ঢাকা,বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪

উখিয়ায় রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ থামাবে কে? বস্তির আয়তন বাড়ছে

ওমর ফারুক ইমরান, উখিয়া ::::

্‌্‌্কক্সবাজারের উখিয়া কুতুপালং নাইক্ষ্যংছড়ির তুমব্র“, ঘুমধুম ও বালুখালী সহ সীমান্তের বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে রোহিঙ্গারা রাতে আধারে ও দালালদের ম্যানেজ করে এদেশে পাড়ি জমাচ্ছে। স্থানীয়রা জানান, বিজিবি সদস্যরা সীমান্ত এলাকায় সতর্ক অবস্থানে থাকলেও রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ প্রতিরোধ করতে পারছেনা। কারণ সীমান্তের কিছু দালালরা টাকার বিনিময়ে রোহিঙ্গাদের এদেশে টেলে দিচ্ছে বলে তারা জানান। প্রতিনিয়ত অনুপ্রবেশকারী রোহিঙ্গাদের আটক করে পুশব্যাক করা হলেও বিজিবির চোখ ফাকি দিয়ে অনেক রোহিঙ্গা স্বপরিবারে কুতুপালং বস্তিতে আশ্রয় নিচ্ছে। তাদেরকে সহযোগীতা করছে বস্তিতে বসবাসকারী ক্যাম্প কমিটি নামধারী কতিপয় একটি রোহিঙ্গা চাঁদাবাজ চক্র। দিন দিন বস্তি এলাকায় নতুন নতুন ঝুপড়ি সম্প্রসারিত হওয়ার বিষয় নিয়ে জানতে চাওয়া হলে ক্যাম্প ইনচার্জ জানান, রোহিঙ্গা বস্তি তার নিয়ন্ত্রণে নেই তাই আমার বলার কিছু নেই। তবে আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখার জন্য ক্যাম্প পুলিশের সার্বক্ষণিক নজরদারি রয়েছে বলে তিনি জানান।

গতকাল রবিবার মিয়ানমারের মংডু টাউনশীপের ঢেকিবনিয়া ফকিরাবাজার গ্রাম থেকে স্বপরিবারে চলে আসা সাত সদস্যের একটি রোহিঙ্গা পরিবারের দেখা হয় টিভি র‌্যালী কেন্দ্র এলাকায়। জানতে চাওয়া হলে বয়োবৃদ্ধ মহিলা খদিজা বিবি (৫৮) জানান, ছেলে সন্তান নিয়ে অভাব অনটনের জ্বালা সইতে না পেরে চলে এসেছেন। সে আরো জানান, স্থানীয় আলী আকবর নামের এক দালালকে পাঁচশত টাকা দিলে সে ঘুমধুম পর্যন্ত পৌছে দেয়। পরে তারা পাহাড়ী পথ ধরে এতদূর পর্যন্ত এসেছেন। ওই রোহিঙ্গা মহিলা আরো জানান, এখানে সরকারী ত্রাণ সামগ্রী পাওয়া যায়। তাই ইতিপূর্বে অনেক পরিবার এখানে চলে এসেছেন। তারা ভাল আছেন জেনেই আমরা ছুটে এসেছি।

জানা গেছে, উখিয়া ও নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্তের তুমব্র“, ঘুমধুম, বালুখালী, পালংখালী, রেজু আমতলী এলাকায় বিজিবির স্থায়ী চৌকি থাকলেও অনুন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থার কারণে বিজিবি সদস্যদের নাগালের বাইরে থাকে অধিকাংশ সীমান্ত পথ। স্থানীয় দালাল চক্র টহল পার্টি গতিবিধি জেনে নিয়ে বিভিন্ন চোরাই পথ দিয়ে টাকার বিনিময়ে রোহিঙ্গাদের স্বপরিবারে এদেশে ঠেলে দিয়ে নির্ধারিত স্থানে পৌছে দেওয়া হয় বলে ঘুমধুম এলাকার আব্দুল করিম স্বীকার বলেন, বিজিবি প্রতিদিন অনুপ্রবেশকারী রোহিঙ্গাদের আটক করে যথাযথ মানবিক সেবা দিয়ে মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো স্বত্বেও রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ ঠেকানো যাচ্ছেনা। তিনি মিয়ানমার সীমান্তের মতো বাংলাদেশ সীমান্তে কাটা তারের বেড়া সহ সুপরিসর যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত করে দিলে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ সহ চোরাচালান প্রতিরোধ সম্ভব হবে বলে দাবী করেন।

খোঁজখবর নিয়ে জানা গেছে, অবৈধ রোহিঙ্গা বস্তির ম্যানেজমেন্ট কমিটির সভাপতি রোহিঙ্গা আবু ছিদ্দিক (৩৫) অনুপ্রবেশকারী রোহিঙ্গাদের আশ্রয় পশ্রয় দিয়ে তাদের স্থায়ী বসবাসের সুযোগ করে দেওয়ার বিষয়টি প্রশাসনে জানাজানি হয়ে গেলে পুলিশ তাকে আটকের জন্য তৎপর হয়ে উঠে। কুতুপালং এলাকায় অস্বাভাবিক রোহিঙ্গার সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাওয়ার ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে স্থানীয় অধিবাসী এড. ছমি উদ্দিন, স্কুল শিক্ষক অমিয় বড়–য়া সহ একাধিক লোকজন রোহিঙ্গাদের নিয়ন্ত্রণ করে অনুপ্রবেশ প্রতিরোধ করার জন্য প্রশাসনের প্রতি দাবী জানান। তারা বলেন, নতুন করে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের ফলে স্থানীয়ভাবে আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির মারাত্মক অবনতি হয়ে এলাকায় চুরি, ডাকাতি সহ অসামাজিক কার্যকলাপ আশংকাজনকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। এ ব্যাপারে জানতে চাওয়া হলে কুতুপালং ক্যাম্প ইনচার্জ মাহমুদুল হক, নতুন করে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের কথা স্বীকার করে বলেন, অবৈধ রোহিঙ্গা বস্তি এলাকা তার নিয়ন্ত্রণে না থাকায় ওই সব রোহিঙ্গাদের খোজখবর তার জানা নেই।

 ###################

উখিয়া থানা পুলিশের অভিযানে বিদেশী মদ সহ আটক- ২

ওমর ফারুক ইমরান, উখিয়া ::

কক্সবাজারের উখিয়া থানা পুলিশ অভিযান চালিয়ে ২৪ বোতল বিদেশী মদ সহ দুই জনকে আটক করতে সক্ষম হয়েছে। গতকাল রবিবার সকাল ৯ টার দিকে উখিয়া থানা পুলিশের সহকারী উপ-পরিদর্শক মোঃ আনসার আলীর নেতৃত্বে একদল পুলিশ গোপন সংবাদের ভিত্তিতে উপজেলার রাজাপালং ইউনিয়নের চারিকাটির মাথা নামক এলাকায় সিএনজি গাড়ী তল্লাসি চালিয়ে ২৪ বোতল বিদেশী মদ সহ ২ পাচারকারীকে আটক করে। আটককৃতরা হলেন, উপজেলার রতœাপালং ইউনিয়নের তেলীপাড়া গ্রামের হাছু মিয়ার ছেলে কুখ্যাত মাদক চোরাকারবারী মোঃ মোবারক আলী প্রকাশ মদ মোবারক ও জালিয়াপালং ইউনিয়নের সোনাইছড়ী এলাকার সফিকুর রহমানের ছেলে কামাল উদ্দিনকে আটক করেছে বলে বিষয়টি থানা সূত্রে জানা গেছে। এ ব্যাপারে থানার ওসি মোঃ হাবিবুর রহমান সিএনজি সহ বিদেশী মদ ও আসামী আটকের সত্যতা স্বীকার করেন এবং সংশ্লিষ্ট মাদক আইনে মামলা রুজু করে তাদেরকে জেল হাজতে প্রেরন করা হয়েছে বলে তিনি জানান।

######################

সুনামধন্য বালুখালী বাজার এখন ইয়াবা ব্যবসায়ীদের নিয়ন্ত্রণে

ওমর ফারুক ইমরান, উখিয়া :::

কক্সবাজারের উখিয়া সীমান্তের নাফ নদী সংলগ্ন অস্তিত্বহীন বালুখালী বাজারটি ইয়াবা ব্যবসায়ীদের দখলে চলে গেছে। দোকান পাটের পরিবর্তে এখানে গড়ে উঠেছে বিভিন্ন ডিজাইনের পাকা ইমারত। এককালের জমজমাট এ বাজারটি বিলুপ্ত পরবর্তী বাজার দখল করে স্থাপনা নির্মাণের ব্যাপারে জানতে চাওয়া হলে গ্রামবাসী ভয়ে মুখ খুলতে নারাজ। তবে পত্রিকায় নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রত্যক্ষদর্শী স্থানীয়রা জানান, এরা বড় ইয়াবা ব্যবসায়ী, নাম বললে গোষ্ঠীশুদ্ধ বালা করে দেবে।

এলাকার সাবেক মেম্বার মোহাম্মদ আলম প্রকাশ- বাঘা আলম, ডাঃ মঞ্জু লাল বিশ্বাস জানান, তৎকালীন ব্রিটিশ শাসনামলে এ বাজারটি প্রতিষ্ঠিত হয়। কক্সবাজার থেকে দুইটি যাত্রীবাহী বাস বালুখালী পর্যন্ত আসা-যাওয়া করায় এখানে ছিল একটি বাস কাউন্টার। বালুখালী ষ্টেশনের পর থেকে আর কোন যোগাযোগ ব্যবস্থা না থাকায় বালুখালী বাজার নাফ নদীর ঘাট হয়ে নৌকা যোগে মালামাল নিয়ে যাত্রীরা টেকনাফ আসা-যাওয়া করত। জনশ্র“তি রয়েছে বালুখালীর স্থানীয় বাসিন্দা মরহুম নুর আলী সিকদার এ বাজারটি প্রতিষ্ঠা করেছিল। স্থানীয় আওয়ামীলীগ নেতা হামিদুল হক জানান, প্রতি রবিবার ও বুধবার বালুখালী বাজারে হাজারো ক্রেতা-বিক্রেতার সমাগম হত। তৎকালীন বার্মা (মিয়ানমার) হতে ব্যবসায়ীরা বিভিন্ন মালামাল নিয়ে এ বাজারে আসত। সীমান্তে তেমন কোন কড়াকড়ি ছিল না বিধায় বার্মার সব ধরনের মালামাল এ বাজারে পাওয়া যেত। যে কারণে বিয়ের বাজার থেকে শুরু করে সব ধরনের কেনাকাটার জন্য এ বাজারটি ছিল প্রসিদ্ধ। পাশেই ছিল বাস কাউন্টার। সেখানে যানবাহনের শ্রমিকের ছিল নিয়মিত আড্ডা। দুয়েকটি হোটেলে ছিল খাবার ব্যবস্থা। দুর দুরান্ত থেকে আগত যাত্রী বা সরকারি কর্মচারীরা এ হোটেলে বসে নির্ঘুম রাত কাটাতে হতো বলে জানা গেছে। এলাকার প্রবীন ইউ,পি, সদস্য ও আইনজীবী সোলতান আহমদ জানান, তৎকালীন সময়ে বালুখালীর বাসিন্দা হিসাবে তারা গর্ব অনুভব করতে পারত। যেহেতু বালুখালীর মত একটি জমজমাট বাণিজ্যিক এলাকা কক্সবাজার জেলায় আরেকটি ছিল না।

১৯৬০ এর দশকেও এ বাজারটি তার ঐতিহ্য ধরে রাখতে সক্ষম ছিল। কালের আবর্তে ও স্থানীয় কতিপয় প্রভাবশালী মহলের চাঁদাবাজি, দৌরাত্মা, নির্যাতন, মালামাল কিনে টাকা পরিশোধ না করার কারণে এ বাজার ছেড়ে ব্যবসায়ীরা চলে গেছে। শনিবার সকালে বাজারটি ঘুরে দেখা যায়, বাজারে কোন দোকান পাট নাই। একটি সনাতনী পরিবার তার আদি পেশা কামার শিল্পের কাজ করে বাজারের ঐতিহ্য ধরে রেখেছে। বাজারের হাতুড়ি ডাক্তার মঞ্জু লাল বিশ্বাস জানায়, বাজার বিলুপ্ত হওয়ার কারণে তিনি এখন পান বাজারে দোকান দিয়েছেন। স্থানীয়রা জানায়, এখানে ব্যবসায়ীদের দৌরাত্মা ও ইয়াবা সেবনকারীদের চাঁদাবাজি, সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের কারণে এ বাজারটি এখন ইয়াবা অভয়াশ্রমে পরিণত হয়েছে। সম্প্রতি বালুখালী বাজার নিয়ে আলাপ করে জানতে চাওয়া হলে তহসিলদার সেলিম জানায়, এ বাজারে ইয়াবা ব্যবসায়ীরা ইয়াবার টাকায় আলিসান ইমারত তৈরি করে বাজারটি দখল করে নিয়েছে। তিনি বলেন, তিন একর ১৪ শতক খাস জমির উপর গড়ে উঠা এ বাজারটি ২০০৯ সালে পরিত্যক্ত ঘোষণা করে প্রতিবেদন দাখিল করা হয়েছে। বাজার দখল করে ইমারত নির্মাণের ব্যাপারে উখিয়ার সহকারী কমিশনার (ভূমি) নুরু উদ্দিন মোঃ শিবলী জানান, সুনির্দিষ্ট অভিযোগ আসলে যে কোন ধরনের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করে সরকারি জায়গা পূণরুদ্ধার করা হবে এবং জবর দখলকারীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

পাঠকের মতামত: