ঢাকা,বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪

যে যাই বলুক ভাই, আমার সোনার নৌকা চাই!

এম.আর মাহমুদ :::m.r-mahmod,,

ইউপি নির্বাচনের শুরুতেই শাসক দলের এক শ্রেণির নেতাকর্মী নৌকা প্রতীকের জন্য পাগল হয়ে গেছে। বেশিরভাগ নেতাকর্মীরাই নৌকার মাঝি হতে গ্রাম থেকে উচ্চ পর্যায় পর্যন্ত ব্যাপক দেন-দরবার চালিয়ে যাচ্ছে। আবার কিছু প্রবাসী প্রাপ্তিও দলের মনোনয়ন নিশ্চিত করার জন্য মোটা অংকের দান-খয়রাত নিয়ে তদবিরে ভিট জমাচ্ছে। যেন কেহ কারে নাহি ছাড়ে, সমানে সমান। কবি গুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সে ঐতিহাসিক গানের একটি কলি ‘যে যাই বলুক ভাই, আমি আমার সোনার হরিণ চাই!’ বর্তমান অবস্থায় অনিচ্ছা স্বত্বেও গানের কলি পরিবর্তন করে বলতে হচ্ছে ‘যে যাই বলুক ভাই, আমি আমার সোনার নৌকা চাই!’ আ’লীগের বেশিরভাগ হবু প্রার্থী মনে করছে দলের প্রতীক পেলেই ৭৫% বিজয় নিশ্চিত। আর ২৫% অন্য কায়দায় আদায় করবে। নৌকার প্রতীকটি হচ্ছে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতীক। এ প্রতীকেই দেশ স্বাধীন হয়েছে। আগে এ প্রতীকে ৫ বছর পর পর জাতীয় সংসদ নির্বাচন হতে দেখেছি। ভাগ্য ভাল, তাই বর্তমানে স্থানীয় সরকার পরিষদের তৃণমূল পর্যায়ে নির্বাচনেও নৌকা প্রতীক দেখছি। কথায় আছে ‘এ কি বিধির লীলা খেলা, কাকের গলায় তুলসি মালা’ অতীতে স্থানীয় সরকার পরিষদের (ইউনিয়ন পরিষদ) ইউপি নির্বাচনের তপশীল ঘোষণার পর গ্রামের চেহারা পাল্টে যেত। সব ভোটারের মুখে একটি কথায় উচ্চারিত হত যোগ্য প্রার্থীকে ভোট দেব। এখন সে প্রতিধ্বনি আর শোনা যাচ্ছে না। নির্বাচনী উৎসাহ উদ্দীপনা নেই বললেই চলে। এখন ভোটারদের মনে উৎসাহ নেই। আছে ভয় ও শংকা। কারণ ভোট দিতে গিয়ে যদি মাস্তান বাহিনীর লাঠি পিঠা ও ধাক্কা-মুটকি কপালে জুটে। তাহলে ভোট দিয়ে লাভ কি? এক সময় ভোট আসলে ভোটারদের ব্যাপক কদর করত প্রার্থীরা। দ্বারে দ্বারে গিয়ে ভোট ভিক্ষা করত। এখন প্রার্থীরা ভাবতে শুরু করেছে দ্বারে দ্বারে গিয়ে ভোট ভিক্ষার দরকার নেই। ‘১০ হোন্ডা, ২০ গুন্ডা পাড়ার অখ্যাত মাস্তানদের হাতে দেশী-বিদেশী কিছু অস্ত্র দিয়ে কেন্দ্র দখল করলেই ভোটের বাক্স পূর্ণ হয়ে যায়। সুতরাং বাড়ি বাড়ি যাওয়ার দরকার কি? এ ক্ষেত্রে দলীয় প্রতীক আর দলীয় শীর্ষ নেতাদের নেক নজরেই প্রার্থীদের বড় আশীর্বাদ। এক সময় পাড়ার মা-বোনদের কাছ থেকে শুনতাম, শুধু তাবিছ-কবজে সন্তান প্রসব হয় না, ভাতের মাড় দিয়ে দধি হয় না। জোর করে পিটিয়ে কাঁঠাল পাকানো যায়, কিন্তু খাওয়া যায় না। ছোট বেলায় ইউপি নির্বাচন দেখেছি, এখনও দেখছি, আগামীতেও দেখব। এক সময়ের লৌহ মানব আইয়ুবের মৌলিক গণতন্ত্রের কথা শুনেছি, কলেজ পর্যায়ে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে মৌলিক গণতন্ত্রের কথা পড়েছি, সে সময় জনগণের ভোটে ৯ জন মেম্বার নির্বাচিত হত, তাদের মধ্যে থেকে মেম্বারদের ভোটে একজন চেয়ারম্যান নির্বাচিত হত। সে সময়ের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি ও আজকের জনপ্রতিনিধির মধ্যে পার্থক্য খুঁজতে গিয়ে শুধু অবাক বনে যাই। গণতন্ত্রের সুফল-কুফল রয়েছে। বর্তমান নির্বাচনের প্রেক্ষাপটে বেশিরভাগ প্রার্থীর মানসিকতা জোর করে ভোট কেন্দ্র দখল করে প্রকাশ্যে ভোট ডাকাতি করে হলেও নির্বাচিত হবে। জোর করে ক্ষমতায় গেলে তৃপ্তি নেই। এরশাদ জামানার এক জনপ্রতিনিধি গর্ব করে সেইদিন বাজারে কিছু লোককে উদ্দেশ্য করে বলছিল, ‘আমিও চেয়ারম্যান ছিলাম, পাশে বসা এক ব্যক্তি ওই চেয়ারম্যানকে জিজ্ঞাসা করছিলেন, ‘আপনাকে ভোট দিয়েছিল কে?’ কেন্দ্র দখল করে পাড়ার মাস্তানদের দিয়ে ভোট নিয়ে চেয়ারম্যান হওয়ার পর আজ পর্যন্ত কোন নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার সাহস কি আপনার আছে? এসব কথা শুনে ওই কথিত চেয়ারম্যান হতাশ হয়ে স্থান ত্যাগ করতে দেখেছি। অনেকে বলতে শোনা গেছে, হাতের তালুতে লোম গজাতে পারে, পূর্বের সূর্য পশ্চিমে উদিত হতে পারে, কিন্তু বর্তমান নির্বাচন কমিশনের কাছে সুষ্ঠু নির্বাচন আশা করা বাতুলতা ছাড়া আর কিছুই নয়। কথা প্রসঙ্গে না বললে হয় না, সেদিন কক্সবাজার জেলা আওয়ামীলীগের নব-নির্বাচিত সভাপতি/সম্পাদককে চকরিয়ার উপকূলের ঐতিহ্যবাহী ইলিশিয়া জমিলা বেগম উচ্চ বিদ্যালয়ের মাঠে সংবর্ধনা দিতে গিয়ে বদরখালী ইউনিয়ন থেকে নৌকার মাঝি হওয়ার ইচ্ছা পোষণ করে এক হবু প্রার্থী সোনার নৌকা উপহার দিয়েছেন সভাপতিকে। ভাগ্য চক্রে তিনি যদি নির্বাচিত হন, তাহলে ইউনিয়ন বাসীর জন্য কিছু করার আগে সোনার নৌকার পুঁজিটাই আগে হাতিয়ে নিতে তৎপর হবেন কিনা? সব কথার শেষ কথা, যে দলেরই হোক দলের জন্য ত্যাগী, এলাকাবাসীর জন্য বিনয়ী, কর্মীদের মূল্যায়ন না হলে যোগ্য ও ভাল লোকজন রাজনীতি ছাড়বে। তখন রাজনীতি চলে যাবে এলাকার মাস্তান, অস্ত্রধারী তস্করদের হাতে। তাতে কোন দলেরই ভাবমূর্তি বাড়বে না। কথায় আছে, ‘আমরা জোয়ার দেখতে অভ্যস্থ, ভাটির টান দেখতে অভ্যস্থ নয়।’ জোয়ারের সময় উপকূলের খাল-বিল ভরে গেলেও ভাটির সময় মাঠই দেখা যায়।

পাঠকের মতামত: