ঢাকা,বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪

চকরিয়ায় ঋণ পরিশোধে চাপ দেয়ায় ভাবীকে ‘হত্যার’ অভিযোগ দেবরের বিরুদ্ধে

চকরিয়া প্রতিনিধি ::  চকরিয়ায় এনজিও থেকে পাইয়ে দেওয়া ঋণের কিস্তির টাকা পরিশোধ করতে চাপ দেওয়ায় গৃহবধূ ইয়াছমিন আক্তারকে পরিকল্পিতভাবে গলা টিপে হত্যা করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। নিহতের স্বামী, বাপের বাড়ির লোকজন ও স্থানীয় প্রতিবেশীও এটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড বলে পুলিশকে জানিয়েছে। তবে ওই বধূর শরীরের কোথাও দৃশ্যমান আঘাতের ক্ষত না থাকায় ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন পাওয়ার পর এ ব্যাপারে পরবর্তী পদক্ষেপ নেয়া হবে বলে পুলিশ জানিয়েছে।
ইয়াছমিন আক্তারের বড় ভাই বশির আহমদ বাদী হয়ে বোনের দেবর কামরুল ইসলাম ছোটন ও তার স্ত্রী মরিয়ম জন্নাতকে অভিযুক্ত করে ঘটনার পরদিন ১ জুলাই মাতামুহুরী পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের উপপরিদর্শক (এসআই) ঘটনার তদন্তকারী কর্মকর্তা অরুণ চাকমার কাছে একটি এজাহার জমা দিয়েছেন। কিন্তু এজাহারটি মামলা হিসেবে রেকর্ড না হলেও ঘটনার পর থেকে দেবর ও তার স্ত্রী আত্মগোপনে চলে গেছেন।
জানা গেছে, ইয়াছমিন আক্তার চকরিয়া পৌরসভার এক নম্বর ওয়ার্ডের তরছঘাটা গ্রামের মৃত ওসমান গণির কন্যা। প্রায় ৮ বছর আগে ইয়াছমিনকে বিয়ে দেওয়া হয় উপজেলার পূর্ব বড় ভেওলা ইউনিয়নের নোয়াপাড়ার আবদুল মোনাফের ছেলে সবজি বিক্রেতা শাহাব উদ্দিনের সঙ্গে। বর্তমানে তাদের সংসারে তিন সন্তান রয়েছে।
গৃহবধূ ইয়াছমিনের বাপের বাড়ির লোকজনের অভিযোগ, ইয়াছমিন আক্তার কয়েকবছর আগে থেকে দেবর কামরুল ইসলামকে বিভিন্ন এনজিও থেকে ঋণ পাইয়ে দিয়ে আসছিলেন এবং যথাসময়ে শোধও করেন। একইভাবে ঘটনার কয়েকমাস আগে স্থানীয় একটি সমিতি থেকে ৫০ হাজার টাকার ঋণ পাইয়ে দেন দেবরকে। পরবর্তীতে কয়েক কিস্তি পরিশোধ করার পর মাঝপথে তা বন্ধ করে দেয়া হয়। এনিয়ে দেবরের সঙ্গে তুমুল ঝগড়া-বিবাদ চলছিল ভাবী ইয়াছমিনের। এর জের ধরে ৩০ জুন বিকেলে স্বামী সবজি বিক্রেতা শাহাবউদ্দিন বাইরে থাকার সুবাদে দেবর কামরুল ইসলাম ছোটন ভাবী ইয়াছমিন আক্তারকে কৌশলে তার কক্ষে ডেকে নিয়ে গলাটিপে হত্যা করে পালিয়ে যায়। এদিন সন্ধ্যার দিকে স্বামী শাহাবউদ্দিন বাড়ি ফিরে অনেক ডাকাডাকি করেন স্ত্রীকে। কিন্তু কোন সাড়া না পেয়ে আশপাশের বাড়িতে খোঁজ নেন। একপর্যায়ে একান্নবর্তী বাড়ির ভেতর ছোট কামরুলের রুমের দরজার কাছে লাশ পড়ে থাকতে দেখেন স্ত্রীর। এ সময় শাহাবউদ্দিন চিৎকার দিলে স্থানীয় লোকজন এগিয়ে আসেন। পরে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আনোয়ারুল আরিফ দুলালের মাধ্যমে পুলিশকে খবর দেয়া হয়।
খবর পেয়ে চকরিয়া থানার ওসি মো. হাবিবুর রহমান, পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) এস এম আতিক উল্লাহ, মাতামুহুরী পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের উপপরিদর্শক (এসআই) অরুণ চাকমাসহ একদল পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন এবং গৃহবধূ ইয়াছমিনের লাশ উদ্ধার করে সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি শেষে ময়নাতদন্তের জন্য কঙবাজার সদর হাসপাতাল মর্গে প্রেরণ করেন।
ইয়াছমিনের বড়ভাই বশির আহমদ জানান, এ ঘটনায় তিনি বাদী হয়ে বোনের দেবর কামরুল ইসলাম ছোটন ও তার স্ত্রী মরিয়ম জন্নাতকে অভিযুক্ত করে একটি এজাহার জমা দিয়েছেন তদন্ত কর্মকর্তা এসআই অরুণ চাকমার কাছে। তবে সেটি এখনো মামলা হিসেবে রুজু করা না হলেও ঘটনার পর থেকে দেবর ও তার স্ত্রী পলাতক রয়েছেন।
ইয়াছমিনের স্বামী সবজি বিক্রেতা শাহাবউদ্দিন অভিযোগ করেন, তার স্ত্রী কোন ধরণের অসুস্থ অবস্থায় ছিল না। তাকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। এখন তিন সন্তান নিয়ে কিভাবে সামনের দিন অতিবাহিত করবেন তা নিয়ে বেশ দুশ্চিন্তায় তিনি। এ ব্যাপারে চকরিয়া থানার ওসি মো. হাবিবুর রহমান চকরিয়া নিউজকে বলেন, ‘গৃহবধূ ইয়াছমিন আক্তারের কিভাবে মৃত্যু হয়েছে তা রহস্যাবৃত। তাই ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন পাওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। পরিবারের পক্ষ থেকে করা অভিযোগও খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানান তিনি।

পাঠকের মতামত: