ঢাকা,বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪

ঈদে পর্যটন শহর কক্সবাজারে চার’শ কোটি টাকার ব্যবসার সম্ভাবনা

বিশেষ প্রতিবেদক, কক্সবাজার ::
বর্ষার শেষ সময়ে উত্তাল থাকে সাগর। বহুদূর থেকে কানে আসে বিশাল সমুদ্রের গর্জন। এখন কেউ কক্সবাজার প্রবেশের সাথে সাথে শুনতে পাবে সাগরের গগণ বিদারী আওয়াজ। এরপর উত্তাল ঢেউয়ের মোহনীয় রুপে জুড়াবে প্রান। একের পর এক বালিতটে আছড়ে পড়া ঢেউ যেন ডাকছে পর্যটকদের। সাগরের এমনি মোহনীয় রুপে দিওয়ানা হতে ঈদের টানা ৫ দিনের ছুটিতে লাখো পর্যটকের পদচারণে সরগরম হয়ে ওঠার অপেক্ষায় সমুদ্র নগরী কক্সবাজার। আগতদের স্বাগত জানাতে কক্সবাজার পৌরসভা কর্তৃপক্ষ “ ঈদ মোবারক, কক্সবাজারে স্বাগতম ” লেখা তোরণে সাজিয়েছে কক্সবাজারের প্রধান প্রধান সড়কগুলো।  পর্যটকদের নিরাপদ ভ্রমন আর  আনন্দকে নির্বিঘœ পালন করার সুযোগ করে দিতে জেলা প্রশাসন ও পুলিশ নিয়েছে নিশ্চিদ্র নিরাপত্তার ব্যবস্থা।
হোটেল মোটেল, গেষ্ট হাউস মালিক সমিতি সূত্র জানায়, পর্যটক বরণে সব ধরণের প্রস্তুতি গ্রহন করা হয়েছে। পর্যটকদের আশানুরুপ সাড়া মিলেছে।
এবিষয়ে হোটেল মোটেল মালিক সমিতির মুখপাত্র কলিমউল্লাহ বলেন, ঈদুল আযহার দ্বিতীয় দিন থেকে পর্যটকের সমাগম ঘটবে কক্সবাজারে। ইতিমধ্যে ২৩ আগষ্ট ২৬ আগষ্ট পর্যন্ত কক্সবাজার থ্রিস্টার ও টু স্টার মানের হোটেল ৮০ শতাংশ বুকিং হয়েছে। এছাড়া ৩০ আগষ্ট পর্যন্ত ৫০ শতাংশের উর্ধ্বে বুুকিং রয়েছে।
কক্সব্জার হোটেল ওনার্স এসোসিয়েশনের সাধারন সম্পাদক শেখ ইমরুল ইসলাম সিদ্দিকী রুমি বলেন, তারকামানের হোটেলগুলোতে কুরবান উপলক্ষে প্রায়ই অগ্রিম বুকিং হয়ে গেছে।
ঈদের দিন থেকে পরের এক সপ্তাহে কক্সবাজারে প্রায় ৪০০ কোটি টাকার ব্যবসা হবে বলে হোটেল-রেস্তোরাঁসহ পর্যটন সংশ্লিষ্ঠ কর্মকর্তা ও ব্যবসায়ীরা আশা করছেন।
কক্সবাজার হোটেল মোটেল মালিক সমিতির সভাপতি ওমর সুলতান কোম্পানি নাগু বলেন, ২৩ আগষ্ট থেকে ৩০ আগষ্ট পর্যন্ত প্রতিদিন কক্সবাজারে কমপক্ষে ২ থেকে আড়াই লাখ পর্যটক। আশা করছি পর্যটন সেক্টরে ঈদের পরের এক সপ্তাহে কমপক্ষে ৪০০ কোটি  টাকার ব্যবসা হবে। এদিকে পর্যটক আগমনকে কেন্দ্র করে সমুদ্র সৈকেতর ব্যবসায়ীরা দোকানে ঝিনুক ও শামুকের নতুন নতুন পন্য তুলেছেন। কীটকট ব্যবসায়ী চেয়ারে রং করেছেন। নতুন নতুন ছাতা দিয়েছেন। পর্যটকদের খাওয়াদাওয়ার জন্য শহরে প্রায় ২০০ রেস্তোরাঁ ধুয়ে-মুছে পরিষ্কার করার কাজ চলছে। শুঁটকিসহ রকমারি পণ্যের দোকানিরা পর্যটক আকর্ষণে নতুন করে দোকান সাজাচ্ছেন। যানজট এড়াতে শহরের ঢোকার সড়কগুলোতে বেড়েছে ট্রাফিক পুলিশের তৎপরতা।মোদ্দাকথা সব জায়গায় নতুনত্বের ছাপ।
শুধু সমুদ্র সৈকত নয় পর্যটক আগমনকে কেন্দ্র করে নবরুপে সাজানো হয়েছে কক্সবাজাল জেলার সকল পর্যটনকেন্দ্রগুলো। দরিয়ানগর , হিমছড়ি, ইনানী, শহরের বৌদ্ধমন্দিরের পাশপাশি রামুর রংকোট, ১০০ ফুট শয্যা বৌদ্ধমূর্তি, ডুলহাজারার বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্ক, মহেশখালির আদিনাথ মন্দির ও সোনাদিয়া সকল পর্যটনকেন্দ্রগুলো অতিথিদের আগমনের প্রতীক্ষায় রয়েছে।
এবিষয়ে দরিয়ানগর পার্কের উদ্দ্যোক্তা আবু সায়েম ডালিম বলেন, পর্যটক সহ স্থানীয় অতিথিদের বরণে আমরা নানা উদ্দ্যোগ গ্রহন করেছি। বিশেষ করে শিশু বিনোদনের ব্যবস্থা নিয়েছি।
এদিকে আগত পর্যটকদের নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করেছে  পুলিশ ও জেলা প্রশাসন।
এ বিষয়ে কক্সবাজারের অতিরিক্ত ট্যুরিষ্ট পুলিশ সুপার ফজলে রাব্বি বলেন, পর্যটকদের নিরাপত্তা বিধানে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত, হিমছড়ি, ইনানী ও বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কে ৬ জন ইনস্পেক্টরের নেতৃত্বে ১২০ জন টুরি‌্যষ্ট পুলিশ ২৪ ঘন্টা কাজ করবে।  এছাড়া ছিনতাই সহ পর্যটক হয়রানি রোধে টহল টিম, সাদা পোষাকেও পুলিশ কাজ করবে।
তিনি আরো বলেন, বর্ষা মৌসুমের শেষ মুহুর্তে এই উৎসবে সমুদ্রে যাতে কোন দূর্ঘটনা না ঘটে সেদিকেও খেয়াল রাখবে পুলিশ। ভাটার সময় পর্যটকদের সর্তক করতে মাইকিং সহ মনিটরিং করা হবে। এছাড়া সন্ধ্যার পরে গোসল করার জন্য একটি নিদ্দির্ষ্ট পয়েন্টে ঠিক করা হবে।
কক্সবাজার জেলা পুলিশ সুপার ড. একে. এম ইকবাল হোসেন বলেন, ঈদুল আযহা উপলক্ষে জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে তিনস্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহন করা হয়েছে। বাড়ানো হবে মোবাইল টিম, তল্লাশী চৌকিসহ ও সাদা পোষাকের নজরদারী। এছাড়া যেসব হোটেলে বিদেশী মেহমান অবস্থান করছে কিংবা করবে সেখানে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন থাকবে।
কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মো. কামাল হোসেন বলেন, পর্যটক হয়রানি রোধে বীচ কর্মীদের পাশাপাশি সমুদ্র সৈকতে ভ্রাম্যমান আদালতের দুটি মোবাইল টিম কাজ করবে। এছাড়া আবাসিক হোটেল ও রেস্তোরাঁয় অতিরিক্ত টাকা ও ভেজাল খাবার পরিবেশন করলে ব্যবস্থা নেবেন এ আদালত।

পাঠকের মতামত: