ঢাকা,শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪

সৌন্দর্য হারাচ্ছে সমুদ্রসৈকত, ঝুঁকিতে প্রকৃতি

ডেস্ক নিউজ :   বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্রসৈকত কক্সবাজার। সুউচ্চ পাহাড় আর বিশাল সমুদ্রের মিলনমেলার অপরূপ সৌন্দর্যের লীলানিকেতন কক্সবাজার স্বাস্থ্য শহর হিসেবে পরিচিত। দেশের প্রধান পর্যটন শহর হিসেবে বিশ্বজুড়ে কক্সবাজারের পরিচিতি রয়েছে। তবে সাগরপাড়ের ভূপ্রকৃতি, জীববৈচিত্র্য ও পরিবেশের বিষয়টি বিবেচনায় না নিয়েই অপরিকল্পিতভাবে গড়ে উঠেছে কক্সবাজার শহর। অপরিকল্পিত নগরায়ণের কারণে এখানকার পরিবেশ ও প্রকৃতি ঝুঁকিতে রয়েছে।

অপরিকল্পিতভাবে বহুতল ভবন, সড়ক, নালা নির্মাণ, পয়ঃনিষ্কাশনব্যবস্থা, যত্রতত্র পাহাড় কাটা, উপকূল রক্ষা ও সৌন্দর্যবর্ধনকারী ঝাউবন নিধনসহ নানা অব্যবস্থাপনায় গড়ে উঠছে এ শহর। ফলে দিন দিন সৌন্দর্যহানি হচ্ছে সমুদ্রসৈকতসহ পর্যটন শহরের। বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্রসৈকত ও অপরূপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের কারণে প্রতি বছর লাখ লাখ পর্যটক কক্সবাজারে বেড়াতে আসেন। এ লক্ষ্যে শহরের কলাতলীতে গড়ে উঠেছে ৫ শতাধিক হোটেল-মোটেল-গেস্টহাউস। তবে এখানে ড্রেনেজ ও পয়ঃনিষ্কাশনব্যবস্থা অপরিকল্পিত। সড়ক নির্মাণেও রয়েছে অব্যবস্থাপনা। ফলে যানজট লেগেই থাকে।

এ ছাড়া কক্সবাজার ঘিঞ্জি শহরে পরিণত হয়েছে। ড্রেন ও রাস্তা দখল করে ঘর ও দোকান নির্মাণের কারণে গাড়ি চলাচলে যেমন যানজট থাকে তেমনি পানি চলাচলেও ব্যাঘাত ঘটছে। কক্সবাজার পৌর শহরে ৩০ শতাংশ পাহাড়ি এলাকা রয়েছে। সমতলে ভূমির পরিমাণ কমতে থাকায় মানুষের নজর পড়েছে পাহাড়ে। ইতিমধ্যে বন নিধনের পাশাপাশি অর্ধশতাধিক পাহাড় কেটে তৈরি হয়েছে ২০ হাজারের বেশি ঘরবাড়ি। এর বেশির ভাগ অতিঝুঁকিপূর্ণ। এতে প্রতি বছরই পাহাড়ধসের ঘটনায় হতাহত হচ্ছে মানুষ।

পরিবেশ অধিদফতর কক্সবাজার কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক সাইফুল আশ্রাব জানান, সমুদ্রসৈকত লাগোয়া কলাতলী এলাকায় ৯০ শতাংশ হোটেল-মোটেল ও গেস্টহাউস নির্মাণে পরিবেশের ছাড়পত্র নেই। অপরিকল্পিতভাবে করা হয়েছে বহুতল ভবন। ড্রেনেজ ও পয়ঃনিষ্কাশনব্যবস্থাও অপরিকল্পিত। এ ছাড়া পৌর শহরে পাহাড় কেটে সমতল ভূমিতে পরিণত করে পরিবেশের ব্যাপক ক্ষতি করা হচ্ছে। পাহাড় নিধন, পাহাড়ের জলাধার নষ্ট করা ও গাছপালা উজাড়ের কারণে শহরে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে যাচ্ছে। পরিবেশ অধিদফতরের পক্ষ থেকে নিয়মিত অভিযান চালিয়ে জেল-জরিমানা করা হলেও এসব নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না।

কক্সবাজার বন ও পরিবেশ সংরক্ষণ পরিষদের সভাপতি দীপক শর্মা দীপু জানান, অন্তত দুই যুগ ধরে অপরিকল্পিতভাবে কক্সবাজারে বহুতল ভবন নির্মাণের প্রতিযোগিতা চলছে। সৈকতের পাশে সারি সারি বহুতল ভবন গড়ে তোলা হলেও পর্যটকদের জন্য সাগর দর্শন ছাড়া বিনোদনের কোনো ব্যবস্থা নেই। উপকূল রক্ষা ও সৌন্দর্যবর্ধনকারী ঝাউবন নিধনের পাশাপাশি অবৈধ দখলের কারণে সমুদ্রসৈকত ভাঙনসহ সৌন্দর্যহানি ঘটছে দিন দিন। সর্বোপরি পর্যটন শহর গড়ে তোলার জন্য ভূমির যৌক্তিক ব্যবহারের বিষয়টি কখনো কারও মাথায় ছিল না। এসব অব্যবস্থাপনার মধ্যেই দুই বছর ধরে কাজ করছে কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (কউক)।

কউক চেয়ারম্যান লে. কর্নেল ফোরকান আহমদ (অব.) জানান, ‘আগে যা ঘটেছে তা অপরিকল্পিত। এখন পরিকল্পিত, আধুনিক ও আকর্ষণীয় পর্যটন শহর হিসেবে কক্সবাজারকে গড়ে তোলার চেষ্টা হচ্ছে। কক্সবাজারকে আধুনিক ও আকর্ষণীয় পর্যটননগর হিসেবে গড়ে তোলার জন্য একটি কার্যকর মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়নের কাজ শুরু হচ্ছে। পর্যটকদের আকর্ষণ বৃদ্ধির লক্ষ্যে শহরের চারটি গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে ভাস্কর্য নির্মাণ করা হয়েছে।’
সুত্র: বাংলাদেশ প্রতিদিন

পাঠকের মতামত: