অনলাইন ডেস্ক ::
বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহান বলেছেন, প্রিন্ট মিডিয়া আসলেই একটি বিশাল চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি। তবু প্রিন্ট মিডিয়া একটি ট্র্যাডিশন। ট্র্যাডিশন আজীবন বেঁচে থাকবে, এটার শেষ নাই। যেকোনো উপায়ে হোক এই ট্র্যাডিশন ধরে রাখতে হবে। যদিও আজকে মানুষ সবাই টেলিভিশনে, মোবাইল ফোনে কিংবা অন্যান্য ডিজিটাল মাধ্যমে সারা দিনের সব খবর পেয়ে যায়।
গতকাল বুধবার ইস্ট ওয়েস্ট মিডিয়া গ্রুপ লিমিটেডের (ইডাব্লিউএমজিএল) কনফারেন্স রুমে দৈনিক বাংলাদেশ প্রতিদিনের প্রতিনিধি সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
আহমেদ আকবর সোবহান বলেন, ‘আমি সবাইকে একটি কথাই বলব, জনদুর্ভোগ নিয়ে আপনারা লিখবেন। প্রতিটি সেক্টরে মানুষের দুর্ভোগ হচ্ছে, কষ্ট পাচ্ছে। আমি নিজেই খুব ভালোভাবে উপলব্ধি করি, আমাদের যেভাবে ভোগান্তি হয়, সাধারণ মানুষ আজ কোন পর্যায়ে।’
‘সরকারের প্রধান কাজ মানুষের শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবা দেওয়া’ উল্লেখ করে বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান বলেন, এই দুটির ভেতরে যে দুর্নীতি, যে অনাচার, যে জুলুম; কোনো চিকিৎসকের কাছে গেলে একটি পরীক্ষা দেয়। একজন গরিব মানুষের পক্ষে ১০ হাজার টাকার পরীক্ষা করানো অনেক কষ্টের। বিষয় হলো—চিকিৎসক ওই ১০ হাজার টাকায় কমিশন পান চার হাজার টাকা। হয়তো ওই পরীক্ষার কোনো প্রয়োজনই ছিল না।
তিনি আরো বলেন, প্রতিটি সরকারি হাসপাতালে সব ধরনের সুবিধা থাকার পরও আশপাশের কিছু ক্লিনিকে সবাইকে চিকিৎসা করাতে আগ্রহী ডাক্তাররা। প্রধানমন্ত্রী এসব বিষয়ের প্রতি দৃষ্টি দিয়ে বলেছেন, যাদের হাসপাতালে পাওয়া যায় না তাদের চাকরি করার দরকার নাই।
আহমেদ আকবর সোবহান বলেন, গ্রামের মানুষ আজ অনেক অসহায়। তারা চিকিৎসার জন্য ঢাকায় এসে দালালের খপ্পরে পড়ে নানা সমস্যার সম্মুখীন হয়। আদালতে একটি সিভিল কেস নিষ্পত্তি হতে ২০-২৫ বছর লাগে। একজন কৃষকের মামলার পেছনে ২০-২৫ বছর গেলে তিনি মামলা চালাতে গিয়েই ফকির হয়ে যান। ব্রিটিশ আমলের এই আইন সংশোধন করা উচিত।
বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আরো বলেন, ‘আমরা সব সময় সরকার, রাজনীতিবিদদের পরামর্শ দেওয়ার কাজ করব; তারা কী করবে সেটা তাদের বিষয়। আমি মিডিয়ার যাত্রাকালে বলেছিলাম, আপনারা কখনো মিথ্যা সংবাদ দেবেন না। মিথ্যা আজীবনই মিথ্যা, সত্যের জন্য মৃত্যু হলেও ভয় পাওয়ার কিছু নাই।’
আহমেদ আকবর সোবহান বলেন, ‘ইস্ট ওয়েস্ট মিডিয়াই মাদকের বিরুদ্ধে প্রথম লড়াই শুরু করে। আমাদের ১৪ জন সাংবাদিক সেখানে গিয়েছিলেন, তাঁদের অনেকে মৃত্যুর মুখে পড়েছিলেন। আমি তাঁদের সবাইকে ধন্যবাদ জানাই। মাদকের বিরুদ্ধে লড়াই শুধু দেশের জন্য নয়, নিজের জন্যও করতে হবে। আজকে আপনার ছেলেও মাদকাসক্ত হতে পারে। শুধু মাদক কারবারিই নয়, গ্রহণকারীদেরকেও শাস্তির আওতায় আনা উচিত। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তি, চাকরির ক্ষেত্রে যেন তাদের রক্ত পরীক্ষা করা হয়। এতে প্রতিটি পরিবারই মনে করবে—মাদকাসক্ত হলে আমার ছেলে চাকরি পাবে না, কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে পারবে না।’
তিনি বলেন, ‘ইস্ট ওয়েস্ট মিডিয়ার নীতি হলো কালোকে কালো বলা, সাদাকে সাদা। আমি অনুরোধ করব, আপনারা মিথ্যা সংবাদ দেবেন না। কোনো ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে না জেনে কিছু লিখবেন না। ব্যবসায়ীরা প্রতিটি সেকেন্ডে যুদ্ধ করছেন। তাঁরা হাজার হাজার মানুষের কর্মসংস্থান করছেন। মিথ্যা লিখে কোনো ব্যবসায়ীকে হয়রানি করবেন না। মিডিয়া আমার বিরুদ্ধাচরণ করেছে সবচেয়ে বেশি। সেই কারণে আমার মিডিয়ার জন্ম। মিডিয়ার আগের চরিত্র কিছুটা হলেও আমরা পরিবর্তন করতে পেরেছি। আজ মিথ্যা দিয়ে কোনো ব্যবসায়ীকে কেউ হয়রানি করতে পারে না।’
আহমেদ আকবর সোবহান বলেন, ‘আমাদের সুপ্রিম কোর্টের আদেশও বেশ কিছু সরকারি কর্মচারী, ব্যাংকের চেয়ারম্যান-এমডিরা মানেন না। সুপ্রিম কোর্ট যে আদেশ দেন সেটাই আইন। সেটা যদি না মানেন তাহলে আইনব্যবস্থা রক্ষা করা কঠিন হবে। সুপ্রিম কোর্ট, হাইকোর্টের নির্দেশ যাঁরা মানেন না, তাঁদের বিরুদ্ধে গণমাধ্যমের আরো কঠোর হওয়া উচিত। এমনও লক্ষ করা গেছে—সুপ্রিম কোর্ট, হাইকোর্টের বেশ কয়েকটি নির্দেশ জেলা প্রশাসকরা মানছেন না। এসব বিষয়ে সাংবাদিকদের আরো সোচ্চার হওয়া উচিত। যেকোনো অন্যায়ের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়া উচিত।’
বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান বলেন, ‘আপনারা জানেন, মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষে মিডিয়ার যেসব ভূমিকা আছে, আমরা সবগুলোই পালন করি। আমাদের তরুণ ও যুবসমাজের কাছে স্বাধীনতার চেতনা জাগিয়ে রাখতে হবে। কিভাবে দেশ স্বাধীন হয়েছে, কিভাবে দেশ এই অবস্থানে আসল—এ সব কিছুই জানাতে হবে।’
তিনি আরো বলেন, ‘আমরা কোনো দিন চাই না স্বাধীনতা বিরোধীরা ক্ষমতায় আসুক। ষড়যন্ত্র ছিল, আছে, থাকবে। আমাদের সতর্ক থাকতে হবে। মাদক, হুন্ডি, দুর্নীতির বিরুদ্ধে আজীবন আমরা সোচ্চার থাকব। দুই দিন আগে দেখলাম, ৫০ হাজার কোটি টাকা পাচার হয়েছে। এসব তো দেশের কৃষকের টাকা। এই টাকা দেশে থাকলে অনেক উন্নয়ন হতো।’
আহমেদ আকবর সোবহান বলেন, ‘দেশ যাতে রকেট গতিতে এগিয়ে যেতে পারে, চীন-ভারতকে ছাড়িয়ে যেতে পারে, সেই আকাঙ্ক্ষা, ইচ্ছা প্রকাশ করছি। দেশের উন্নয়নে সব সময় পাশে থাকব।’
পাঠকের মতামত: