ঢাকা,শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪

বিমান বিধ্বস্তে নিহত তিন অবৈধ বিদেশীর মরদেহ পড়ে আছে কক্সবাজার সদর হাসপাতাল হিমঘরে

mail.google.comএম.শাহজাহান চৌধুরী শাহীন,কক্সবাজার, ১৩ মার্চ ॥

কক্সবাজার বঙ্গোপসাগরের নাজিরাররটেক পয়েন্টে কার্গো বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় পাইটলসহ নিহত অবৈধ তিন বিদেশীর মরদেহ গত ৪ দিন যাবৎ পড়ে রয়েছে জেলা সদর হাসপাতাল হিমঘরে। বিধ্বস্ত বিমানটির পরিচালনা সংস্থা ট্র এভিয়েশনের মাধ্যমে নিহতের স্বজনদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টার কথা জানান। কিন্তু ঘটনার ৪ দিন অতিবাহিত হলেও কোন সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে না পারায় মরদেহগুলো হস্তান্তরে সিদ্ধান্তহীনতায় পড়েছেন স্থানীয় প্রশাসন।

৯ মার্চ সকাল সাড়ে ৯ টায় বেসরকারি বিমান সংস্থা ট্রু এভিয়েশনের কার্গো বিমানটি কক্সবাজার বিমানবন্দর থেকে উড্ডয়নের কয়েক মিনিট পর বঙ্গোপসাগরের নাজিরারটেক পয়েন্টে বিধ্বস্তের ঘটনা ঘটে। এতে পাইলট সহ তিন বিদেশি নিহত ও আহত হন আরও এক বিদেশি। চিংড়ি পোনা বোঝাই করে কার্গো বিমানটি কক্সবাজার থেকে যশোর যাচ্ছিল।

নিহত ৩ বিদেশী নাগরিক বিমানটির পাইলট মুরাদ কাপারত, ফ্লাইট ইঞ্জিনিয়ার কুলিশ আন্দ্রে ও কো-পাইলট ইভান ডেমান এর মরদেহ ময়নাতদন্তের পর কক্সবাজার সদর হাসপাতাল মর্গের হিমঘরে রাখা হয়। তাদের মৃতদেহ হস্তান্তর নিয়ে ঘটনার চার দিন পরও স্বজনদের সঙ্গে যোগাযোগ না হওয়া এবং আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণে প্রশাসন কোন সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারেনি। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক ) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন আহত কো-পাইলট ডলোডারমান।

কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মোঃ আলী হোসেন জানান, ট্রু এভিয়েশনের লোকজনের মাধ্যমে নিহতের স্বজনদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা চলছে। এখনো পর্যন্ত নিহতের স্বজনদের সন্ধান পাওয়া যায়নি। ঘটনা অবহিত এবং লাশ হস্তান্তরের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত জানতে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেয়া হয়েছে। উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত পেলে নির্দেশনা অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

প্রশাসন ও পুলিশ সূত্র জানায়, এক বছর মেয়াদের ভিসায় ট্রু এভিয়েশনে চাকুরি নিয়ে এই ৪ বিদেশী বাংলাদেশে অবস্থান করছিলেন। চলতি বছর ১৬ জানুয়ারী নিহত ৩ জনের ভিসার মেয়াদও শেষ হয়ে যায়। বিদেশী নাগরিক আইনানুযায়ী তারা বাংলাদেশে অবৈধভাবে বসবাস করছিলেন।

এ নিয়ে লাশ হস্তান্তরে কোন জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে কিনা জানতে চাইলে কক্সবাজার সদর মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোঃ আসলাম হোসেন বিষয়টি এড়িয়ে গেলেও তিনি জানান, বিমান বিধ্বস্তে ৩ বিদেশী নাগরিক নিহতের ঘটনায় বৃহস্পতিবার রাতে সদর থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা রেকর্ড করা হয়েছে। নিহত ৩ বিদেশীর লাশ হস্তান্তরের বিষয়টি জেলা প্রশাসকের নির্দেশনা অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

কক্সবাজার আদালতের সাবেক পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) এডভোকেট মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর বলেন, জীবিত অবস্থায় কোন ব্যক্তি অপরাধ করে থাকলে মৃত্যুর পর আইনী বিচারের আওতায় থাকেন না। নিহত ৩ বিদেশী নাগরিকের মৃতদেহ হস্তান্তর নিয়ে আইনগত বড় কোন জটিলতা নেই। বিষয়টি দু’দেশের দূতাবাসের মধ্যে যোগাযোগের মাধ্যমে সমাধান করা যেতে পারে।

এই কার্গো বিমানটির পরিচালনায় ছিলেন কক্সবাজারের কুতুবদিয়া-মহেশখালী আসনের সংসদ সদস্য আশেক উল্লাহ রফিক। তবে ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ার পরও চাকুরিতে বহাল রেখে অবৈধভাবে বাংলাদেশে অবস্থানের সুযোগ দিয়েছিল বিধ্বস্ত বিমানটির পরিচালনা সংস্থা ট্রু এভিয়েশন।

এ ব্যাপারে কথা বলতে বিমানটির পরিচালনা সংস্থা ট্রু এভিয়েশন কক্সবাজার এরিয়া কার্যালয় ম্যানেজার হাসমত জাহানের মুঠোফোনে বার্তা পাঠিয়ে একাধিকবার চেষ্টা করেও যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।

পাঠকের মতামত: