ঢাকা,শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪

উখিয়ায় সরকারী ইউরিয়া সার কালো বাজারে

12144705_889534974455838_5989135785643671443_nফারুক আহমদ :
কালো বাজারে ইউরিয়া সার সয়লাব হওয়ায় উখিয়ায় সরকারী ভাবে বরাদ্ধকৃত শত শত মেট্রিকটন সার অবিক্রিত অবস্থায় পড়ে রয়েছে। কতিপয় সার ডিলার চিকন দানাদার সার অবৈধ উপায়ে এনে কালো বাজারে বিক্রি করছে। কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ ও সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের কঠোর নজরদারী ও মনিটরিং না থাকায় এ অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।
কয়েক জন সার ডিলার জানান, কৃষি মন্ত্রণালয়ের পরিচালনাধীন বিসিআইসি কর্তৃক বরাদ্দকৃত ইউরিয়া সার চট্টগ্রাম অঞ্চলের সার ডিলারগণ মূলত চট্টগ্রাম ফার্টিলাইজার থেকে উত্তোলন করেন। সরকারের আমদানীকৃত যে সব সার চট্টগ্রাম ফার্টিলাইজার কাফকো কারখানায় উৎপাদন হচ্ছে সবই সার মোটা দানাদার। এসব সারের কাঁচা মাল কাতার থেকে আমদানী হয়ে থাকে। তাই আমাদেরকেও বাধ্য হয়ে মোটা দানাদার ইউরিয়া সার উত্তোলন করে আনতে হয়। অপর একটি সূত্রে জানা গেছে, চিকন দানাদার সার উৎপাদন কারখানা সিওফল বর্তমানে বিদ্যুৎ ও গ্যাস সরবরাহ পর্যাপ্ত না হওয়ায় গত দু’বছর ধরে বন্ধ রয়েছে।
খোঁজখবর নিয়ে জানা যায়, স্থানীয় কৃষকদের মাঝে বড় দানাদার ইউরিয়া সারের চেয়ে চিকন বা ছোট দানাদার ইউরিয়া সারের চাহিদা বেশি। তাদের ধারনা চিকন দানাদার সার জমিতে ব্যবহার করলে সহজে পানির সাথে মিশে গিয়ে চাষের উর্বরতা শক্তি বৃদ্ধি করে। উপজেলা প্রশাসন সারের প্রতি কেজি ১৬ টাকা নির্ধারণ করা হলে কতিপয় ডিলার কালো বাজারের মাধ্যমে চিকন দানাদার সার প্রতি কেজিতে ২২ থেকে ২৫ টাকায় বিক্রি করছে।
উখিয়া কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, উখিয়ায় ১০ জন বিসিআইসি নিযুক্ত সার ডিলার ও উপজেলা প্রশাসনের নিয়োগকৃত ৩৫ জন খুচরা সার ডিলার রয়েছে। কৃষি মন্ত্রণালয় গত জানুয়ারী মাসে ৫৮০ মেট্রিকটন, ফেব্রুয়ারী মাসে ৬০০ মেট্রিকটন ও মার্চ মাসে ৩৩৪ মেট্রিকটন ইউরিয়া সার বরাদ্দ দেয়। তৎ মধ্যে চলতি মাসের বরাদ্দকৃত ৩৩৪ মেট্রিকটন বরাদ্দকৃত সারের মধ্যে ১ছটাক এ পর্যন্ত উত্তোলন হয়নি। এছাড়াও ফেব্রুয়ারী মাসের ২০টন সার এখনো উত্তোলন করেনি। কৃষি বিভাগ আরো জানান, বর্তমানে প্রায় ৫৮৫ মেট্রিকটন ইউরিয়া সার উখিয়ার বিভিন্ন ডিলারের দোকানে অবিক্রিত অবস্থায় মজুদ রয়েছে।
কয়েকজন সার ডিলারের সাথে আলাপকালে জানা যায়, মরিচ্যা ও উখিয়া সদরের দু’জন সার ডিলার তাদের নিজস্ব ট্রাক  গাড়ী যোগে দেশের উত্তরাঞ্চল থেকে চিনা তৈরি খেজুর গাছ মার্কা চিকন দানাদার সার কালো বাজারে উখিয়া এনে সয়লাব করে দেয়। সরকারী মূল্যের চেয়ে প্রতি কেজি সার ২২টাকা থেকে ২৫ টাকায় বিক্রি করে লক্ষ লক্ষ টাকা অতিরিক্ত হাতিয়ে নিচ্ছে কৃষকের কাছ থেকে। ফলে সরকারী ভাবে বরাদ্দকৃত মোটা দানাদার সার আমরা চট্টগ্রাম থেকে উত্তোলন করে আনলেও তা বিক্রি করতে পারছি না। কারণ চিকন দানাদার সার ফেলে কৃষকরা বড় দানাদার সার ক্রয় করতে চায় না। তাই আমাদের গুদামে শত শত মেট্রিকটন ইউরিয়া সার অবিক্রিত অবস্থায় পড়ে রয়েছে। শুধু মাত্র অবৈধ ভাবে আসা কালো বাজারের চিকন দানাদার সার বিক্রি হওয়ার কারণে।
এদিকে দায়িত্বশীল সূত্রে জানা যায়, উখিয়া সদরের নজির আহমদ সওদাগর নামক এক সার ডিলারের দোকানে গত ১৭ মার্চ উপজেলা সহকারী উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা, ছিদ্দিক আহমদের নেতৃত্বে তদন্ত কালে বরাদ্দকৃত হিসাবের চেয়ে ২২৫ বস্তা সার কম পাওয়া ঘটনা নিয়ে রীতিমত তোলপাড় সৃষ্টি হলে ও পরবর্তীতে তা আর আলোর মূখ দেখেনি। গত ২৩ ফেব্রুয়ারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ মাঈন উদ্দিনের নেতৃত্বে দ্বিতীয় দফা তদন্ত হয়েছিল। তবে সচেতন মহলের প্রশ্ন ঘটনার ৭দিন পর দ্বিতীয় দফা তদন্ত করলে আসল ঘটনা আদৌ উদঘাটন করা কি সম্ভব? এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে কক্সবাজার কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপ-পরিচালক আ হ ম শাহরিয়ার দৈনিক কক্সবাজারকে বলেন, কালো বাজারে অতিরিক্ত দামে সার ক্রয়-বিক্রি তদারকি করতে উখিয়া কৃষি বিভাগের দায়িত্বরত কর্মকর্তাদেরকে কড়া নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকেও সারের বিষয়টি মনিটরিং করার অনুরোধ করা হয়। আমরা সবসময় এ বিষয়ে সতর্ক রয়েছি। যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ পাওয়া যাবে প্রশাসনিক ভাবে অভিযুক্ত সার ডিলারদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
অনেক সার ডিলার ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেছেন, মরিচ্যার একজন ডিলার ও উখিয়া সদরের একজন ডিলারের কারণে আজ কালো বাজারে চিকন দানাদার সার সয়লাব হয়ে গেছে। পক্ষান্তরে সরকারী ভাবে বরাদ্দকৃত শত শত মেট্রিকটন ইউরিয়া সার অবিক্রিত অবস্থায় পড়ে রয়েছে। অনেকেই আশংকা করেছেন মার্চ মাসের বরাদ্দকৃত ৩৩৪ মেট্রিকটন সার চট্টগ্রাম থেকে উত্তোলন নাও হতে পারে। ব্যবসায়ীদের অভিমত গুদামে মজুদকৃত সার বিক্রি করতে না পারলে বরাদ্দকৃত সার এনে লাভ কি। নাগরিক সমাজের অভিমত কালো বাজারের মাধ্যমে চিকন দানাদার সার এনে অতিরিক্ত দামে বিক্রিকারী চিহ্নিত সার ডিলারদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ না করায় উখিয়ায় সার নিয়ে তেলেসমাতি ঘটনা সংঘঠিত হচ্ছে। এ বিষয়ে জেলা প্রশাসন ও কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের বিশেষ নজরদারী জরুরি বলে মনে করছেন সুশীল সমাজ। – See more at: http://www.dainikcoxsbazar.net/?p=84820#sthash.BgNvXaCl.dpuf

পাঠকের মতামত: