ঢাকা,বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪

আত্মসমর্পণের সুযোগ চায় আরও ৫০ ইয়াবা কারবারি

নিউজ ডেস্ক ::
টেকনাফকেন্দ্রিক ইয়াবা কারবারিদের মধ্যে আরও অন্তত ৫০ জন আত্মসমর্পণ করতে চায়। এরই মধ্যে এ ব্যাপারে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে তারা যোগাযোগ করেছে। এদিকে, প্রথম দফায় আত্মসমর্পণ করা ১০২ জন ইয়াবা কারবারির সম্পদের তথ্য বিবরণীর খোঁজ নিতে সরকারের সংশ্নিষ্ট দপ্তরে চিঠি দিচ্ছে পুলিশ। এ ছাড়া আত্মসমর্পণের দিন তাদের বিরুদ্ধে করা মামলায় কীভাবে আইনি সহায়তা দেওয়া যায়, সে ব্যাপারে চিন্তা-ভাবনা করা হচ্ছে। গতকাল শুক্রবার একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র এ তথ্য জানায়।

কক্সবাজারের পুলিশ সুপার এ বি এম মাসুদ হোসেন সমকালকে বলেন, প্রথম দফায় আত্মসমর্পণের আগে অনেকের মধ্যে ধারণা ছিল পরবর্তী সময়ে কি-না কী ঘটে। তবে বিষয়টিকে ইতিবাচকভাবে নিয়ে আরও অনেকে আত্মসমর্পণে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। সরকারের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে আলোচনা করে এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

গত ১৬ ফেব্রুয়ারি টেকনাফে সাবেক এমপি আবদুর রহমান বদির চার ভাইসহ ১০২ জন ইয়াবা কারবারি আত্মসমর্পণ করেছিল। এরপর শুধু টেকনাফে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হয়েছে আটজন। এর মধ্যে সর্বশেষ শুক্রবার ভোরে চারজন নিহত হয়েছে। ২০১৮ সালের ৪ মে থেকে দেশব্যাপী মাদকবিরোধী অভিযান শুরু হয়। সেই থেকে কক্সবাজারেই ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হয়েছে ৪৫ জন। এর মধ্যে শুধু টেকনাফের ৪২ জন। ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি ইয়াবা কারবারিদের আত্মসমর্পণের পরবর্তী পরিস্থিতি কী হয়- এ নিয়ে টেকনাফে নানামুখী আলোচনা ছিল। যারা আত্মসমর্পণ প্রক্রিয়ার বাইরে ছিল তাদের ব্যাপারে কী ধরনের নীতি গ্রহণ করা হয়, তা নিয়ে ছিল অনেক জল্পনা-কল্পনা। তবে আত্মসমর্পণের পরও একের পর এক ‘বন্দুকযুদ্ধের’ ঘটনায় টেকনাফে এখন এক ধরনের আতঙ্ক বিরাজ করছে।

কক্সবাজার জেলা পুলিশের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা সমকালকে বলেন, দ্বিতীয় দফায় আত্মসমর্পণে ইচ্ছুক ইয়াবা কারবারি অনেকে ইয়াবা বড়ি ও অস্ত্র ছাড়া আত্মসমর্পণ করতে চায়। তাদের ধারণা, ইয়াবা ও অস্ত্র নিয়ে আত্মসমর্পণ করলে তারা আইনি ঝামেলায় পড়তে পারে। তবে সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে এরই মধ্যে আত্মসমর্পণকারী ইয়াবা কারবারিদের পুনর্বাসনের উদ্যোগ নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে।

সংশ্নিষ্টরা বলছেন, সরকার মাদকের ব্যাপারে কঠোর নীতি নিয়ে সামনে এগোলেও ইয়াবা কারবারিদের তৎপরতা থেমে নেই। তবে টেকনাফ ঘিরে ইয়াবার রমরমা কারবার আগের তুলনায় অনেক কমেছে। এখন নতুন নতুন রুট ব্যবহার করে কারবারিরা সক্রিয় হওয়ার চেষ্টা করছে। ইয়াবা কারবারের সঙ্গে মিয়ানমারের নাগরিকরা আরও সক্রিয়ভাবে জড়িয়ে পড়ছে। এরই মধ্যে এক লাখ পিস ইয়াবাসহ মিয়ানমারের ১১ নাগরিককে গ্রেফতার করেছে কোস্টগার্ড।

টেকনাফের একাধিক বাসিন্দা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, ১০২ জন ইয়াবা কারবারির আত্মসমর্পণের পর তাদের ব্যাপারে পরবর্তী আইনি প্রক্রিয়া কী হয়, সেদিকে অনেকেই নজর রাখছে। বিশেষ করে তালিকাভুক্ত যেসব কারবারি আত্মসমর্পণ করেনি তারাই বেশি খোঁজ নিচ্ছে। আইনি প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে আত্মসমর্পণকারীরা দ্রুত কারাগার থেকে ছাড়া পেলে আরও অনেকে আত্মসমর্পণ করতে পারে। এরই মধ্যে তালিকাভুক্ত ইয়াবার যেসব গডফাদার বিদেশে পালিয়েছে, তারাও এ বিষয়ে তথ্য নিচ্ছে।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জানান, ইয়াবা কারবারিদের আত্মসমর্পণের সুযোগ দেওয়া হলেও নিয়মিত অভিযানে কোনো ধরনের শিথিলতা থাকবে না। আত্মসমর্পণের আওতায় না এসে কারবারিরা কৌশলে সক্রিয় হওয়ার চেষ্টা করলে তাদের পরিণতি হবে ‘ভয়াবহ’। উদ্যোগটি মাদক প্রতিরোধের ‘সফট’ অ্যাপ্রোচ হিসেবে দেখা হলেও ‘হার্ড’ অ্যাপ্রোচও বন্ধ হবে না। যেকোনো মূল্যে ইয়াবা কারবার বন্ধ করবে সরকার- এই বার্তা দিতে চায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।

একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, সরকারের কয়েকটি সংস্থা মাদক ব্যবসায়ী ও তাদের মদদদাতা, সহযোগীদের তালিকা তৈরি করে থাকে। এ তালিকায় কক্সবাজারেই ১ হাজার ১৫১ জনের বিরুদ্ধে পাঁচশ’র মতো মামলা রয়েছে। তালিকায় থাকা যে কারবারিরা এখনও আত্মসমর্পণ করেনি তাদের মধ্যে রয়েছে- সাবেক এমপি বদির ভাই মজিবুর রহমান, নির্মল ধর, রোহিঙ্গা মোহাম্মদ আলম, ডাকাত আবদুল হাকিম, সাইফুল, মোহাম্মদ আবদুল্লাহ, মোহাম্মদ জাফর আহমদ, মোহাম্মদ জাফর, সাইফুল করিম, মোহাম্মদ শাহজাহান, মোহাম্মদ ইলিয়াছ, মোহাম্মদ রফিক, মোহাম্মদ আজিজ, নুর কামাল, মোহাম্মদ মুজিব, আবদুর রহমান, রাশেদ মাহামুদ আলী, মাহাবুব মোর্শেদ, এসকে আনোয়ার, আবুল হোসেন, আবদুল হামিদ, মোহাম্মদ হেলাল, মোহাম্মদ হুমায়ুন প্রমুখ।

শুক্রবার টেকনাফে নিহত চার ইয়াবা কারবারির মধ্যে নজির আহমেদ একজন। সে টেকনাফের হ্নীলা ইউনিয়নের চৌধুরীপাড়ার জানে আলমের ছেলে। নজিরের ভাই আবদুল হাকিমের বিরুদ্ধে ইয়াবা কারবার ও ডাকাতির অভিযোগ রয়েছে। হাকিম টেকনাফের এক ধরনের ত্রাস। সে রোহিঙ্গা। দীর্ঘদিন ধরে গহীন পাহাড়ে আত্মগোপন করে ইয়াবা ব্যবসা চালিয়ে আসছে হাকিম। তার বিরুদ্ধে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে এক আনসার সদস্যকে হত্যা করে অস্ত্র লুট করার অভিযোগ রয়েছে।

একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র সমকালকে জানায়, টেকনাফে ইয়াবারোধে কড়াকড়ি জারি থাকায় মাদক কারবারিরা রুট পরিবর্তন করছে। এখন মিয়ানমার থেকে সরাসরি সমুদ্র পথে ও অন্যান্য রুটে ইয়াবা বড়ি কক্সবাজার, মহেশখালী, চট্টগ্রাম, পতেঙ্গা, আনোয়ারা, কুমিল্লা, সিলেটসহ বিভিন্ন এলাকায় পৌঁছায়। এর সঙ্গে মিয়ানমারের একটি সংঘবদ্ধ চক্র জড়িত। গত ২১ ফেব্রুয়ারি এ চক্রের ১১ জনকে গ্রেফতার করেছে কোস্টগার্ড। তাদের কাছে পাওয়া গেছে ১ লাখ ইয়াবা বড়ি। গ্রেফতারদের বিরুদ্ধে মাদক ও অবৈধ অনুপ্রবেশ আইনে টেকনাফ থানায় মামলা করা হয়েছে। সুত্র: সমকাল

পাঠকের মতামত: