দিতে হয়েছে সরকারকে। এ দিকে ১০ বছর উপকারভোগীর মেয়াদ অতিবাহিত হয়েছে ২০১৩ সালের দিকে। ২০১৪ সালের দিকে মুন্সী মিয়া গং ওই স্থানে বাগান সৃজনকাজ শুরু করে। এ দিকে বনের ওই জায়গা নিয়ে শফিউল্লাহ গং ও মুন্সী মিয়া গংদের মধ্যে আধিপত্য দেখা দিয়েছে। মুন্সী মিয়া গংদের উচ্ছেদ করতে শফিউল্লাহ গং বিপুল অর্থ ব্যয়ের মিশন নিয়ে ¯œায়ু দ্বন্ধে অবতীর্ণ হয়েছে। মুন্সী মিয়া গংদের ৪০ জন ব্যক্তি আ’লীগ রাজনীতির সাথে জড়িত। মুন্সী মিয়া টইটং ৩ নং ওয়ার্ড আ’লীগের অন্যতম কর্মী। এ ছাড়া তার গ্রুপে আছেন ওয়ার্ড আ’লীগ নেতা জমির হোসেন, যুবলীগ নেতা আক্তার আহমদ, ৩ নং ওয়ার্ড কমিটির সাবেক সভাপতি নুরুল আমিন, বর্তমান ওয়ার্ড আ’লীগ সভাপতি নুরুল আলম সর্দারের ছেলে মো: বেলাল, ওয়ার্ডে কাউন্সিলার ছিলেন ব্যক্তি সাহাব উদ্দিন, জাতীয় পার্টির নেতা শাহাদাত হোছাইনসহ ৪০ জন সবাই আ’লীগের রাজনীতির নিবেদিতপ্রাণ। অপরদিকে ডা: শফিউল্লাহ সহ ১৫ জনের মধ্যে আছেন ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি মাষ্টার জয়নাল আবদীন, সাধারন সম্পাদক আবু বক্কর, শফিউল্লাহ নিজেও ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সভাপতি। এ ছাড়া ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সাধারন সম্পাদক গোলাম মোস্তফা, বিএনপি নেতা আবদুল মাবুদ মনু, গুদিকাটার শাহাব মিয়ার ছেলে বিএনপির প্রভাবশালী নেতা নুরুল আমিন, গুদিকাটার সিরাজ সহ আধিপত্য বিস্তারকারী সবাই বিএনপির এক সময়ের নির্যাতনকারী ও দাপুটে নেতা। মুন্সী মিয়াসহ বাগান সৃজনকারীরা জানায়, ২০১৪ সালে আমরা পাহাড়ে বাগান করেছি। বিভাগীয় বন কর্মকর্তার নিকট বিষয়টি লিখিত অবহিত করেছি। তারা আমাদের আবেদন গ্রহন করেছেন। রেঞ্জ কর্মকর্তা ও বনবিট কর্মকর্তা সে সময় এসে আমাদের এ বাগান দেখে গেছেন। তারা অনুমতি দিয়েছেন। এখন আমাদের বাগানের প্রতি কু-দৃষ্টি পড়েছে। আ’লীগ হঠাও কৌশল হচ্ছে পাহাড়ে। বিএনপির প্রভাবশালী এ সব নেতারা আ’লীগের ক্ষমতার সময় আমাদেরকে উৎখাত করার পরিকল্পনা করছে। আমরা বিএনপির সময় সেখানে যেতে পারেনি। অথচ পাহাড়ের নিকট আমরা বসবাস করি। বৈষম্য করেছে বিএনপি সরকার আমাদের। আর এখন আমাদের দলের নেতারা এদের কাছে দুর্বল হয়েছে। তারা সরকারী চাকুরী করে। তারা বাগানের উপকারভোগী হওয়ার যোগ্য নন। এরপরও আমাদেরকে হটানোর কৌশল খোঁজছে। আবদুল মালেক, মো: বেলাল, আক্তার আহমদ, জমির হোসেনসহ বাগান অংশীদার জানায়, চেয়ারম্যান চৌকিদার দিয়ে আমাদেরকে ধরে নিয়ে যেতে বলেছে। ডা: শফিউল্লাহ গং চেয়ারম্যানকে ব্যবহার করছে। অথচ তারা বিএনপি। আমরা আ’লীগের কঠিন সময়ে রাজপথে গিয়েছিলাম। ২৮ অক্টোবর চড়াপাড়ায় শফিউল্লাহ গং ও বিএনপি এবং আমরা আ’লীগের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছিল। সেটি চেয়ারম্যান জানে। এখন আমরা অসহায়। আর বিএনপিরা সবাই উজ্জীবিত। এ সবের জবাব কে দেবে। টইটং বিট কর্মকর্তা জাবেদুল আজাদ চৌধুরী জানায়, উচ্ছেদ ও দখলের বিষয়টিতে আমি ওয়াকিবহাল নয়। পাহাড়ের জায়গা নিয়ে আসলে হটকারিতা চলছে। জায়গা আমাদের। কিন্তু বৈঠক করে চেয়ারম্যানসহ অন্যরা। আসলে এ সব বিষয়ে চেয়ারম্যান বা অন্য কেউ সিদ্ধান্ত দেয়ার এখতিয়ার রাখে না। রেঞ্জ কর্মকর্তা স্যারের সাথে কথা বলে আপনারা এ বিষয়ে ধারণা নিন। আমি চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে এসেছি।

পাঠকের মতামত: