ঢাকা,বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪

ক্ষতি কাটিয়ে পুরোদমে লবণ উৎপাদনে ব্যস্ত কক্সবাজারের চাষিরা

ছোটন কান্তি নাথ, চকরিয়া ::  লবণ উৎপাদন মৌসুমের মোক্ষম সময়ে হঠাৎ করে প্রকৃতির বৈরি আচরণে কয়েকদিন গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টিতে কিছুটা ক্ষতির সম্মুখিন হন মাঠপর্যায়ের চাষিরা। এতে গত একসপ্তাহ ধরে লবণ উৎপাদনকারী অঞ্চল কক্সবাজারের চকরিয়া, পেকুয়াসহ ৭ উপজেলা ও চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলার প্রায় ৬০ হাজার একর জমিতে ব্যাহত হয় লবণ উৎপাদন। এই অবস্থায় কিছুটা আর্থিকভাবে ক্ষতির মুখে পড়েন এখানকার লক্ষাধিক চাষি। তবে বৈরি আবহাওয়া কেটে গিয়ে স্বাভাবিক হয়ে আসায় ফের পুরোদমে মাঠে নেমেছেন চাষিরা। লবণ উৎপাদনও ভাল হওয়ায় হাসিও ফুটেছে চাষিদের মাঝে।
তবে চাষিদের মাঝে আতঙ্ক কাজ করছে, গত কয়েক মৌসুমে দেশে চাহিদার বিপরীতে উদ্বৃত্ত লবণ উৎপাদন এবং সেই লবণ এখনো মাঠে মজুদ থাকার পরেও বিদেশ থেকে লবণ আমদানির চক্রান্তে মাথায় হাত উঠছে চাষিদের। তাদের দাবি, দাম ঠিক রেখে লবণ চাষিদের ন্যায্যদাবি মেনে নেওয়া এবং বিদেশ থেকে লবণ আমদানির চক্রান্তের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। এজন্য সরকারের প্রধানমন্ত্রী, বাণিজ্য ও শিল্পমন্ত্রীর সুদৃষ্টি কামনা করছেন এখানকার চাষিরা।
জানা গেছে, সম্প্রতি কয়েকদিনের গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টিতে থমকে যায় চলতি মৌসুমে কক্সবাজার অঞ্চলের সদর, চকরিয়া, পেকুয়া, কুতুবদিয়া, মহেশখালী, উখিয়া, টেকনাফ ও চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলায় লবণ উৎপাদন কার্যক্রম। লবণ চাষিদের মতে, কয়েকদিনের গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টিপাতে দেশের একমাত্র লবণ উৎপাদনকারী অঞ্চল কক্সবাজারের উপরোক্ত উপজেলার লবণমাঠ বৃষ্টির পানিতে তলিয়ে যায়। বিশেষ করে পলিথিন পদ্ধতিতে উৎপাদিত সাদা লবণ পানির সাথে মিশে গিয়ে আর্থিকভাবে ক্ষতি হয়েছে তাদের। লবণ চাষিরা জানান, চলতি বছর লবণ মৌসুম শুরুর পর এখন পর্যন্ত প্রতি কানিতে ৮০ থেকে ১শ মন লবণ উৎপাদন করেন চাষিরা। বৃষ্টিপাতের কারণে প্রায় এক সপ্তাহ লবণ উৎপাদন ব্যাহত হয়। তবে আবহাওয়া শুষ্ক ও স্বাভাবিক হওয়ায় বর্তমানে পুরোদমে মাঠে নেমেছেন তারা।
কক্সবাজার বিসিকের একাধিক কর্মকর্তা ও বাংলাদেশ লবণ চাষি সমিতির কর্মকর্তারা দাবি করেছেন, বৈরি আবহাওয়ায় কয়েকদিন লবণ উৎপাদন ব্যাহত হলেও তা লক্ষ্যমাত্রা পূরণে কোন প্রভাব ফেলবে না। কারণ গত বছরের উৎপাদিত উদ্বৃত্ত বিপুল পরিমাণ লবণ এখনো মাঠে মজুদ রয়েছে। তাছাড়া বৃষ্টিপাতে লবণ চাষিদের আর্থিকভাবে বড় অঙ্কের ক্ষতি হবেনা। কারণ বৃষ্টিপাতের আগাম আভাস থাকায় মাঠের বেশির ভাগ চাষি উৎপাদিত লবণ নিজেদের অনুকূলে নিয়ে আসতে সক্ষম হয়েছে। আবার অনেকে মাঠের ভেতরে পলিথিন মুড়িয়ে উৎপাদিত লবণ সুরক্ষিত অবস্থায় নিয়ে রেখেছে। ফলে অল্প পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হলেও উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রায় তেমন প্রভাব পড়বেনা।
বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প (বিসিক) কক্সবাজার কার্যালয়ের উপ-মহাব্যবস্থাপক দিলদার আহমদ চৌধুরী চকরিয়া নিউজকে বলেন, চলতিবছর দেশে লবণের চাহিদা রয়েছে প্রায় ১৬ লাখ ৭০ হাজার মেট্টিক টন। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে প্রায় ১৮ লাখ মেট্টিক টন। এর বিপরীতে গেল ৪ মার্চ পর্যন্ত ৬০ হাজার একর জমিতে ৮ লাখ ৫ হাজার ২০০ মেট্টিক টন লবণ উৎপাদন হয়েছে। তিনি বলেন, বৃষ্টিতে কয়েকদিন বন্ধ থাকলেও আবারও পুরোদমে মাঠে নেমেছেন চাষিরা। এছাড়া আরো দুইমাসের বেশি সময় পাবে চাষিরা লবণ উৎপাদনের জন্য। এইসময়ের মধ্যে লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে উদ্বৃত্ত লবণ উৎপাদন করতে সক্ষম হবেন চাষিরা।
জানতে চাইলে বাংলাদেশ লবণ চাষি সমিতির সভাপতি ও বৃহত্তর লবণ উদপাদনকারী প্রতিষ্ঠান চকরিয়া উপজেলার দরবেশকাটা এন্টারপ্রাইজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. শহিদুল ইসলাম চকরিয়া নিউজকে বলেন, কয়েকদিনের গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টিতে চাষিদের কিছুটা ক্ষতি হলেও উৎপাদন মৌসুম শুরুর অনেক আগে থেকেই লবণ উৎপাদনে মাঠে নামেন চাষিরা। তাই কোনভাবেই লবণের ঘাটতি হবে না। তিনি জানান, বর্তমানে প্রতিকানিতে ৮০ থেকে একশত মণ লবণ উৎপাদন করছেন চাষিরা। যা অন্য বছরের চাইতে আশাব্যঞ্জক। শহিদুল ইসলাম চকরিয়া নিউজকে বলেন, দেশে ভোক্তা ও শিল্প পর্যায়ে লবণের চাহিদা প্রচুর। সেইসাথে মাঠপর্যায়ের চাষিরা ভালো দামও পাচ্ছেন। বাকী সময়ের মধ্যে বিসিকের লক্ষ্যমাত্রা অতিক্রম করে দেশে বিপুল পরিমাণ উদ্বৃত্ত লবণ উৎপাদন হবে।

পাঠকের মতামত: